শুক্রবার, ১৮ মে, ২০১৮ ০০:০০ টা

জনগণ ভোট দিলে আছি না দিলে নাই : প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

জনগণ ভোট দিলে আছি না দিলে নাই : প্রধানমন্ত্রী

জনগণ ভোট দিলে আছি, না দিলে নাই বলে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমাদের সরকারের সময় ছয় হাজারের মতো স্থানীয় সরকার নির্বাচন হয়েছে। একটা নির্বাচন নিয়েও কেউ প্রশ্ন তুলতে পারেনি। কারণ, আমরা সেখানে হস্তক্ষেপ করিনি। করবও না। জনগণের এটা অধিকার। দেশের সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক ধারা যেন কেউ নষ্ট না করতে পারে সেটাই আমরা চাই। গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের       দ্বিবার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, বিএনপিই নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। এ সময় ঢাকা-১০ এবং মাগুরা উপনির্বাচনের কথা স্মরণ করিয়ে বলেন, যারা জনগণের ভোট নিয়ে ছিনিমিনি খেলে তাদের মুখে গণতন্ত্রের কথা মানায় না। তারা ভোট কারচুপি করে, ভুয়া ভোটার বানায়, তারা আবার নির্বাচনী গণতন্ত্র নিয়ে কথা বলে। তারা যখন ভোটে পারে না, তখন ষড়যন্ত্র খোঁজে। নিজেকে সাংবাদিক পরিবারের সদস্য উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট আমি করে দিয়েছি। এ সময় সাংবাদিক, শিল্পী, সাহিত্যিকদের জন্য আবাসনের কথা বলেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের উন্নয়ন প্রকল্পের ৯০ শতাংশ আমরা নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়ন করছি। গণতন্ত্র আছে বলেই দেশ এভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। পদ্মা সেতু নিয়ে কিছু সংবাদপত্র উল্টাপাল্টা লিখেছে, তবে তা প্রমাণ হয়নি। তাদের এখন কী করা উচিত চিন্তা করেন। এটা কী সংবাদপত্রের স্বাধীনতা? অভিযোগ তুললেও দুর্নীতির বিষয়টি বিশ্বব্যাংক প্রমাণ করতে পারেনি। কানাডার ফেডারেল আদালত দুর্নীতির বিষয়টি বানোয়াট বলে ঘোষণা দিয়েছে। তিনি বলেন, আমি চ্যালেঞ্জ দিয়েছিলাম, সেটিই এখন প্রমাণিত হয়েছে। কিন্তু আমাদের দেশে একটি শ্রেণি আছে, যারা দল গঠন করতে, ভোট করতে ভয় পায়, জনগণকে ভয় পায়। যদি ইমার্জেন্সি কিছু আসে, তাহলে পতাকা পায়।

শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগের সভানেত্রী হয়ে বাংলাদেশে আসার পর আজ ৩৭ বছর পূর্ণ হলো। তবে দুঃখের কথা, আমি কখনো প্রেসের কাছ থেকে খুব বেশি সহযোগিতা পাইনি। সব সময় একটা বৈরিতা নিয়েই আমাকে এগোতে হয়েছে। সমালোচনার মুখোমুখি হয়েই আমাকে এগোতে হয়েছে। আমি সেগুলো নিয়ে কখনো মাথা ঘামাইনি। আমি জানি, আমি কী কাজ করছি। ন্যায় এবং সত্যের পথে থাকলে, সৎ পথে থাকলে ফলাফল পাওয়া যায়। সরকারের সমালোচনা করার মনোভাব পরিহার করা উচিত জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা সমুদ্র বিজয় করেছি, আকাশ বিজয় করেছি। স্যাটেলাইট উেক্ষপণের মাধ্যমে আমরা বিশ্বে মর্যাদার আসনে উন্নীত হয়েছি। আমাদের উন্নয়নের পরিকল্পনা একেবারে তৃণমূল থেকে করছি, যাতে সব পর্যায়ে উন্নয়ন ঘটে। আমরা কারও কাছে দয়া-দাক্ষিণ্য চাই না। এটুকু দাবি, আমরা যদি ভালো কাজ করি, সেটা যেন ভালো করে প্রচার করা হয়। আমার স্বার্থে না, দলের স্বার্থে না, দেশের স্বার্থে এটা করবেন। প্রস্তাবিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে আতঙ্কিত না হওয়ার জন্য সাংবাদিকদের প্রতি পরামর্শ দিয়ে সরকার প্রধান বলেন, সাইবার ক্রাইম নীতিমালা করছি, ক্রাইম রোধ করার জন্য। এতে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। অনলাইন গণমাধ্যম নীতিমালা হওয়া উচিত বলেও মনে করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, আমরা সাধ্যমতো সাংবাদিকদের সাহায্য করে থাকি। আমরা ১২ হাজারের বেশি সাংবাদিককে প্রশিক্ষণ দিয়েছি। আমরা ৯টি ভাষা দিয়ে অ্যাপ তৈরি করেছি। বিভিন্ন ভাষা শেখা সাংবাদিকদের দায়িত্ব। বিএফইউজে সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুলের সভাপতিত্বে এবং মহাসচিব ওমর ফারুকের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী, তথ্য প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম। বিএফইউজেভুক্ত ১০টি সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতিদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন আবু জাফর সূর্য, নাজিমুদ্দীন শ্যামল, কাজী শাহেদ, জায়েদ হোসেন, আতাউল করিম খোকন, রাশেদুল ইসলাম বিপ্লব, আমজাদ হোসেন মিন্টু, আবদুস সালাম, সাজেদ রহমান ও আবু তাহের। প্রতিনিধি সম্মেলনের দ্বিতীয় পর্বে কর্ম অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। এতে সারা দেশের সাংবাদিক ইউনিয়নগুলোর প্রতিনিধিরা যোগ দেন।

যুদ্ধাপরাধীর বিচারের সাক্ষীদের অত্যাচার করলে সর্বোচ্চ শাস্তি : যুদ্ধাপরাধীদের বিচার যে কোনো মূল্যে চলবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে যারা সাক্ষ্য দিয়েছেন, তাদের ওপরও অনেক সময় অত্যাচার হয়েছে। যদি কেউ সাক্ষীদের নির্যাতন বা অত্যাচার করে তাহলে তারাও যুদ্ধাপরাধী হিসেবে বিচারের সম্মুখীন হবে এবং তাদের ক্যাপিটাল পানিশমেন্ট হবে। এ পথে কেউ বাধা হয়ে দাঁড়ালে তা বরদাস্ত করা হবে না। শেখ হাসিনার ৩৮তম স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে গতকাল সকালে গণভবনে দলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।

সংগঠনকে শক্তিশালী করার তাগিদ দিয়ে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, একটা কথা মনে রাখতে হবে, সংগঠন যদি শক্তিশালী হয়, সংগঠনে যদি ঐক্য থাকে আর এই সংগঠন যদি জনগণের পাশে থেকে জনমত সৃষ্টি করতে পারে তখনই কোনো কিছু অর্জন করা সম্ভব হয়, যা আমরা বারবার প্রমাণ করেছি। তিনি বলেন, ৩৭ বছর হয়ে গেছে এ দলের সভানেত্রী হিসেবে। আওয়ামী লীগকে মনে হয় নতুন নেতৃত্বের কথা চিন্তা করতে হবে। তিনি সততার সঙ্গে রাজনীতি করার এবং পাওয়া না পাওয়ার হিসাব না মেলাতে দলীয় নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, কতটুকু দিতে পারলাম, কতটুকু করব সেটাই বড় কথা।  প্রধানমন্ত্রী ৩৭ বছর আগের ঝঞ্ঝা বিক্ষুব্ধ এই দিনে তার স্বদেশে ফিরে আসার স্মৃতি রোমন্থন করে বারবারই আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। তিনি বলেন, সেই দিন প্রচণ্ড ঝড়-বৃষ্টির মধ্যেই তাকে বরণ করে নেওয়ার জন্য মানুষের যে ঢল দেখেছেন, মানুষের যে ভালোবাসা পেয়েছেন তা তাকে এখনো আপ্লুত করে। মা-বাবা-ভাই, পরিজনদের হারিয়ে বাংলার মানুষের কাছ থেকে পাওয়া ভালোবাসাই তাকে চলার পথ দেখিয়েছিল উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাদের আশ্রয়েই আমার রাজনৈতিক জীবনের শুরু। প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে ক্ষমতা ক্যান্টনমেন্টে চলে গেছে তা জনগণের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া এবং দেশের গণতন্ত্রায়ন ও নিরন্ন দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানোই ছিল তার রাজনীতির লক্ষ্য। ছাত্র রাজনীতি করলেও আওয়ামী লীগের মতো সংগঠনের দায়িত্ব নেওয়াটা একটা বিরাট চ্যালেঞ্জ ছিল বলে মন্তব্য করেন তিনি। এ সময় দলের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, মোজাফফর হোসেন পল্টু, প্রেসিডিয়াম সদস্য মতিয়া চৌধুরী, সাহারা খাতুন, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, কাজী জাফরউল্লাহ, নুরুল ইসলাম নাহিদ, আবদুল মতিন খসরু, সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, যুগ্ম সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমানসহ দলের কেন্দ্রীয় ও সহযোগী সংগঠনের শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

 প্রথমে আওয়ামী লীগ এবং পরে একে একে প্রধানমন্ত্রীকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানায় বিভিন্ন সহযোগী সংগঠন। এ ছাড়া আওয়ামী লীগ ও বিভিন্ন সহযোগী সংগঠন যথাযোগ্য মর্যাদায় শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস পালন করে এবং ধানমন্ডি ৩২ নম্বর প্রাঙ্গণে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে।

সর্বশেষ খবর