বুধবার, ১৬ মে, ২০১৮ ০০:০০ টা

নৌকার জয় খুলনায়

তালুকদার খালেক বললেন, মঞ্জুর সহযোগিতা নিয়ে কাজ করব

আরাফাত মুন্না, সামছুজ্জামান শাহীন ও সাইফুল ইসলাম, খুলনা থেকে

নৌকার জয় খুলনায়

খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের শেষ হাসি হাসলেন আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী তালুকদার আবদুল খালেক। গতকাল অনুষ্ঠিত নির্বাচনে মেয়র পদে তিনি ৬৭ হাজার ৯৪৬ ভোটের ব্যবধানে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জুকে পরাজিত করেন। বেসরকারিভাবে নগরীর ৩১ ওয়ার্ডের ২৮৯ কেন্দ্রের মধ্যে ২৮৬টির ফলাফল পাওয়া যায়। এতে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী তালুকদার আবদুল খালেক পেয়েছেন ১ লাখ ৭৬ হাজার ৯০২ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি মনোনীত ধানের শীষ মনোনীত মেয়র প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু পেয়েছেন ১ লাখ ৮ হাজার ৯৫৬ ভোট। তিনটি কেন্দ্রের ভোট গ্রহণ স্থগিত করা হয়। তাতেও ফলাফলে কোনো প্রভাব ফেলবে না। বিএনপি প্রার্থী মঞ্জু শতাধিক কেন্দ্রে ভোট কারচুপির অভিযোগ করেন। তবে আওয়ামী লীগ এ অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছে। বেসরকারিভাবে ফলাফলে বিজয়ী হয়ে রাতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী তালুকদার আবদুল খালেক সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘এ বিজয় খুলনাবাসীর। তারা আমাকে ভরসা রেখে ভোট দিয়েছেন। এই নির্বাচনে আমার প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জুকে সঙ্গে নিয়েই খুলনার উন্নয়নে কাজ করতে চাই।’ তিনি বলেন, ‘খুলনার জনগণ আমাদের ভোট দিয়েছে। আমি তাদের কাছে ঋণী। আমি এই ঋণ শোধ করব কাজের মাধ্যমে।’ ‘অক্লান্ত পরিশ্রম’ করায় নেতা-কর্মীদের অভিনন্দন জানানোর পাশাপাশি তাদের ধৈর্য ধরার আহ্বান জানান নৌকা প্রতীকের প্রার্থী। খুলনা শহরের উন্নয়নে নজরুল ইসলাম মঞ্জুর যে কোনো ধরনের সহযোগিতা  নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তিনি বলেন, ‘খুলনা শহর আমাদের। আমরা সবাই বসবাস করি। এই শহরটা যদি ভালো থাকে আমরা ভালো থাকব। আমি চেষ্টা করব,  যে সব অঙ্গীকার করেছি সেগুলো বাস্তবায়ন করার।’ এদিকে আজ বেলা ১১টায় খুলনা প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানাবেন তালুকদার আবদুল খালেক। বিএনপি মনোনীত ধানের শীষের প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু বলছেন অন্য কথা। রাতে তাত্ক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অন্তত ১০০ কেন্দ্রে ভোট জালিয়াতি হয়েছে। আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের ছেলেপেলে বিভিন্ন ভোট  কেন্দ্র দখল করে ব্যালট পেপারে সিল মেরে বাক্স ভর্তি করে। সেসব কেন্দ্রের ভোট বাতিল করে যে ফলাফল  ঘোষণা করা হয়েছে, সেটা বাতিল করতে হবে। এরপর  সেখানে পুনরায় নির্বাচন দিতে হবে।’ তবে আজ সকাল ১০টায় খুলনা মহানগর দলীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে নিজের অভিযোগগুলো তুলে ধরবেন নজরুল ইসলাম মঞ্জু। ভোট গ্রহণ শেষ হওয়ার পর বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে জয়ের খবর আসতে থাকায় উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি হয় আওয়ামী লীগের খুলনা মহানগরী কার্যালয়ে। বিভিন্ন ওয়ার্ড কার্যালয়েও চিত্রও ছিল একই রকম। তবে কোনো বিজয় মিছিল না করার কথা জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থীর নির্বাচনী সমন্বয়ক এস এম কামাল হোসেন। জয়ের পর নগরবাসীসহ সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন বিজয়ী মেয়র তালুকদার আবদুল খালেক। খুলনা মহানগরীতে প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে কিছু বিক্ষিপ্ত ঘটনা ছাড়া শান্তিপূর্ণভাবেই ভোট গ্রহণ শেষ হয়। সকাল ৮টায় ভোট গ্রহণ শুরু হয়। ভোট গণনা শেষে কেন্দ্রে ফলাফল ঘোষণার পাশাপাশি নগরীর সোনাডাঙ্গায় মহিলা ক্রীড়া কমপ্লেক্সে স্থাপিত নির্বাচন কমিশনের কন্ট্রোল রুম থেকেও কেন্দ্রীয়ভাবে ফলাফল ঘোষণা করা হয়। প্রচার-প্রচারণার শুরু থেকেই প্রায় প্রতিদিনই সংবাদ সম্মেলনে দুই প্রার্থীর পক্ষ থেকে অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ করায় নির্বাচনে টানটান উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। এ কারণে গতকাল খুলনাবাসীর সঙ্গে গোটা দেশের মানুষের চোখও ছিল এই নির্বাচনে। ফলে কড়া নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়। বিজিবি, পুলিশ, র‌্যাব ও আনসারের ১০ হাজার সদস্য আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করেছে। এ ছাড়া মোবাইল কোর্টে মাঠে ছিলেন ৬২ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এবং ১০ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট। নির্বাচন কমিশনের যুগ্মসচিব আবদুল বাতেনের নেতৃত্বে কমিশনের ২৯ সদস্যের নিজস্ব পর্যবেক্ষক টিমও ছিল মাঠে। ভোট গ্রহণ শেষে রিটার্নিং অফিসার মো. ইউনুচ আলী সাংবাদিকরে জানান, কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া নির্বাচন শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠু হয়েছে। গোলযোগের কারণে তিনটি কেন্দ্র স্থগিত করা হয়েছে। শান্তিপূর্ণ ভোট গ্রহণে সহযোগিতার জন্য তিনি সবাইকে ধন্যবাদ জানান। প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের প্রার্থীর পাশাপাশি এ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির এস এম শফিকুর রহমান মুশফিক (লাঙ্গল), ইসলামী আন্দোলনের মো. মুজ্জাম্মিল হক (হাতপাখা), বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) মিজানুর রহমান বাবু (কাস্তে) নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ও দলীয় মেয়র প্রার্থীর নির্বাচনী সমন্বয়ক এস এম কামাল হোসেন গতকাল ভোট গ্রহণের পর সংবাদ সম্মেলনে বলেন, আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি কোনো বিজয় মিছিল করব না। সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে ভোট গ্রহণের জন্য সাংবাদিক, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য ও খুলনার ভোটারদের প্রতি তিনি কৃতজ্ঞতা জানান। এর আগে ভোট কারচুপির অভিযোগ করে বিএনপি প্রার্থী মঞ্জু বলেন, এখন পর্যন্ত শতাধিক কেন্দ্রে ভোট ডাকাতি, এজেন্টদের বের করে দেওয়ার সংবাদ পেয়েছি। আমরা বাকি তথ্য সংগ্রহ করছি। এসব কেন্দ্রের ফলাফল বাতিল করে পুনরায় ভোট গ্রহণ করতে হবে। তবে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী তালুকদার আবদুল খালেক বলেন, নিশ্চিত পরাজয় আঁচ করতে পেরে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ করতেই অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। আর মঞ্জু সাহেব শুরু থেকেই মিথ্যা কথা বলে আসছেন। উনার কথায় আমি গুরুত্ব দিই না। সকাল ৮টা ১০ মিনিটে খুলনা সিটি করপোরেশনের পাইওনিয়ার বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভোট দেন তালুকদার আবদুল খালেক। ভোট দিয়ে বের হয়ে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, নির্বাচন নিয়ে কোনো শঙ্কা নেই। খুলনার উন্নয়নে মানুষ নৌকায় ভোট দেবে। বিজয়ের বিষয়ে আশাবাদী ছিলেন খালেক। বিএনপি প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে তার নিজ কেন্দ্র রহিমা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যান সকাল সাড়ে ৮টায়। ৮টা ৫০ মিনিটে তারা ভোট প্রদান করেন। পরে কেন্দ্রের বাইরে সাংবাদিকদের মঞ্জু বলেন, বেশকিছু কেন্দ্র থেকে তাঁর পোলিং এজেন্টদের বের করে দেওয়া হয়েছে। তিনি অভিযোগ করেন, এ ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনকে বলা হলেও তারা কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। তবে তিনি বলেন, যত যাই হোক, আমি শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে থাকব।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর