বৃহস্পতিবার, ১৭ মে, ২০১৮ ০০:০০ টা

জামিন পেলেও মুক্তি পাচ্ছেন না

অন্য মামলায় গ্রেফতার রয়েছেন খালেদা জিয়া

আহমেদ আল আমীন

জামিন পেলেও মুক্তি পাচ্ছেন না

হাই কোর্টের পর আপিল বিভাগ থেকেও জামিন পেলেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। তবে কয়েকটি মামলায় গ্রেফতার থাকার কারণে এখনই তিনি কারামুক্তি পাচ্ছেন না। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় পাঁচ বছরের সাজা মাথায় নিয়ে তিন মাস ধরে কারাগারে তিনি। এ মামলায় হাই কোর্ট তাকে চার মাসের জামিন দিয়েছিল, গতকাল আপিল বিভাগ তা বহাল রাখল। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে আপিল বিভাগের চার বিচারপতির বেঞ্চ এ রায় দেয়। আপিল বিভাগ দুদক ও রাষ্ট্রপক্ষের দুটি আপিল খারিজ করেছে। পাশাপাশি সাজা বাতিল চেয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের করা আপিল ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে হাই কোর্টে নিষ্পত্তির নির্দেশ দিয়েছে আপিল বিভাগ। খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা জামিনের শর্ট অর্ডার চাইলেও আপিল বিভাগ তা নাকচ করে। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় হাই কোর্টের জামিনের বিরুদ্ধে দুটি আপিল রায়ের জন্য আপিল বিভাগের কার্যতালিকায় এক নম্বর ক্রমিকে ছিল। সকাল ৯টা ৬ মিনিটে আপিল বিভাগের এজলাসে আসেন প্রধান বিচারপতিসহ চার বিচারপতি। পরে বেঞ্চের পক্ষে প্রধান বিচারপতি রায় ঘোষণা করেন। এ সময় রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট মাহবুবে আলম, দুদকের পক্ষে অ্যাডভোকেট খুরশীদ আলম খান এবং খালেদা জিয়ার পক্ষে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন ও অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন আদালতে উপস্থিত ছিলেন। এদিকে শুনানিতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু প্রমুখ আদালতে উপস্থিত ছিলেন। পরে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে খালেদা জিয়ার আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী বেইল বন্ড (জামিননামা) দাখিলের জন্য সংক্ষিপ্ত আদেশ চেয়ে আদালতে মৌখিক আবেদন করেন। এ সময় আদালত তার সে আবেদন নাকচ করে দেয়। পরে তার আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে জামিননামা দাখিল করেন। এদিকে রায়ের পর ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ সাংবাদিকদের বলেন, খালেদা জিয়ার কারামুক্তিতে কিছুটা বাধা আছে। কারণ সরকার নানা কৌশলে তার মুক্তি বিলম্বিত করার চেষ্টা করবে। নিম্ন আদালতের কতগুলো মামলায় তাকে আসামি দেখানো হয়েছে। সে মামলাগুলোতে তাকে জামিন নিতে হবে। সেই জামিন নিতে যতটুকু সময় লাগে সে সময় পর্যন্ত আমাদের অপেক্ষা করতে হবে। মওদুদ আহমদ বলেন, আমরা খুব দ্রুত করতে চেষ্টা করব। আপিল বিভাগ যেহেতু তার জামিন বহাল রেখেছে, এখন নিম্ন আদালতে জামিন পেতে আর বেশি অসুবিধা হবে না। সুতরাং খুব শিগগিরই আমরা চেষ্টা করব ওই মামলাগুলোতে তার জামিন নিতে। তিনি বলেন, আমাদের তো একটা আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এগুলো সম্পন্ন করতে হবে। সুতরাং সেই জামিনগুলো পাওয়ার পরে খালেদা জিয়া আমাদের মাঝে ফিরে আসবেন এবং খুব শিগগির ফিরে আসবেন। নিম্ন আদালতে কয়েকটি মামলায় খালেদা জিয়াকে গ্রেফতার দেখানোর আদেশের কথা জানিয়ে মওদুদ বলেন, এর ফলে এই মুহূর্তে তো উনি মুক্তি পাবেন না। এগুলো সরকারের কৌশল। একেবারে ভুয়া-ভিত্তিহীন কতগুলো মামলা। এসব মামলার যে অভিযোগ, তাতে তার কোনো ভূমিকা ছিল না। আইনের অপব্যবহার এবং অপপ্রয়োগ করে তাকে আসামি করা হয়েছে, যেন তাকে আরও কিছুদিন জেলখানায় রাখা যায়। খালেদা জিয়ার আপিল নিষ্পত্তির বিষয়ে দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেন, উচ্চতর আদালতের নির্দেশ। এটা অবশ্যই আমাদের নিষ্পত্তি করার পদক্ষেপ নিতে হবে। আদালতের কাছে এটা আমরা নিবেদন করব যে, আমরা আপিল শুনানি শুরু করার জন্য প্রস্তুত আছি। অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমও বলেছেন, দ্রুততম সময়ের মধ্যে রাষ্ট্রপক্ষ হাই কোর্টে আপিল শুনানির জন্য প্রস্তুতি নেবে। হাই কোর্টের দেওয়া চার মাসের জামিন কবে থেকে কার্যকর হবে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, হাই কোর্ট যেদিন তাকে জামিন দিয়েছিল সেদিন থেকে চার মাসের গণনা শুরু হয়েছে। তবে আপিল বিভাগে যে কয়দিন জামিন স্থগিত ছিল চার মাস থেকে তা বাদ যাবে। দুদকের দায়ের করা জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকার পঞ্চম বিশেষ জজ আদালত খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের সাজা দেয়। এ মামলার ছয় আসামির মধ্যে খালেদা জিয়ার বড় ছেলে, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ অন্যদের ১০ বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এ ছাড়া আসামিদের আর্থিক জরিমানা করা হয়। রায়ের বিরুদ্ধে ২০ ফেব্রুয়ারি হাই কোর্টে আপিল করেন বিএনপি চেয়ারপারসনের আইনজীবীরা। শুনানির পর ১২ মার্চ খালেদা জিয়াকে চার মাসের জামিন দেয় হাই কোর্ট।

পরদিন জামিন স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগে আবেদন করে দুদক ও রাষ্ট্রপক্ষ। ১৪ মার্চ শুনানি করে দুদক ও রাষ্ট্রপক্ষকে নিয়মিত লিভ টু আপিল করতে বলে আপিল বিভাগ। ১৯ মার্চ দুদক ও রাষ্ট্রপক্ষকে আপিলের অনুমতি দেয় আপিল বিভাগ। একই সঙ্গে ৮ মে পর্যন্ত জামিন স্থগিত করা হয়। ৮, ৯ ও ১৫ মে আপিল শুনানি শেষে রায়ের দিন ধার্য হয়।

সর্বশেষ খবর