শনিবার, ৫ মে, ২০১৮ ০০:০০ টা

সড়কে কিছুতেই পানি জমতে দেওয়া যাবে না

জিন্নাতুন নূর

সড়কে কিছুতেই পানি জমতে দেওয়া যাবে না

অধ্যাপক ড. সামছুল হক

‘বর্ষাকালে বাংলাদেশের সড়ক-মহাসড়কগুলোর যে ক্ষতি হয়, তা বছরের অন্য যে কোনো সময়ের তুলনায় বেশি। এ জন্য বর্ষায় সংশ্লিষ্টদের প্রিভেনটিভ মেইনটেন্যান্সের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। আর এমনটি করা সম্ভব হলে ক্ষতিগ্রস্ত সড়কটির আর পুনঃনির্মাণের প্রয়োজন হবে না। বৃষ্টির ফলে ঢাকার প্রধান সড়কগুলোর যে অংশে পানি জমে জলাবদ্ধতা তৈরি হয় সেখানে পাম্প দিয়ে পানি সরিয়ে ফেলার ব্যবস্থা করতে হবে। কিছুতেই সড়কে পানি জমতে দেওয়া যাবে না। প্রয়োজনে পানি নিষ্কাশনে পোর্টেবল পাম্প ব্যবহার করতে হবে। এটা করা না হলে রাস্তাটি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. সামছুল হক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেছেন। তিনি আরও বলেন, ‘এটি বুঝতে হবে যে, পানি সরানো না গেলে সড়কের যে ক্ষতি হবে, তাতে বড় ধরনের মেরামতের প্রয়োজন হবে। আর এটি যেন করতে না হয় সেদিকেও সংশ্লিষ্টদের লক্ষ্য রাখতে হবে।’ সামছুল হক বলেন, ‘রাজধানীর যে সব সড়কে সংস্কার ও উন্নয়ন অবকাঠামোগত নির্মাণ কাজ চলবে, সেখানে বাধ্যতামূলকভাবে ট্রাফিক ডাইভারশন দিতে হবে। একটি সড়ক সংস্কারের ফলে এটি সংকুচিত হয়ে পড়ে। সড়কের যে অংশে সংস্কার কাজ হচ্ছে না কিন্তু বৃষ্টির পানি জমে আছে, সেখানে প্রয়োজনে পাম্প বসিয়ে জমে থাকা পানি নিষ্কাশন করতে হবে। তা না হলে সড়কটি আরও সংকুচিত হয়ে পড়বে এবং এর স্থায়িত্বও কমে আসবে। এমনকি জলাবদ্ধতার কারণে সংস্কারের আওতামুক্ত হওয়ার পরেও সড়কের এই অংশটি পথিকরা তখন ব্যবহার করতে চাইবেন না। ফলে মানুষের ভোগান্তি বাড়বে।’ নগরীর ড্রেনেজ ব্যবস্থাপনা নিয়ে এই বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘ঢাকা ওয়াসা, সিটি করপোরেশন এবং রাজউকসহ বেশ কয়েকটি সংস্থা সমন্বিতভাবে নগরের ড্রেনেজ ব্যবস্থা নিয়ে কাজ করছে। এ জন্য এর কোনো সুষ্ঠু সমাধান পাওয়া যাচ্ছে না। সমন্বিতভাবে কয়েকটি সংস্থা কাজ করায় এ ব্যাপারে কোনো একটি কার্যকর সমাধানে পৌঁছানো যাচ্ছে না। আর স্বল্প সময়ের মধ্যে শহরের ড্রেনেজ অব্যবস্থাপনায় নিয়ে কোনো পরিবর্তন বা সমাধান আশা করাও সম্ভব না। এ জন্য দীর্ঘমেয়াদে কাজ করতে হবে। এতগুলো সংস্থার পরিবর্তে একটি সংস্থাকেই সুষ্ঠু ড্রেনেজ ব্যবস্থাপনা নিয়ে কাজ করতে হবে। এতে খরচও কমে আসবে।’ তিনি বলেন, ‘সাধারণত মাটির নিচে পাইপের যে স্লোপ তা দিয়ে পানি প্রবাহ ঠিকভাবে হচ্ছে কিনা- তা ওপর থেকে বোঝা কঠিন। অনেক সময় দেখা যায় যে, মাটির নিচে ড্রেনে পানির প্রবাহ ঠিকভাবে হচ্ছে না। কয়েকটি সংস্থা কাজ করায় একেকটি সংস্থার স্লোপের দিকনির্দেশনা একেক রকম হয়। এ জন্য একসঙ্গে বিভিন্ন সংস্থার পরিবর্তে যদি শুধু সিটি করপোরেশন বিষয়টি তদারকি করে- তবে এর সুষ্ঠু সমাধান মিলতে পারে।’  এই গণপরিবহন বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘নগরায়ণের দায়িত্ব একটি বড় ধরনের কাজ। আর এ জন্য পর্যাপ্ত লোকবলের প্রয়োজন। যেহেতু ঢাকার বাসিন্দা ও শহরের আয়তন কয়েকগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে, এ জন্য নগরের উন্নয়ন কাজের জন্য সিটি করপোরেশনসহ সংশ্লিষ্ট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর লোকবলও সে অনুপাতে বৃদ্ধি করতে হবে। আর তা না হলে শহরে যে অবকাঠামোগত উন্নয়ন হচ্ছে, সে উন্নয়নের গুণগত মান বজায় থাকবে না। সেবা প্রদানকারী সংস্থাগুলোর প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সেসব প্রতিষ্ঠানে ভালো ও দক্ষ লোকবল নিয়োগ দিতে হবে।

 আর সড়ক বা ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়নে একাধিক সংস্থাকে দায়িত্ব না দিয়ে শুধু একটি সংস্থাকে দায়িত্ব দিতে হবে। সরকারকে পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ ও লোকবল নিয়োগের মাধ্যমেই সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে এই দায়িত্ব পালনের ক্ষমতা দিতে হবে। তা না হলে উন্নয়ন টেকসই হবে না। আবার প্রতি বর্ষায় ঢাকার দুই সিটির মেয়র জলাবদ্ধতা দূর করার জন্য হঠাৎ করে কিছু বুলি আওড়ালেও এতে উল্টো সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হবে। জলাবদ্ধতা দূর করতে সিটি করপোরেশনের দায়িত্বপ্রাপ্তদের অতীতে ও বর্তমানে গৃহীত পদক্ষেপগুলো ঠিকভাবে পালন করতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘বাসযোগ্য নগরী পেতে হলে নাগরিকদেরও দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে। যেখানে সেখানে ময়লা-আবর্জনা ফেললে জলাবদ্ধতা তৈরি হয় এবং ড্রেনের পানি প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়। এ ব্যাপারে নাগরিকদের সচেতন হতে হবে। একজন সুনাগরিক হিসেবে উন্নত বিশ্বের দেশগুলোর মতো ঢাকার নাগরিকদের আচরণও দায়িত্বশীল হতে হবে।’

এবার ঈদে বাড়ি ফেরত যাত্রীদের দুর্ভোগ কমাতে বুয়েটের এই অধ্যাপক কিছু পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘মূলত মহাসড়কে যানজটের উৎসস্থল হচ্ছে সড়কের বিভিন্ন মোড়। ঈদে বাড়ি ফেরত যাত্রীদের যাতে ভোগান্তি না হয় এ জন্য মহাসড়কের বিভিন্ন মোড়ে সার্বক্ষণিক নজরদারি করতে হবে। কোনোভাবেই এসব মোড়ে যেন যানজট তৈরি না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। মহাসড়কগুলোতে দায়িত্বপালনকারী কমিউনিটি পুলিশের সদস্যরা নজরদারি করবেন- সড়কে চলাচলকারী যানবাহনগুলো যাতে শৃঙ্খলা মেনে চলে। যানগুলো যেন অহেতুক ওভারটেকিং না করে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। চৌকস ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে মহাসড়কের যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা গেলে ঈদে বাড়ি ফেরত যানগুলো ধীরগতিতে চলবে ঠিকই, কিন্তু ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থাকবে না।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর