বৃহস্পতিবার, ৩ মে, ২০১৮ ০০:০০ টা
আন্তমন্ত্রণালয় প্রতিবেদন

এসএসসিতে ১৭ বিষয়ের ১২টিতে ফাঁস এমসিকিউ

আকতারুজ্জামান

চলতি বছরের এসএসসি পরীক্ষার ১৭টি বিষয়ের মধ্যে ১২টি বিষয়ের এমসিকিউ পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে। চারটি সেট থাকলেও এ ক্ষেত্রে শুধু ‘খ’ সেটের এমসিকিউ ৩০টি প্রশ্ন ক্লোজড গ্রুপের মধ্যে ফাঁস হয়েছে। কোনো লিখিত সৃজনশীল প্রশ্ন ফাঁস হয়নি। এসএসসি ও সমমানের প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগের পর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের গঠিত তদন্ত কমিটি এসব প্রতিবেদন দিয়েছে। আন্তমন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে এ তথ্য দেওয়া হয়েছে।

উল্লেখ্য, আজ সচিবালয়ে প্রশ্ন ফাঁস সংক্রান্ত আন্তমন্ত্রণালয় কমিটির এ প্রতিবেদন নিয়ে জাতীয় আইনশৃঙ্খলা ও মনিটরিং কমিটির সভায় কথা বলবেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এসএসসির প্রায় ২০ লাখ পরীক্ষার্থীর মধ্যে মাত্র শূন্য দশমিক ২৫ শতাংশ ছাত্র-ছাত্রী ফাঁস হওয়া প্রশ্নের এ সুবিধা পেয়েছে। এরাও মাত্র ১০ থেকে ২০ মিনিট ফাঁস হওয়া প্রশ্ন দেখতে পেরেছে। মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে এসএসসির কোনো প্রশ্ন ফাঁস হয়নি। তাই প্রশ্ন ফাঁসের সুবিধা নেওয়া অল্প শিক্ষার্থীর জন্য পরীক্ষা বাতিল না করার পক্ষে মত দিয়েছে তদন্ত কমিটি। একই সঙ্গে প্রশ্ন ফাঁস ঠেকাতে পাবলিক পরীক্ষা থেকে নৈর্ব্যক্তিক অংশ ধীরে ধীরে বাতিল; পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল ও বুয়েটের পরীক্ষা পদ্ধতি সংস্কারসহ আট দফা সুপারিশ করেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত ফেব্রুয়ায়িতে অনুষ্ঠেয় এসএসসি পরীক্ষায় প্রতিটি পরীক্ষার আগে প্রশ্ন ফাঁসের ব্যাপক অভিযোগ ওঠে। পরীক্ষার পর ফাঁস হওয়া প্রশ্ন হুবহু মিলে যায়। এমন পরিপ্রেক্ষিতে গত ৬ ফেব্রুয়ারি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা বিভাগের সচিব মো. আলমগীরকে আহ্বায়ক করে আন্তঃমন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি করা হয়। কমিটি তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে একাধিক বৈঠক করে গত ১১ মার্চ তা মন্ত্রণালয়ে জমা দেন। প্রশ্ন ফাঁস রোধে বেশ কিছু সুপারিশ করেছে কমিটি। এমসিকিউ ধীরে ধীরে বাতিল করা, ব্যবহারিক পরীক্ষায় বেশি নম্বর পাওয়ার আশায় অনৈতিক কাজে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা জড়িয়ে পড়েছেন, এটা বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা, সৃজনশীল প্রশ্ন প্রণয়নে অধিক শিক্ষককে আরও প্রশিক্ষণ, শিক্ষানীতির বাস্তবায়ন, পাবলিক পরীক্ষা (অপরাধসমূহ) আইন ১৯৮০ যুগোপযোগী করা এবং পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল ও ইঞ্জিনিয়ারিং প্রতিষ্ঠানের ভর্তি পদ্ধতি সংস্কারের সুপারিশ করা হয়েছে। প্রশ্ন ফাঁস নিয়ে প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, গেল এসএসসি পরীক্ষার প্রশ্ন উন্মুক্তভাবে ফাঁস হয়নি। শুধু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কিছু ক্লোজড গ্রুপে প্রশ্ন শেয়ারের ঘটনা ঘটেছে। যদিও হাতে গোনা কয়েকটি গ্রুপের ফাঁস হওয়া প্রশ্ন মূল প্রশ্নের সঙ্গে মিলেছে, তবে বেশিরভাগ গ্রুপের প্রশ্ন সঠিক ছিল না। অনলাইন বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করা বেশিরভাগ প্রশ্ন ছিল ভুয়া বা সময় টেম্পারিং করে আপলোড করা। আর রচনামূলক বা সৃজনশীল কোনো প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার কোনো কারণ নেই। অবশিষ্ট প্রায় ৯৯ দশমিক ৭৫ ভাগ পরীক্ষার্থীরা আগে কোনো প্রশ্ন না পাওয়ায় তাদের ফলাফলে প্রশ্ন ফাঁসের কোনো প্রভাব পড়বে না। ফলে সুবিধাভোগী ৪ থেকে ৫ হাজার পরীক্ষার্থীর জন্য ২০ লাখ পরীক্ষার্থীর পরীক্ষা পুনরায় নিয়ে তাদের ভোগান্তিতে ফেলা সমীচীন হবে না।

তবে পরবর্তীতে তদন্তে প্রমাণ মিললে প্রশ্ন ফাঁসের ফলে সুবিধাভোগী পরীক্ষার্থীদের চিহ্নিত করে তাদের ফলাফল বাতিলসহ কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেছে তদন্ত কমিটি।

সর্বশেষ খবর