রবিবার, ৬ মে, ২০১৮ ০০:০০ টা

প্রকল্পে বায়ু কতটা নির্মল হয়েছে সন্দেহ আছে

জিন্নাতুন নূর

প্রকল্পে বায়ু কতটা নির্মল হয়েছে সন্দেহ আছে

অধ্যাপক আইনুন নিশাত

ঢাকার বায়ুদূষণের মাত্রা পর্যবেক্ষণের জন্য বিশ্বব্যাংকের ঋণের টাকায় সরকার ‘নির্মল বায়ু ও টেকসই পরিবেশ’ নামে প্রকল্প গ্রহণ করেছে। এর আওতায় ঢাকার সড়কে বাতাসে থাকা ক্ষতিকর সূক্ষ্ম কণা পরিমাপ করার যন্ত্র বসানো হয়েছে। কিন্তু এই প্রকল্পের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট সংস্থাটি ঢাকার বায়ু কতটা নির্মল করতে পেরেছে সে বিষয়ে সন্দেহ আছে। ইমেরিটাস অধ্যাপক ও জলবায়ু পরিবর্তন বিশেষজ্ঞ এবং বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) সাবেক অধ্যাপক আইনুন নিশাত বাংলাদেশ প্রতিদিনকে গতকাল এসব কথা বলেন।

আইনুন নিশাত বলেন, ‘আবহাওয়া অধিদফতরে নতুন যে বহুতল ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে তাও নির্মল বায়ু ও টেকসই পরিবেশ প্রকল্পের ঋণের টাকায় করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে আমি মনে করি, প্রকল্পটির জন্য ‘‘প্রপার পারফরম্যান্স অডিট’’ হওয়া দরকার। কারণ ঋণের টাকা যথাযথভাবে খরচ হচ্ছে কি না তা খতিয়ে দেখতে হবে এবং এ প্রকল্প-সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলতে হবে।’ এই পরিবেশ বিশেষজ্ঞ বলেন, ধূলিদূষণে দিল্লির পরই ঢাকার অবস্থান। ঢাকার আশপাশে অবস্থিত ইটভাটাগুলোতে ইট তৈরির সময় কাঠ দিয়ে কয়লা পোড়ালে ছাই তৈরি হবে। আর এ পদ্ধতিতে যে দূষণ হবে, এর পরিবর্তে জ্বালানি হিসেবে যদি গ্যাস ব্যবহার করা হয়, তবে দূষণের মাত্রা কম হবে। সে ক্ষেত্রে দূষণ কমাতে কাঠের পরিবর্তে ইটভাটায় জ্বালানি হিসেবে এলপিজি ব্যবহার করা যেতে পারে। এ ছাড়া ইট বানাতে আধুনিক জিকজাক প্রযুক্তির ইটভাটা তৈরি করতে হবে। এতে কয়লাও ভালো পুড়বে এবং পরিবেশের ক্ষতিও হবে না। এমনকি আধুনিক পদ্ধতির ইটভাটা তৈরির জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক ঋণও দিচ্ছে। আবার পুরনো প্রযুক্তির ছোট একটি ইটভাটা তৈরিতে যে পরিমাণ স্থান লাগে, সে পরিমাণ স্থানে আধুনিক পদ্ধতির ১৫ থেকে ২০টি ইটভাটা তৈরি করা সম্ভব। অর্থাৎ ইটভাটায় পরিবেশের দূষণ হয় এমন জ্বালানি ব্যবহার না করে এলপিজি ব্যবহার করতে হবে এবং ভার্টিক্যাল প্রযুক্তির আধুনিক ইটভাটা তৈরির জন্য মালিকদের উদ্বুদ্ধ করতে হবে।

এই অধ্যাপক বলেন, ঢাকায় ভবন নির্মাণসামগ্রীগুলো, যেমন ইট, বালু, সিমেন্ট খোলা অবস্থায় সড়কের ওপর রেখে দেওয়া হয়। আর বাতাসে সেই বালুকণা উড়ে ঢাকার বায়ু দূষিত হচ্ছে। এ জন্য কাজ করার সময় নির্মাণকাজে ব্যবহূত বালু পানি দিয়ে ভিজিয়ে রাখতে হবে। আবার শহরে যত্রতত্র নির্মাণসামগ্রী যাতে ফেলে রাখা না হয় সে জন্য জনগণের পক্ষ থেকে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। এ ক্ষেত্রে যে এলাকায় খোলা অবস্থায় বালু ফেলে রাখা হয়, সেখানকার বাসিন্দাদেরই এ ব্যাপারে প্রতিবাদ জানাতে হবে। শহরের বায়ুদূষণের অন্যতম প্রধান আরেকটি কারণ হচ্ছে পুরনো গণপরিবহন থেকে বের হওয়া কালো ধোঁয়া। আইনুন নিশাত বলেন, ঢাকায় চলাচলকারী গণপরিবহনগুলো ২৫ থেকে ৩০ বছরের পুরনো লক্কড়-ঝক্কড়। এই গাড়িতে ধারণক্ষমতার চেয়ে অতিরিক্ত যাত্রী বহন করা হয়। ফলে এসব গাড়ি থেকে অতিরিক্ত ধোঁয়া বের হয়। একসময় পরিবেশদূষণ কমাতে টু স্ট্রোক গাড়ি বন্ধ করা হয়। চাইলে নগরের এই লক্কড়-ঝক্কড় গাড়িগুলোও সড়ক থেকে তুলে নেওয়া সম্ভব। কিন্তু পুরনো এসব গাড়ির মালিকরা বেশ ক্ষমতাশালী। এ কারণে এসব গাড়ি সহজে সড়ক থেকে তুলে নেওয়া যাবে না। এ ছাড়া শহরে ভোরে সড়কগুলো ঝাড়ু দেওয়ার ফলে প্রচুর ধুলা ওড়ে। আর ঢাকার বাতাসে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র বস্তুকণা এতই সূক্ষ্ম যে তা খালি চোখে দেখা যায় না।

সর্বশেষ খবর