রবিবার, ৬ মে, ২০১৮ ০০:০০ টা
নরসিংদীতে চেয়ারম্যান হত্যা

আসামি ৩০, গ্রেফতার হয়নি একজনও

নরসিংদী প্রতিনিধি

নরসিংদীর রায়পুরার বাঁশগাড়ি ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান সিরাজুল হককে হত্যার ঘটনায় ৩০ জনকে আসামি করে মামলা হয়েছে। তবে এজাহারভুক্ত কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। নিহতের স্বজনরা আসামিদের দ্রুত গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। ঘটনার পর থেকে গোটা চরাঞ্চলে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এতে নতুন করে সংঘাতের আশঙ্কায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। রায়পুরা থানা সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার রাত ১২টার দিকে রায়পুরা থানায় নিহতের ছোট ছেলে আশরাফুল হক একই ইউনিয়নের জাকির হোসেনকে প্রধান আসামি করে ৩০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। মামলায় এলাকার আধিপত্য বিস্তার নিয়ে চেয়ারম্যান সিরাজুল হককে হত্যা করা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতারে পুলিশের বেশ কয়েকটি দল অভিযান শুরু করেছে। স্থানীয়রা জানায়, মেঘনা নদী ঘেরা নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার চরাঞ্চল বাঁশগাড়ি ইউনিয়ন। আধুনিক সভ্যতার যুগেও বাঁশগাড়িতে আধিপত্য নিয়ে চিরাচরিত বিরোধ লেগেই থাকে। সর্বশেষ অনুষ্ঠিত ইউপি নির্বাচনে দুই পক্ষের সংঘর্ষে প্রাণ হারিয়েছে অন্তত ৮ জন। এরই মধ্যে গত মার্চে  চেয়ারম্যান প্রার্থী সাহেদ সরকার হৃদরোগে মারা গেছেন। তবুও শেষ হয়নি বিরোধ। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার দুপুরে উপজেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা শেষে বাঁশগাড়ির বাড়িতে ফেরার পথে দুর্বৃত্তের গুলিতে নিহত হন চেয়ারম্যান সিরাজুল হক। ঘটনার পরই উত্তেজিত সমর্থকরা প্রতিপক্ষ সাবেক চেয়ারম্যান সাহেদ সরকার সমর্থকদের বেশ কয়েকটি বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করেছে। এখনো থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে বাঁশগাড়িতে। পুলিশের বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, সাহেদ সরকার মারা যাওয়ার পর ওই পক্ষের নেতৃত্বে আসেন মালয়েশিয়া ফেরত জাকির হোসেন। তিনি ৫ মাস আগে দেশে ফিরে সংঘাতে জড়িয়ে পড়েন। সাহেদ সরকার মারা যাওয়ার পর দলীয় নেতা হিসেবে তিনি আগামী ইউপি নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন।

এদিকে সিরাজুল হক ১৯৮৮ সাল থেকে সাতবারের নির্বাচিত চেয়ারম্যান। তিনি দীর্ঘদিন বিএনপির সঙ্গে যুক্ত থাকলেও ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে উপজেলা কমিটির কার্যকরী সদস্য হন। সর্বশেষ ইউপি নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন না পেলেও চেয়ারম্যান পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সাহেদ সরকারকে পরাজিত করে বিজয়ী হন। এলাকায় ব্যাপক জনপ্রিয়তার কারণে চেয়ারম্যান সিরাজুল হকের জীবদ্দশায় অন্য কেউ চেয়ারম্যান হতে পারেননি। আর এই জনপ্রিয়তাই তার কাল হয়েছে বলে মনে করেন রাজনৈতিক সহকর্মীরা। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) শাহারিয়ার আলম বলেন, সম্ভাব্য সব বিষয় গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করছি। এটা হতে পারে ব্যক্তিগত, দীর্ঘদিনের বিরোধ কিংবা অন্য কোনো গোষ্ঠী দুই পক্ষের সংঘাতকে কাজে লাগিয়ে সুবিধা নিতে চাচ্ছে কিনা তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আমরা প্রাথমিক তদন্তে ঘটনার সঙ্গে কারা জড়িত থাকতে পারেন তাদের সম্পর্কে ধারণা পেয়েছি। সন্দেহের তালিকায় যারা এসেছে আমরা তাদেরকে গ্রেফতারের চেষ্টা চালাচ্ছি। তাদেরকে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে প্রকৃত রহস্য উদঘাটন সম্ভব হবে। এদিকে নিহত চেয়ারম্যান সিরাজুল হকের লাশ বাড়িতে পৌঁছলে কান্নায় ভেঙে পড়ে স্বজনরা। স্বজন হারানোর আহাজারিতে ভারি হয়ে ওঠে এলাকার পরিবেশ। ওই সময় তারা ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক বিচারের দাবি জানান। নিহতের বড় ছেলে নুরুল হক বলেন, ‘আমার বাবা ভালো মানুষ ছিলেন। তাকে সরিয়ে দিলে দুষ্কৃতকারীরা রাজত্ব কায়েম করতে পারবে। এজন্য তাকে হত্যা করা হয়েছে। যারা আমার বাবাকে হত্যা করেছে আমরা তাদের দ্রুত গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।’ এদিকে শুক্রবার বাদ জুমা বাঁশগাড়ি পুরান বাজার বালু মাঠে সিরাজুল হকের প্রথম জানাজা এবং গতকাল সকালে বাঁশগাড়ি নিউ মডেল উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। পরে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়েছে। জানাজায় স্থানীয় সংসদ সদস্য রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজু বলেন, সিরাজুল হকের খুনিদের শিগগিরই গ্রেফতার করে বিচারের মুখোমুখি করতে মামলাটি দ্রুত বিচার আইনের আওতায় আনার উদ্যোগ নেওয়া হবে।

সর্বশেষ খবর