রবিবার, ৬ মে, ২০১৮ ০০:০০ টা

পাহাড় এখনো থমথমে

খুনিদের ধরতে যৌথবাহিনীর অভিযান তিন পার্বত্য জেলায় হরতাল

ফাতেমা জান্নাত মুমু, রাঙামাটি

পাহাড় এখনো থমথমে

পাহাড়ে এখনো থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। রাঙামাটি জেলার নানিয়ারচর উপজেলায় ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে ৬ খুনের ঘটনায় উত্তাপ ছড়িয়ে পড়েছে। আতঙ্ক, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় স্থানীয়রা। রাঙামাটির নানিয়ারচর উপজেলার চেয়ারম্যান ও জনসংহতি সমিতির (এম এন লারমা) কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি শক্তিমান চাকমা ও ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের (গণতান্ত্রিক) আহ্বায়ক তপন জ্যোতি চাকমা ওরফে বর্মাসহ সংগঠনটির ৪ নেতা-কর্মী খুনের ঘটনাকে কেন্দ্র করে আবারও বড় ধরনের সহিংসতার আশঙ্কাও করছে পাহাড়ের মানুষ। তবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে কঠোর অবস্থানে রয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের ধরতে অভিযানে নেমেছে যৌথ বাহিনীও। এদিকে মাইক্রোবাস চালক সজীব হাওলাদারের খুনিদের গ্রেফতার এবং পাহাড়ের সশস্ত্র সংগঠনগুলোর রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবিতে সোম ও মঙ্গলবার তিন পার্বত্য জেলায় ৪৮ ঘণ্টার হরতালের ডাক দিয়েছে পার্বত্য বাঙালি ছাত্র পরিষদ ও পার্বত্য নাগরিক পরিষদ। গতকাল সকাল থেকে রাঙামাটির নানিয়ারচর উপজেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করেছে যৌথ বাহিনী। নানিয়ারচর উপজেলার পাহাড়ি এলাকার বিভিন্ন সড়কে যৌথ বাহিনীর টহল জোরদার করা হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে অতিরিক্ত পুলিশও মোতায়েন রয়েছে। একের পর এক হত্যাকাণ্ডের পর নানিয়ারচর এলাকাবাসীর মধ্যে নিরাপত্তাহীনতার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। হত্যাকাণ্ডের পর কুতুকছড়ি, ঘিরাছড়ি ইউনিয়ন ও নানিয়ারচরের হাট-বাজারে আসেননি পাহাড়ি-বাঙালির কোনো ব্যবসায়ী। তাই বসেনি সাপ্তাহিক হাট-বাজার। গতকাল রাঙামাটি-নানিয়ারচর-খাগড়াছড়ি সড়কে কোনো যানবাহনও চলাচল করেনি। উপজেলার কিছু কিছু দোকানপাট খোলা থাকলেও মানুষের উপস্থিতি ছিল কম। অন্যদিকে হত্যাকাণ্ডের ঘটনার পর রাঙামাটি জেলার নানিয়ারচর উপজেলার বেতছড়ির ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন চট্টগ্রাম রেঞ্জের পুলিশের ডিআইজি ড. এস এম মনিরুজ্জামান। এ সময় তিনি বলেন, পাহাড় থেকে সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা নির্মূল না হওয়া পর্যন্ত যৌথ বাহিনীর অভিযান অব্যাহত থাকবে। তাই আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। এ সময় তার সফরসঙ্গী হিসেবে ছিলেন চট্টগ্রাম রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি (অপারেশন্স অ্যান্ড ক্রাইম) এস এম রোকন উদ্দিন, অতিরিক্ত ডিআইজি মোহাম্মদ আবুল ফয়েজ, রাঙামাটি জেলা পুলিশ সুপার মো. আলমগীর কবির ও খাগড়াছড়ি জেলা পুলিশ সুপার মো. আলী আহমেদ খান। অন্যদিকে উপজেলা চেয়ারম্যান শক্তিমান চাকমা হত্যার দুই দিন হলেও থানায় কোনো মামলা করেনি তার পরিবার। এ ছাড়া এখনো তপন জ্যোতি চাকমা ওরফে বর্মাসহ সংগঠনটির ৪ নেতা-কর্মী খুনেরও কোনো মামলা হয়নি বলে জানিয়েছেন নানিয়ারচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আবদুল লতিফ। তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমরা নিহতদের পরিবারের সঙ্গে কথা বলেছি। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা করা না হলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করবে। এলাকার নিরাপত্তায় পুলিশ, সেনাবাহিনী ও বিজিবির টহল জোরদার করা হয়েছে। অন্যদিকে রাঙামাটির নানিয়ারচরে সন্ত্রাসী হামলায় নিহত ইউপিডিএফের (গণতান্ত্রিক) আহ্বায়ক তপন জ্যোতি চাকমাসহ পাঁচজনের লাশ ময়নাতদন্ত শেষে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করেছে পুলিশ।

তিন পার্বত্য জেলায় ৪৮ ঘণ্টার হরতাল : রাঙামাটিতে সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত মাইক্রোবাস চালক সজীব হাওলাদারের খুনিদের গ্রেফতার এবং জনসংহতি সমিতি, ইউপিডিএফসহ পাহাড়ের সশস্ত্র সংগঠনগুলোর রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবিতে সোম ও মঙ্গলবার তিন পার্বত্য জেলায় ৪৮ ঘণ্টার হরতালের ডাক দিয়েছে পার্বত্য বাঙালি ছাত্র পরিষদ ও পার্বত্য নাগরিক পরিষদ। এ কর্মসূচির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পার্বত্য বাঙালি ছাত্র পরিষদের রাঙামাটি জেলা কমিটির সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম। পার্বত্য বাঙালি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. শাহাদাৎ ফরাজী সাকিব এক বিবৃতিতে জানান, পার্বত্য চট্টগ্রামে আঞ্চলিক দল জনসংহতি সমিতি, ইউপিডিএফসহ আঞ্চলিক দলগুলোর সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের কাছে পাহাড়ের মানুষের জীবন আজ জিম্মি। তাই এদের সন্ত্রাসী রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবিতে এই কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে। এই হরতাল পার্বত্য তিন জেলা রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানে পালিত হবে। উল্লেখ্য, সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের ব্রাশফায়ারে নিহত রাঙামাটির নানিয়ারচর উপজেলার চেয়ারম্যান ও জনসংহতি সমিতির (এম এন লারমা) কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি শক্তিমান চাকমার দাহক্রিয়ায় যাওয়ার পথে শুক্রবার দুপুরে রাঙামাটি জেলার নানিয়ারচর উপজেলার বেতছড়ি এলাকায় সন্ত্রাসীদের ব্রাশফায়ারে ইউপিডিএফের (গণতান্ত্রিক) আহ্বায়ক তপন জ্যোতি চাকমা ওরফে বর্মাসহ ৫ জন নিহত হন। নিহতদের মধ্যে মাইক্রোবাসের চালক মো. সজীবও (৩৫) ছিলেন।

বর্মাসহ ৫ জনের দাহ ও দাফন সম্পন্ন : জহুরুল আলম, খাগড়াছড়ি থেকে জানান, শুক্রবার সন্ত্রাসীদের ব্রাশফায়ারে নিহত ইউপিডিএফের আহ্বায়ক তপন জ্যোতি চাকমা বর্মা ও সদস্য কনক চাকমার দাহক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে খাগড়াছড়ির তেঁতুলতলা এলাকায়। গতকাল দুপুরে ময়নাতদন্ত শেষে লাশ গ্রহণ করে বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতায় এ দাহক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়। এ সময় তেঁতুলতলা নিহতদের স্বজনদের কান্নায় ভারী হয়ে ওঠে চারদিকের পরিবেশ। দাহক্রিয়া অনুষ্ঠানকে ঘিরে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়। জানা গেছে, নিহত অপর তিনজনের লাশ তাদের স্বজনরা নিজ নিজ এলাকায় নিয়ে দাহ ও দাফন সম্পন্ন করেন। এদিকে মাইক্রোবাস চালক সজীব হত্যাকারীদের গ্রেফতার ও অপহূত ৩ ব্যবসায়ীকে উদ্ধারের দাবিতে আজ রবিবার, সোমবার ও মঙ্গলবার হরতাল ডেকেছে পার্বত্য অধিকার ফোরাম ও বাঙালি ছাত্র পরিষদ। গতকাল দুপুরে কালো পতাকা নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল শেষে সমাবেশ থেকে এ হরতাল কর্মসূচির ঘোষণা দেন। পার্বত্য অধিকার ফোরামের আহ্বায়ক মাঈন উদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তারা ইউপিডিএফ নিষিদ্ধের দাবি জানিয়ে অচিরেই অপহূত ৩ বাঙালি ব্যবসায়ী উদ্ধার ও মাইক্রো চালক হত্যাকারীদের গ্রেফতারের দাবি জানান। সেই সঙ্গে আজকের মধ্যে জড়িতদের গ্রেফতারের দাবি জানান।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর