শিরোনাম
শুক্রবার, ১৮ মে, ২০১৮ ০০:০০ টা

রমজানের শুরুতেই বাড়তি দামের অস্বস্তিতে ক্রেতা

নিজস্ব প্রতিবেদক

আজ শুরু হলো পবিত্র মাহে রমজান। এরই মধ্যে কাঁচাবাজার ধরাছোঁয়ার বাইরে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়েই চলেছে। অস্বস্তিতে ক্রেতারা। বিষয়টি দেখার যেন কেউ নেই। কাঁচাবাজারে প্রতিটি পণ্যেই বেশি দাম গুনতে হচ্ছে ক্রেতাদের। কোনো কোনো পণ্যের দাম আন্তর্জাতিক বাজারে কমলেও উল্টো চিত্র বাংলাদেশে। সয়াবিন তেলের আন্তর্জাতিক বাজার দর কমে যাওয়ায় খুচরা বিক্রেতাদের মূল্যছাড় দিয়েছে বিপণনকারী কোম্পানিগুলো। এতে ক্রেতাদের কোনো লাভ হয়নি। উল্টো লোকসানই গুনতে হচ্ছে। একই অবস্থা লবণেও। পিয়াজ ১৫-২০, রসুন ২০, আদা ২০ ও চিনির দর কেজিতে ৫-৭ টাকা বেড়েছে। সবজি, মাছ ও মুরগির দাম বেড়েই চলেছে। ৫০ টাকার বেগুন কিনতে হচ্ছে ৯০-১০০ টাকায়। ২০০ টাকার ফার্মের মুরগি কিনতে হচ্ছে (কক) ৩০০ টাকায়। তাজা মাছের দামও প্রায় দ্বিগুণ। বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে জানানো হয়, বিশ্ববাজারে অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর প্রান্তিকে চিনির গড় দাম ছিল টনপ্রতি ৩২০ ডলার, যা মার্চে ২৮০ ডলারে নেমে আসে। এপ্রিলে  চিনির দর আরও কমে প্রতি টন ২৭০ ডলারে এসেছে। দেশের বাজারে গত কয়েক মাস প্রতি কেজি চিনি ৫৪-৫৫ টাকা ছিল। চলতি মাসের শুরুতে পাইকারি বাজারে সরবরাহে কিছুটা টান পড়ায় দাম কেজিতে প্রায় ৫ টাকা বেড়ে যায়। এখন খুচরা বাজারে প্রতি কেজি চিনি ৫৮-৬২ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। বাজারে চিনির দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে চিনি ও খাদ্যশিল্প করপোরেশন (বিএসএফআই) প্রায় ১ লাখ টন চিনি আমদানি করেছে। যদিও প্রতিষ্ঠানটি চিনির খুচরা দর নির্ধারণ করেছে কেজিপ্রতি ৬০ টাকা। ফলে বাজারে প্রভাব পড়ছে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, জুলাই থেকে মার্চ পর্যন্ত নয় মাসে দেশে চিনি আমদানি হয়েছে ১৭ লাখ ১৯ হাজার টন। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে পণ্যটির বার্ষিক চাহিদা ১৬ লাখ টন। বিশ্বব্যাংকের হিসাবে আন্তর্জাতিক বাজারে অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিকে প্রতি টন সয়াবিন তেলের দাম ছিল ৮৭১ ডলার, যা এপ্রিলে ৮৩০ ডলারে নেমেছে। জানা গেছে, প্রতি ২০ লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল কিনলে সঙ্গে ২ লিটার বিনামূল্যে দিচ্ছে কোম্পানিগুলো। এতে একটি কোম্পানির তেলের ৫ লিটারের বোতলের দর পড়ছে ৪৮৩ টাকা, যার সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য (এমআরপি) ৫৪০ টাকা। আরেকটি কোম্পানির তেলের এমআরপি ৫৫০ টাকা, যা খুচরা বিক্রেতারা কিনতে পারেন ৫০৭ টাকায়। এতে ৫ লিটারের একটি বোতলে ৪৩ থেকে ৫৭ টাকা মুনাফার সুযোগ পাচ্ছেন খুচরা বিক্রেতারা।

প্রতি কেজি লবণ কোম্পানিভেদে ২৬-২৭ টাকা দরে বিক্রি করা হচ্ছে খুচরা বিক্রেতাদের কাছে। যদিও লবণের এমআরপি ৩৬-৩৮ টাকা। ফলে লবণে খুচরা বিক্রেতারা কেজিপ্রতি ১০ টাকা মুনাফা করার সুযোগ পাচ্ছেন। কিন্তু কোনো কোম্পানি ভোক্তার জন্য মূল্য কমাচ্ছে না। গতকাল রাজধানীর কয়েকটি কাঁচাবাজারে সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, তালিকায় টানানো ভারতীয় পিয়াজের খুচরা মূল্য কেজিপ্রতি ২২-২৪ টাকা। কিন্তু কয়েকটি বাজারে ভারতীয় পিয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৪০-৪৫ টাকা কেজি দরে। এ ছাড়া দেশি পিয়াজ ৫০-৫৫ টাকা কেজি বিক্রি করছেন বিক্রেতারা। গত মাসে ভারতে প্রতি কেজির দর ছিল মাত্র ৬ রুপি, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ৮ টাকার কম। সেই থেকে এখন পর্যন্ত দামে তেমন কোনো হেরফের হয়নি। কিন্তু বাংলাদেশের বাজারে দেশি পিয়াজের সঙ্গে ভারতীয় পিয়াজের দরও বেড়েছে। রোজার বাজারে কেনাবেচা শুরু হওয়ার এক সপ্তাহ আগে দেশি পিয়াজের দর ছিল কেজিপ্রতি ৩০ টাকা। আর ভারতীয় পিয়াজ ২৫-৩০ টাকা। পিয়াজের আমদানি ও সরবরাহে কোনো ঘাটতি নেই। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, দেশে পিয়াজের চাহিদা প্রায় ২৪ লাখ টন। দেশে উৎপাদন হয় ১৮-২০ লাখ টন। চলতি অর্থবছরের নয় মাসে দেশে ৬ লাখ ৮৬ হাজার টন পিয়াজ আমদানি হয়েছে। এখন দেশেও ভরা মৌসুম চলছে। এ সময়ই হঠাৎ পিয়াজের দাম বেড়ে গেল! ঢাকার বাজারে রসুন ও আদার দর কেজিতে ২০ টাকা বেড়েছে। রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে খুচরা দোকানে প্রতি কেজি চীনা রসুন বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকা দরে, যা কিছুদিন আগেও ১০০ টাকা ছিল। অন্যদিকে ৬০ টাকার দেশি রসুন বিক্রি হচ্ছে ৮০-৯০ টাকা দরে। পিয়াজের মতো রসুনেরও এখন ভরা মৌসুম। অন্যদিকে চীনের বাজারে রসুনের দর কমেছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, বর্তমানে ১ টন রসুনের দর ৭১৮ মার্কিন ডলার, যা এক মাস আগের তুলনায় ৭ দশমিক ৪৯ শতাংশ কম। বাজারে আদার দাম কেজিতে প্রায় ২০ টাকা বেড়েছে। বিক্রেতারা ১ কেজি চীনা আদা ১২০ ও দেশি আদা ১৫০ টাকা দরে বিক্রি করছেন। রোজার কেনাবেচা শুরুর আগে আদার দর কেজিপ্রতি ১০০-১২০ টাকা ছিল। এরপর দাম বেড়েছে। বাজারে চাল, ডাল, ছোলা, চিনি, তেল ছেড়েছে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)। সেখানে কিছু কিছু পণ্য বাজারের দামের মতোই বিক্রি হচ্ছে। তবে অনেকেই সুলভ মূল্যে পণ্য পাওয়ার আশায় টিসিবির ট্রাকে ভিড়ও জমাচ্ছেন।

রোজায় বাজার তদারক করবে ডিএসসিসি : রমজান মাসে পণ্যের দাম স্থিতিশীল ও মানুষের ক্ষমতার মধ্যে রাখতে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) এলাকার পাঁচটি বাজার তদারকের ঘোষণা দিয়েছেন মেয়র সাঈদ খোকন। গতকাল রাজধানীর হাতিরপুল কাঁচাবাজার পরিদর্শনে গিয়ে তিনি এ ঘোষণা দেন। সাঈদ খোকন বলেন, ‘সংযমের মাসে নগরবাসী যাতে দ্রব্যমূল্য নিয়ে হয়রানির মধ্যে না পড়েন, সেজন্য সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে পাঁচটি কাঁচাবাজারে মনিটরিং করা হবে। এ ছাড়া রোজার মাসে র‌্যাব, ডিএমপি, ঢাকা জেলা প্রশাসনের পর্যবেক্ষক দল মাঠে থাকবে।’ মেয়র আসার আগেই কৃষি বিপণন অধিদফতরের বরাত দিয়ে হাতিরপুল বাজারে একটি মূল্য তালিকা প্রদর্শন করে ডিএসসিসি। তবে কিছু কিছু পণ্যের ক্ষেত্রে তালিকায় দেওয়া দাম রাখা হচ্ছে না বলে কয়েকজন ক্রেতা সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেন। মো. রাশেদ মিয়া নামের এক ক্রেতা অভিযোগ করেন, ‘তালিকায় ব্রয়লার মুরগির সর্বোচ্চ মূল্য প্রতি কেজি ১৪৭ টাকা লেখা থাকলেও ১৬৫ টাকার কমে পাওয়া যাচ্ছে না। সিটি করপোরেশনের লোকজনের উপস্থিতিতেই এমনটি হচ্ছে। তারা চলে গেলে দাম কত হবে চিন্তা করে দেখুন।’ অভিযোগ নিয়ে মুরগি বিক্রেতা দীন মোহাম্মদের কাছে গেলে তিনি বলেন, ‘ঢাকার কাপ্তান বাজারে ব্রয়লার মুরগির পাইকারি মূল্য পড়েছে প্রতি কেজি ১৪৮ টাকা। এর সঙ্গে পরিবহন খরচ রয়েছে। এসব কারণে আমরা খুচরা মূল্য প্রতি কেজি ১৬৫ টাকা নির্ধারণ করেছি।’ মেয়র আসার পর বিষয়টি তোলা হলে তিনি কয়েকটি পণ্যের দাম বৃদ্ধির কথা স্বীকার করলেও গত রোজার তুলনায় এবার পরিস্থিতি ভালো বলেন।

সর্বশেষ খবর