শিরোনাম
সোমবার, ৭ মে, ২০১৮ ০০:০০ টা

স্বামীর অবৈধ আয়ের কিছু না জেনেই আসামি স্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

স্বামীর অবৈধ আয়ের কিছু না জেনেই আসামি স্ত্রী

দুর্নীতির ১১৮ মামলায় পুরুষের পাশাপাশি নারীদের সাজার বিষয়টি ভাবিয়ে তুলেছে দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক)। স্বামীর অবৈধ আয়ে স্ত্রীর নামে সম্পদ অর্জন-সংক্রান্ত ৯০ শতাংশ মামলায় স্ত্রী এ সম্পর্কে কিছুই জানেন না। তাকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। অথচ আইনে ওই কিছুই না-জানা নারীকেই আসামি করা হচ্ছে। এ বিষয়ে আইনি কাঠামোর মধ্য থেকেই এ ধরনের নারীদের সুরক্ষা দেওয়ার কথা চিন্তা করছে দুদক। ২০১৫ সাল থেকে গত বছর পর্যন্ত এ ধরনের মামলার কথা উল্লেখ করে এসব বলেন দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ। গতকাল রাজধানীর ধানমন্ডিতে মাইডাস সেন্টারে টিআইবি কার্যালয়ের মেঘমালা সম্মেলন কক্ষে টিআইবি আয়োজিত ‘দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত আয় ও সম্পদের পারিবারিক দায়, নারীর ভূমিকা, ঝুঁকি ও করণীয়’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ইকবাল মাহমুদ বলেন, ‘৬০-৭০ লাখ টাকার দুর্নীতির মামলায় কয়েক বছর আগে এক মেডিকেল কলেজপড়ুয়া নারী দোষী সাব্যস্ত হওয়ার বিষয়টি আমাকে ভাবিয়ে তোলে। তিনি জানেনই না স্বামীর সঙ্গে তিনিও দুর্নীতির মামলায় সাজা পেতে যাচ্ছেন। বিষয়টি খুবই চিন্তার। এ রকম  দুর্নীতির মামলায় নারীর সাজা হওয়ার বিষয়টি খুবই নেতিবাচক।’ দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ‘অনিচ্ছায় দুর্নীতির মামলায় জড়ানো নারীদের কীভাবে সাজা দেওয়া সম্ভব। বিষয়টিতে কোনো সমাধানে আসতে পারিনি। সিদ্ধান্ত দেওয়ার আগে বিভিন্ন নারী সংগঠন এবং মন্ত্রণালয়ের সঙ্গেও কথা বলেছি। তাদের সাজা দেওয়া কিংবা দায়মুক্তির কোনো পথ বের করা যায় কিনা তা নিয়ে আলোচনা চলুক। সর্বমহলে আলোচনা হলে এটা নিয়ে সাড়া পড়বে। এ নিয়ে আইনজীবী, আইনের শিক্ষকসহ আইনজ্ঞদের সঙ্গেও পরামর্শ করা হবে। প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট আইনের সংশোধন ও সংযোজনও করা যেতে পারে।’ স্বামী বা পরিবারের পুরুষ সদস্যদের অবৈধ আয় সম্পর্কে নারীদের সচেতন হওয়ার বিষয়টিতে গুরুত্ব দেন ইকবাল মাহমুদ। তিনি বলেন, মামলায় অভিযুক্ত নারীরা বলছেন, তারা কিছু জানেন না। অথচ কাগজে তাদের সই আছে। তারাও পরিচালক বা অন্য কোনো পদে আছেন। তাই নারীদের সচেতন হতে হবে। ব্যাংক চেক বা খালি চেকে সই করার আগে জানতে হবে, তিনি কেন সই দিচ্ছেন। দুদকের ১০৬ নম্বরে অভিযোগ জানানো যায় বলেও উল্লেখ করেন তিনি। গত দেড় বছরে একজন নারী স্বামীর অবৈধ আয় সম্পর্কে জানেন বলে দুদককে অবহিত করেছিলেন। এমনটা জানালেন ইকবাল মাহমুদ। দুর্নীতির বড় জায়গা হচ্ছে ফ্ল্যাট কেনা ও জমি কেনা মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘কোটি টাকার সম্পত্তি ১০ লাখে কেনা যাচ্ছে কীভাবে? জমি ও ফ্ল্যাটের দাম নির্ধারণের বিষয়টি অনেক দিন ধরেই আলোচনা করে আসছি। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি, এ ব্যাপারে এখনো কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি।’ দুদকে জিজ্ঞাসাবাদের পর অনেকের হাসিমুখে বেরিয়ে যাওয়া প্রসঙ্গে সাংবাদিকের প্রশ্নের উত্তরে ইকবাল মাহমুদ বলেন, ‘আমরা আমাদের জিজ্ঞাসাবাদ করি। তারা বেরিয়ে যাওয়ার সময় হাসিমুখে বেরিয়ে যেতে পারেন। তাদের বুকে অনেক সাহস হয়তো। যিনি এভাবে বেরিয়ে যান, তিনি হয়তো নাটক করেন। কিন্তু জিজ্ঞাসাবাদ এত সহজ হয় না। তথ্যপ্রমাণ হাজির করে জিজ্ঞাসাবাদ করি আমরা। একজন প্রথম জিজ্ঞাসাবাদে হাসিমুখে বেরিয়ে গেলেও পরের বার কেঁদে গিয়েছেন।’ টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, আইনের সংশোধন আনা যেতে পারে।

সর্বশেষ খবর