রবিবার, ১৩ মে, ২০১৮ ০০:০০ টা

শেষ মুহূর্তের হিসাব নিকাশ

আরাফাত মুন্না, খুলনা থেকে

আর দুই দিন পরই খুলনা সিটি করপোরেশন (কেসিসি) নির্বাচনের ভোট গ্রহণ। শেষ সময়ে ভোটের নানা সমীকরণ মেলাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রার্থীরা। থেমে নেই ভোটাররাও। গত এক সপ্তাহে নগরীর বিভিন্ন স্থানে অন্তত ১০০ ভোটারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতীকের চেয়ে প্রার্থীর ভাবমূর্তি ও উন্নয়নকেই বেশি গুরুত্ব দেবেন তারা। স্থানীয় নির্বাচন বিশ্লেষকরা মনে করেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে যেহেতু সরকার পরিবর্তন হয় না, তাই দলীয় অনেক নেতা-কর্মীও উন্নয়নের স্বার্থে দলের বাইরে ভোট দিয়ে থাকেন। খুলনায়ও তার ব্যতিক্রম হবে না বলে আশা তাদের।

৬ নম্বর ওয়ার্ডের নতুন ভোটার সোহেল রহমান বলেন, সৎ, যোগ্য, নিষ্ঠাবান প্রার্থীকে ভোট দেব। যার দ্বারা নগরের উন্নয়ন হবে, পানি সমস্যা দূর হবে, যানজট নিরসন হবে, সর্বোপরি সাধারণ মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হবে, এমন প্রার্থীকেই ভোট দেব। ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের শেখ রাসেল বলেন, এমন প্রার্থী চাই, যে সাধারণ মানুষের উন্নয়নে নিজেকে সব সময় সংযুক্ত রাখবেন, মানুষের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করবেন। ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের জীবন চক্রবর্তী বলেন, এমন একজনকে মেয়র হিসেবে দেখতে চাই, যিনি স্বপ্ন দেখবেন এবং স্বপ্ন বাস্তবায়নের সক্ষমতা রাখবেন। মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি নাগরিকদের নিয়ে আলোচনায় বসবেন, কর্মপরিকল্পনা তৈরি করবেন, পাঁচ বছরের মধ্যে ওই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে কাজ করবেন।

এই নগরীতে এবারই প্রথম দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হওয়ায় প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের দুই প্রার্থী তালুকদার আবদুল খালেক (আওয়ামী লীগ-নৌকা) ও নজরুল ইসলাম মঞ্জুর (বিএনপি-ধানের শীষ) মধ্যেই মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে। এ ছাড়া জাতীয় পার্টির প্রার্থী শফিকুর রহমান মুশফিক (লাঙ্গল) তার অতীত কেলেঙ্কারি নিয়েও আলোচনায় আছেন। ইসলামী আন্দোলনের খুলনা মহানগর কমিটির সভাপতি মো. মুজ্জাম্মিল হক হাতপাখা প্রতীক নিয়ে লড়ছেন। বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) খুলনা মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান বাবু কাস্তে প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯০ সালে খুলনা পৌরসভা খুলনা সিটি করপোরেশনে উন্নীত হয়। এই ২৮ বছরে প্রায় ৪৬ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই শহরে যেমন উন্নয়ন হওয়ার কথা ছিল তা পায়নি নগরীর বাসিন্দারা। নানা সমস্যায় জর্জরিত এই মহানগরের উন্নয়নই এখন একমাত্র চাওয়া ভোটারদের। গত পাঁচ বছর খুলনার নগরপিতা হিসেবে সরকারি দলের কেউ না থাকায় উন্নয়ন অনেকটা কম হয়েছে বলে মনে করেন তারা। এ কারণে যিনি নাগরিক সমস্যা দূর করতে কাজ করতে পারবেন এমন প্রার্থীকেই এবার নগরপিতা হিসেবে দেখতে চান তারা। সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) খুলনা জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট কুদরত-ই খুদা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, খুলনা সিটির এবারের নির্বাচন অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এবারই প্রথম দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হচ্ছে। এ ছাড়া আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মনোনীত দুই মেয়র প্রার্থীই অনেক যোগ্য। তিনি বলেন, এই নির্বাচনে মেয়র নির্বাচিত করতে মূলত দুই শ্রেনির ভোটার ভূমিকা রাখবে। এক. ৫৩ হাজার নতুন ভোটার এবং দ্বিতীয়ত দলীয় সচেতন ভোটার। এই নির্বাচন বিশ্লেষক বলেন, নতুন ভোটারদের অধিকাংশই কোনো দলীয় রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নয়। ফলে তারা খুব হিসাব করে নগরীর উন্নয়নের কথাই চিন্তা করবে। প্রার্থীদের প্রতিশ্রুতিগুলো বিশ্লেষণ করবে।

সর্বশেষ খবর