বৃহস্পতিবার, ১৭ মে, ২০১৮ ০০:০০ টা
সাক্ষাৎকারে মেয়র তালুকদার খালেক

খুলনাবাসীর আস্থার মান রাখতে চাই

আরাফাত মুন্না, খুলনা থেকে

খুলনাবাসীর আস্থার মান রাখতে চাই

নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে খুলনা সিটির সমস্যা নিরসন করে নগরবাসীর আস্থার মান রাখতে চান নবনির্বাচিত মেয়র তালুকদার আবদুল খালেক। তিনি বলেন, নগরীর প্রধান সমস্যা জলাবদ্ধতা। সামান্য বৃষ্টিতেই রাস্তায় পানি জমে যায়। পানি যাতে না জমে, সেই ব্যবস্থা করব। আশা করছি আগামী বর্ষা মৌসুমে খুলনা শহরে কোথাও পানি জমবে না। সেই সঙ্গে শহর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছেন খুলনার নতুন নগরপিতা। বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে গতকাল একান্ত আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন। নগরীর মুন্সীপাড়ার বাসভবনে তিনি এ সাক্ষাৎকার দেন।

বাংলাদেশ প্রতিদিন : দ্বিতীয়বারের মতো খুলনার মেয়র নির্বাচিত হলেন, আপনার অনুভূতি সম্পর্কে যদি কিছু বলেন।

তালুকদার আবদুল খালেক : একটা নির্বাচন করতে অনেক পরিশ্রম করতে হয়। পরিশ্রমের ফল ঘরে এলে যেমন আনন্দ লাগে, তেমন দায়িত্ব পালনেরও প্রস্তুতি নিতে হয়। দ্বিতীয়বারের মতো খুলনাবাসী আমাকে সুযোগ দেওয়ায় আমি তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ। খুলনাবাসী আমার প্রতি যে আস্থা রেখেছেন, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নগরীর সমস্যাগুলো দূর করে তাদের সেই আস্থার মান রাখতে চাই।

বাংলাদেশ প্রতিদিন : অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কোন কাজটা করতে চান?

খালেক : আমি যখন খুলনার মেয়র ছিলাম (২০০৮ থেকে ২০১৩) তখন বেশকিছু দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়েছিলাম। তার মধ্যে একটা ছিল নগরীর জলাবদ্ধতা দূর করতে ময়ূর নদসহ ২২টি খাল দখলমুক্ত করে খনন করা। এ প্রকল্পে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি) ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছিল। আমার সময়ে এটা টেন্ডার পর্যায়ে ছিল। এরপর ২০১৩ সালের নির্বাচনে আমি পরাজিত হয়েছি। এবার ভোট চাইতে গিয়ে দেখলাম একটি খালও উদ্ধার হয়নি। সব কাজ থমকে আছে। আমি এখান থেকেই কাজ শুরু করতে চাই।

বাংলাদেশ প্রতিদিন : আপনি আগে মেয়র ছিলেন, তাই আপনার কাছে জনগণের প্রত্যাশাও বেশি। খুলনাবাসীকে নতুন কী উপহার দিতে চান?

খালেক : আমার ইচ্ছা আছে শহরকে বড় করার। খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের নতুন তিনটি থানা হয়েছে। এগুলো সিটি করপোরেশনে যুক্ত করে সেখানে নতুন কিছু করার বিষয়ে চিন্তা করব। পুরনো শহরে নতুন করে কিছু করার সুযোগ নেই। অনেক কাজ করতে চাই, তবে ইচ্ছা করলেই করতে পারি না। আমাদের শহরে একটা খেলার মাঠ নেই। এখন ইচ্ছা করলেই মাঠ আমি করে দিতে পারি না। জায়গা নেই। ইচ্ছা করলেই একটি বড় পার্কও শহরের ভিতরে করতে পারি না। মূল শহরের বাইরে মাঠ ও পার্ক করার পরিকল্পনাও রয়েছে।

বাংলাদেশ প্রতিদিন : আপনি আগের মেয়াদে বর্তমান জিয়া হল ভেঙে সিটি টাওয়ার করার পরিকল্পনা করেছিলেন। এখন কী ভাবছেন?

খালেক : আমি মেয়র থাকার সময় জিয়া হলকে ব্যবহার উপযোগী করতে চেষ্টা করেছিলাম। কুয়েট, বুয়েটের এক্সপার্ট দিয়েও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করিয়েছি। তবে ব্যবহার উপযোগী না হওয়ায় এটা পরিত্যক্ত ঘোষণা করতে হয়েছে। এরপর প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া ২০০ কোটি টাকা থেকে এই স্থানে সিটি টাওয়ার নির্মাণের জন্য ২৫ কোটি টাকা রেখেছিলাম। তবে আমি না থাকায় ওই হল এখনো ভাঙা হয়নি। টাকাও অন্য খাতে ব্যয় করা হয়েছে। একটি মাল্টিপারপাস টাওয়ার করার পরিকল্পনা ছিল আমার। আশা করি, সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারব।

বাংলাদেশ প্রতিদিন : এই নগরীর প্রধান চ্যালেঞ্জগুলো কী এবং তা দূর করতে কী কী পদক্ষেপ নেবেন?

খালেক : আমাদের এই নগরীর প্রধান চ্যালেঞ্জ জলাবদ্ধতা। সামান্য বৃষ্টিতেই রাস্তায় পানি জমে যায়। জরুরি ভিত্তিতে নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে কাজ করব। শহর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখাও আমার অন্যতম চ্যালেঞ্জ। এ কাজ করতে টাকা লাগে না। এটা প্রশাসনিক কাজ। লোকবল আছে, শুধু কাজটা সঠিকভাবে হচ্ছে কিনা, তা তদারকি করতে হবে। শহর থেকে মাদক নির্মূলে কাজ করব। জনপ্রতিনিধি হিসেবে এটা আমার অন্যতম দায়িত্ব।

বাংলাদেশ প্রতিদিন : আপনি রামপাল-মোংলা (বাগেরহাট-২) আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন। সেই পদ ছেড়ে এখানে এসেছেন। ওই এলাকার মানুষের উদ্দেশে কী বলবেন?

খালেক : আমি ২০০৮ সালেও রামপাল-মোংলা থেকে এখানে এসে মেয়র হয়েছিলাম। এবারও হয়েছি। রামপাল-মোংলায় না থাকলেও তাদের তো ভুলে যেতে পারব না। খুলনাবাসীর প্রতি আমার দায়িত্ব পালনের পর আমি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত রামপাল-মোংলার মানুষদেরও নিয়ে চলতে চাই।

বাংলাদেশ প্রতিদিন : নির্বাচনে পরাজিত নজরুল ইসলাম মঞ্জু বলেছেন, ভোট ডাকাতির মাধ্যমে আপনি মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। এ বিষয়ে কী বলবেন?

খালেক : তাদের অভিযোগ সঠিক নয়। খুলনার নির্বাচনে প্রচুর পর্যবেক্ষক-আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য দায়িত্ব পালন করেছেন। ঢাকা ও স্থানীয় মিলিয়ে কয়েক শ সাংবাদিক নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেছেন। ওনার একার দৃষ্টিতে ভোট ডাকাতি দেখলে হবে না। সবার দৃষ্টিতে দেখতে হবে। কিছু কাউন্সিলর প্রার্থী নিয়ে বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ঘটলেও সামগ্রিকভাবে নির্বাচন সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবেই হয়েছে।

বাংলাদেশ প্রতিদিন : আপনি পরাজিত প্রার্থীকে নিয়ে কাজ করার কথা বলেছেন, তা কীভাবে করতে চান?

খালেক : খুলনা শহরে আমরা যে দল করি, রাজনীতি করি, তার পরও আমাদের সবার মধ্যে একটা সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে। একে অন্যের সঙ্গে আমাদের ভালো সম্পর্ক রয়েছে। আমরা সবাই শহরে বসবাস করব, শহরের উন্নয়ন চাই। সে ক্ষেত্রে তার যদি কোনো সুন্দর পরামর্শ থাকে তাহলে অবশ্যই তা আমি গ্রহণ করব।

বাংলাদেশ প্রতিদিন : হকার্স মার্কেট থাকলেও খুলনা শহরের ফুটপাথ এখনো হকারদের দখলে। এ বিষয়ে কী পদক্ষেপ নেবেন?

খালেক : দখলের পেছনে অনেক বড় বড় নেতা। ফুটপাথ করা হয় জনগণের চলার জন্য। রাস্তায় যানবাহন চলে, আর সাধারণ মানুষ ফুটপাথে হাটে। সেই ফুটপাথ যদি হকাররা দখল করে রাখে তাহলে সাধারণ মানুষ হেঁটে চলাচল করবে কীভাবে? যারা নেতৃত্ব দেন তাদেরও সে বিষয়টি অনুধাবন করতে হবে। হকারদের জীবিকা নির্বাহের বিষয় মাথায় রেখেই ফুটপাথ হকারমুক্ত করতে আমি খুব শিগগিরই ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

বাংলাদেশ প্রতিদিন : এই নির্বাচনে আপনার ইশতেহার কতটুকু বাস্তবায়নযোগ্য?

খালেক : আমি ২০০৮ সালের নির্বাচনে আমার দেওয়া ইশতেহার পুরো বাস্তবায়ন করেছিলাম। শুধু সিটি সরকারের বিষয়টি ছাড়া। কারণ, এটা সরকারের নীতিনির্ধারকদের বিষয়। আশা করি এবারও ইশতেহার পুরো বাস্তবায়ন করতে পারব।

বাংলাদেশ প্রতিদিন : পর্যটননগরী গড়তে কতটুকু গুরুত্ব দেবেন?

খালেক : খুলনাকে পর্যটননগরী হিসেবে গড়ে তুলতে আমার অনেক পরিকল্পনা রয়েছে। তবে এ কাজ করতে সময়ের প্রয়োজন। স্টেডিয়ামের পাশে পর্যটন করপোরেশন থেকে একটি ভালোমানের হোটেল করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি পর্যটন করপোরেশন ওখানে একটি ট্রেনিং ইনস্টিটিউশন করবে। আমার যতটুকু সহযোগিতা করা প্রয়োজন সবই করব।

বাংলাদেশ প্রতিদিন : আপনাকে ধন্যবাদ।

তালুকদার আবদুল খালেক : আপনাকেও ধন্যবাদ।

সর্বশেষ খবর