মঙ্গলবার, ১৫ মে, ২০১৮ ০০:০০ টা

হাসিনা-মোদি বৈঠক হবে শান্তিনিকেতনে

গৌতম লাহিড়ী, নয়াদিল্লি

শান্তিনিকেতনের নবনির্মিত ‘বাংলাদেশ ভবন’-এই অনুষ্ঠিত হতে চলেছে বহুপ্রতীক্ষিত শেখ হাসিনা-নরেন্দ্র মোদি একান্ত বৈঠক। আগামী ২৫ মে বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মদিনেই পশ্চিমবঙ্গের কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শান্তিনিকেতন আশ্রমে আসছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওইদিনই দিল্লি থেকে পৌঁছাবেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। শান্তিনিকেতনের বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের বার্ষিক সমাবর্তনের পর বাংলাদেশ ভবনের উদ্বোধন করবেন দুই প্রধানমন্ত্রী। ২৫ কোটি টাকায় নির্মিত ভবনটির ব্যয়ভার বহন করেছে বাংলাদেশ সরকার। এই ভবনে রয়েছে একটি সভাগৃহ। সেখানেই দুপুরে হবে হাসিনা-মোদি বৈঠক। মোদি এই বৈঠক করতে চেয়েছিলেন কলকাতায়। কিন্তু বৈঠকের দিনটা পড়ে রমজান মাসে। তাই এই বৈঠক স্থানান্তরিত করা হয়েছে শান্তিনিকেতনে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোজা পালন করেন। তাই এই দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে কোনো মধ্যাহ্নভোজের আয়োজন করা হয়নি। এমনকি প্রধানমন্ত্রী মোদিও কোনো ভোজসভায় যোগ দেবেন না। দিল্লিতে নিযুক্ত বাংলাদেশ হাইকমিশনার সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী ওইদিন সন্ধ্যায় কলকাতায় তাজ বেঙ্গল হোটেলে ইফতার পার্টির আয়োজন করেছেন। তাই বিকালের মধ্যেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কলকাতায় ফিরবেন। প্রধানমন্ত্রী মোদি শান্তিনিকেতনের অনুষ্ঠান শেষে ফের দিল্লি ফিরে যাবেন ওইদিন। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি ওই ইফতার অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পারেন বলে জানা গেছে। মূলত শান্তিনিকেতনের বাংলাদেশ ভবন উদ্বোধন আর পরদিন ২৬ মে বর্ধমান জেলার আসানসোলে কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে উপস্থিত হওয়ার জন্যই বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর পশ্চিমবঙ্গ সফর। কিন্তু ভারতের প্রধানমন্ত্রীর আগ্রহে এই দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের ব্যবস্থা। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক পর্যালোচনা ছাড়াও নির্দিষ্ট বিষয়ে আলোচনা হবে। এ বিষয়ের মধ্যে তিস্তা নদীর পানিবণ্টন চুক্তি রয়েছে কিনা তা স্পষ্ট করে বলা হয়নি। বিশেষ করে দুই দেশের জাতীয় সংসদের নির্বাচন আসন্ন। এর মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হবে কিনা তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। ফলে এই বৈঠকেই দুই প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদকালের শেষ বৈঠক ধরা যেতে পারে। বাংলাদেশ হাইকমিশন আশা করেছেন গুরুত্বপূর্ণ কোনো ঘোষণা হতে পারে। এই অনুষ্ঠানের জন্য ভারত সরকার পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতাকেও আমন্ত্রণ জানিয়েছে। দুটি অনুষ্ঠানেও তিনি উপস্থিত থাকবেন। দিল্লি থেকে বাংলাদেশ হাইকমিশনার, ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিজয় কেশব গোখলে এবং ঢাকা থেকে ভারতের হাইকমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রিংলা উপস্থিত থাকবেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিমান এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইটে সকাল ১০টায় কলকাতার নেতাজি সুভাষচন্দ্র আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নামবেন। সেখান থেকে ভারতীয় বিমান বাহিনীর হেলিকপ্টারে শান্তিনিকেতনে রওনা হবেন। প্রধানমন্ত্রী মোদি একই সময়ে আসবেন। ফলে দুই প্রধানমন্ত্রী একত্রে শান্তিনিকেতনে যাবেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শান্তিনিকেতন থেকে কলকাতায় ফিরে তার হোটেলে যাওয়ার পথে তিনি এলগিন রোডে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর বাসভবন এবং জাদুঘর পরিদর্শন করবেন। হোটেলে ফিরে ইফতারের পর কলকাতার বণিক সবার সঙ্গে একটি বৈঠক করবেন। এই বৈঠকে ভারত-বাংলাদেশ বাণিজ্য সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা হবে। পরদিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিমানে পশ্চিমবঙ্গের দ্বিতীয় বিমানবন্দর অন্ডাল বিমানবন্দরে নামবেন। সেখান থেকে সড়কপথে আসানসোলে কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে যোগ দেবেন। সেখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সাম্মানিক ডি-লিট প্রদান করবে বিশ্ববিদ্যালয়। একই অনুষ্ঠানে ডি-লিট পাবেন রবিঠাকুর পরিবারের সদস্য বিশিষ্ট অভিনেত্রী শর্মিলা ঠাকুর। অনুষ্ঠান শেষে প্রধানমন্ত্রী কলকাতা ফিরবেন। সেখান থেকে তিনি যাবেন কলকাতার জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি। কবিগুরু এই বাড়িতেই থাকতেন। এখানেও একটি জাদুঘর ও বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। এই অনুষ্ঠান শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাতে ঢাকা ফিরে যাবেন।

সর্বশেষ খবর