সোমবার, ১৪ মে, ২০১৮ ০০:০০ টা

যখনই প্রয়োজন হবে মানুষের পাশে দাঁড়াবে সেনাবাহিনী

২৭ উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

যখনই প্রয়োজন হবে মানুষের পাশে দাঁড়াবে সেনাবাহিনী

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সংবিধান এবং দেশমাতৃকার সার্বভৌমত্ব রক্ষা করার জন্য আপনাদের ঐক্যবদ্ধ থেকে অভ্যন্তরীণ কিংবা বৈদেশিক যে কোনো হুমকি মোকাবিলায় সদা সতর্ক থাকতে হবে। বর্তমান সরকারের রাষ্ট্র পরিচালনাকালীন যখনই প্রয়োজন হবে তখনই সেনাবাহিনী জনগণের পাশে এসে দাঁড়াবে। এটা আমার দৃঢ় বিশ্বাস। মনে রাখতে হবে, দেশটা আমাদের, দেশের মানুষ আমাদের।

গতকাল সকালে দেশের বিভিন্ন সেনানিবাসে ২৭টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধনকালে তিনি এসব কথা বলেন। ঢাকা সেনানিবাস থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে তিনি এসব প্রকল্পের উদ্বোধন করেন। প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে— ঢাকা সেনানিবাসে ক্যান্সার সেন্টার, ফার্টিলিটি সেন্টার, এডিবল ওয়েল মিল এবং বিভিন্ন সেনানিবাসে সেনা সদস্যদের জন্য ব্যারাক, সেনা ছাউনি, প্রশিক্ষণ এবং আবাসন প্রকল্পসমূহ।

সেনাপ্রধান জেনারেল আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিউল হক অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতা করেন। প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন। 

সেনা সদস্যদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের সরকার সর্বদাই জনগণের সেবক হিসেবে দেশ পরিচালনা করতে চায়, কখনই শাসক হিসেবে নয়। জনগণের সেবা করার জন্য আপনাদের সার্বক্ষণিক সহযোগিতা আমরা পেয়েছি। সেনাবাহিনীকে দেশের মানুষের ভরসা ও বিশ্বাসের মূর্ত প্রতীক হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, পেশাদারিত্বের কাঙ্ক্ষিত মান অর্জনের জন্য আপনাদের সবাইকে পেশাগতভাবে দক্ষ, সামাজিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধে উদ্বুদ্ধ হয়ে সৎ এবং মঙ্গলময় জীবনের অধিকারী হতে হবে।

সৈনিকদের ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনারা ঊর্ধ্বতন নেতৃত্বের প্রতি আস্থা, কর্মপরায়ণতা, পারস্পরিক বিশ্বাস এবং সর্বোপরি শৃঙ্খলা বজায় রেখে কর্ম সম্পাদনে একনিষ্ঠভাবে কাজ করে যাবেন। কারণ এখন উন্নয়নের ক্ষেত্রে আমরা সম্মিলিতভাবেই প্রচেষ্টা চালাচ্ছি। প্রধানমন্ত্রী আবেগপূর্ণ কণ্ঠে বলেন, সেনাবাহিনীর সঙ্গে তাঁর দৃঢ় পারিবারিক বন্ধন রয়েছে। তাঁর দুই ভাই শহীদ শেখ কামাল এবং শহীদ শেখ জামাল সেনাবাহিনীর সদস্য ছিলেন। বাষ্পরুদ্ধ কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘তাঁর ছোট ভাই শেখ রাসেল পর্যন্ত সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে চেয়েছিলেন। কাজেই পরিবারের সদস্য হিসেবে স্বাধীন স্বার্বভৌম বাংলাদেশের উপযোগী করে সেনাবাহিনীকে গড়ে তোলাকে আমি আমার দায়িত্ব ও কর্তব্য বলেই মনে করি। প্রধানমন্ত্রী স্মরণ করেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান উন্নত ও পেশাদার সেনাবাহিনীর প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে ১৯৭৪ সালেই প্রতিরক্ষা নীতি প্রণয়ন করেছিলেন। তাঁর নির্দেশেই ১৯৭২ সালে কুমিল্লায় গড়ে তোলা হয় বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমি। তিনি বলেন, বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। এখন আমরা মহাকাশে পৌঁছে গেছি। আমাদের বঙ্গবন্ধু সাটেলাইট-১ ইতিমধ্যে সফলভাবে মহাকাশে উেক্ষপণ করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের মাধ্যমে আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ করেছি। সারা দেশে আমরা ৫ হাজার ২৭৫টি ডিজিটাল সেন্টার করেছি, ৮ হাজার ৫০০ পোস্ট অফিসকে আমরা ডিজিটাল সেন্টারে উন্নীত করেছি এবং বাংলাদেশের জনগণ এখন অনলাইনে সব রকম সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, ডিজিটাল খাতে এ স্যাটেলাইট যেমন উপযোগী হবে, চিকিৎসাসেবাসহ সার্বিক উন্নয়নেও এটি ভূমিকা রাখবে। সেই সঙ্গে অন্য দেশের কাছে ভাড়া দিয়েও বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে পারব। কাজেই এটাও আমাদের জন্য একটা বিরাট অর্জন যে আমরা আজকে বাংলাদেশকে নিয়ে গেছি এমন একটা জায়গায় যেখানে বাংলাদেশ ৫৭তম দেশ হিসেবে স্যাটেলাইট উেক্ষপণ করেছে। তাই বাংলাদেশ আন্তর্জাতিকভাবে বিরাট মর্যাদা অর্জন করেছে। এর আগে আমরা সমুদ্রসীমা জয় করেছি। সীমান্তে বিরোধ নিষ্পত্তি করে আমরা ছিটমহল সমস্যার সমাধান করেছি। তিনি বলেন, ‘জলে, স্থলে ও আকাশসীমায় আমাদের অবস্থান সুস্পষ্ট ও সুনির্দিষ্ট হয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা কর্তৃক প্রদত্ত সুদূরপ্রসারী এই প্রতিরক্ষা নির্দেশনার আলোকেই সেনাবাহিনীর সাংগঠনিক কাঠামো বিন্যাস ও পরিবর্তনের পাশাপাশি সেনাবাহিনীর আধুনিকায়নের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। এর ফলেই আজ বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, দেশ ও দেশের বাইরে এক সম্মানজনক অবস্থায় উন্নীত হয়েছে। এ বাহিনীর দীর্ঘদিনের অর্জিত সুনাম আপনাদের রক্ষা করতে হবে, যার স্বপ্ন ও দিকনির্দেশনা জাতির পিতা দিয়েছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে প্যারা কমান্ডো ব্রিগেড গঠন করা হয়েছে। দেশের আকাশ প্রতিরক্ষাকে আরও সুসংহত করতে সংযোজিত হয়েছে এমএলআরএস এবং মিসাইল রেজিমেন্ট। তিনি বলেন, আধুনিক ও উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বর্তমান সরকার সেনাবাহিনীতে অত্যাধুনিক বিভিন্ন যুদ্ধাস্ত্র, হেলিকপ্টার, আর্টিলারি গান এবং মডার্ন ইনফ্যান্ট্রি গেজেট ইত্যাদি সংযোজন করে সেনাবাহিনীর অপারেশনাল সক্ষমতাকে বহুলাংশে বৃদ্ধি করেছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ইতিহাসে প্রথমবারের মতো মহিলা পাইলট সংযোজন একটি নতুন দিগন্তের সূচনা করবে।

সেনাবাহিনী তার মূল কার্যক্রমের পাশাপাশি সবসময়ই জাতি গঠনমূলক কর্মকাণ্ডে নিজেদের নিয়োজিত করেছে বলে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনাদের পেশাগত দক্ষতার কারণে দীর্ঘ প্রত্যাশিত পদ্মা সেতু নির্মাণের কাজ তদারকিসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ যেমন কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়ক প্রকল্প, হাতিরঝিল সমন্বিত উন্নয়ন প্রকল্প, বহদ্দারহাট ফ্লাইওভার নির্মাণ, মহিপাল ফ্লাইওভার নির্মাণ এবং থানচি-আলীকদম সড়ক নির্মাণ দায়িত্ব আপনাদের ওপর ন্যস্ত করা হয়েছে। তিনি বলেন, সেনাবাহিনী মিয়ানমার থেকে আগত রোহিঙ্গাদের মাঝে ত্রাণসামগ্রী বিতরণের দায়িত্ব গ্রহণের পাশাপাশি তাদের অস্থায়ী আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণে সহায়তা ও চিকিৎসাসেবাসহ বিভিন্ন ধরনের সহযোগিতায় দিন-রাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে দেশের ভাবমূর্তিকে আরও উজ্জ্বল করে তুলেছে। তিনি বলেন, ‘সেনাবাহিনীর সদস্যদের জন্য দুপুরে রুটির পরিবর্তে ভাতের ব্যবস্থা করেছি। যতদিন সেটা করতে পারিনি ততদিন আমিও দুপুরে ভাত খাইনি। সেনাসদস্যদের দুস্থ ভাতা দুই লাখ টাকার পরিবর্তে ছয় লাখ টাকায় বৃদ্ধি করা হয়েছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অফিসার, জেসিও এবং ওআর গণের ছুটি নগদায়নের অর্থ প্রদান সরকার কর্তৃক ১২ মাসের পরিবর্তে ১৮ মাসে উন্নীত করা হয়েছে এবং জেসিও এবং অন্যান্য পদবির পেনশনযোগ্য চাকরিকাল সরকার কর্তৃক ১৫ বছরের পরিবর্তে ১০ বছর নির্ধারণ করা হয়েছে।

সর্বশেষ খবর