শুক্রবার, ১৮ মে, ২০১৮ ০০:০০ টা
টিআইবির গবেষণা

সংসদে কোরাম সংকটে অপচয় ১২৫ কোটি টাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক

দশম জাতীয় সংসদের প্রথম চার বছরে প্রতিদিন গড়ে ৩০ মিনিট কোরাম সংকট হয়েছে। এই কোরাম সংকটে অপচয় হয়েছে ১২৫ কোটি ২০ লাখ ৬৯ হাজার ৪৪৫ টাকা। এর মধ্যে চতুর্দশ থেকে অষ্টাদশ অধিবেশন (জানুয়ারি-ডিসেম্বর ২০১৭) পর্যন্ত মোট পাঁচ অধিবেশনে কোরাম সংকটের কারণে প্রতি কার্যদিবসে অপচয় হয়েছে ৩৮ ঘণ্টা ৩ মিনিট। অধিবেশন চলাকালে সংসদের ব্যয় অনুযায়ী অপচয় হওয়া এই সময়ের অর্থমূল্য দাঁড়ায় ৩৭ কোটি ৩৬ লাখ ৯৫ হাজার ১৩৮ টাকা। দশম জাতীয় সংসদের ‘পার্লামেন্ট ওয়াচ’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনে এমন তথ্য তুলে ধরেছে টিআইবি। গতকাল রাজধানীর ধানমন্ডির মাইডাস সেন্টারে টিআইবির কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই প্রতিবেদনটি তুলে ধরা হয়। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, সংসদের প্রধান বিরোধী দল আত্মপরিচয় সংকটে রয়েছে। প্রতিবেদনটি উপস্থাপনের পর টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, বর্তমান সংসদ সুশাসন ও সরকারের জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠায় ব্যর্থ হয়েছে। এ ক্ষেত্রে বিরোধী দলের পাশাপাশি সরকারি দলেরও দায় রয়েছে। আইন প্রণয়নে এমপিদের আগ্রহ কম। তিনি আরও বলেন, বর্তমান সংসদে বিরোধী দল হিসেবে যাদের উপস্থাপন করা হয়েছে, তাদের নিজেদের আত্মপরিচয়ে সংকটের কথা সংসদের শেষ দিকে এসে একাধিকবার তাদের নিজেদের মুখেই শোনা গেছে। যে কারণে দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণে প্রত্যাশিত ভূমিকা পালনে তারা ব্যর্থ হয়েছে। টিআইবির গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, সংসদ অধিবেশনের বিভিন্ন আলোচনা পর্বে সংসদ সদস্যরা অসংসদীয় ভাষা ব্যবহার করেছেন মোট সময়ের ৫ শতাংশ। সদস্যদের ভিতরের প্রতিপক্ষ দল সংসদের বাইরের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে নিয়ে ১৯৫ বার অসংসদীয় ভাষা ব্যবহার করেছে।

 বিশ্বব্যাংক ও সুশীলসমাজের প্রতিনিধিদের নিয়ে অসংসদীয় ভাষা ব্যবহার হয়েছে ২৩ বার। সরকার ও বিরোধী দলের নেতা ও সংসদের বাইরের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে নিয়ে বিভিন্নভাবে কটাক্ষ করা হলেও এ ধরনের আলোচনা বন্ধে স্পিকারের কার্যকর ভূমিকার ঘাটতি দেখা যায়।

প্রতিবেদনে জাতীয় সংসদকে অধিকতর কার্যকর করতে ১৪ দফা সুপারিশ করা হয়েছে। টিআইবির তথ্যানুযায়ী সংসদের ১৪ থেকে ১৮তম অধিবেশন পর্যন্ত মোট কার্যদিবস ছিল ৭৬টি। এ সময়ে ২৬০ ঘণ্টা ৮ মিনিট সংসদ চলেছে। প্রতিদিন গড়ে ৩ ঘণ্টা ২৫ মিনিট সংসদ চলে। এসব অধিবেশনে গড় উপস্থিতি ছিল ৩০৯ জন সদস্যের। যা মোট সদস্যের ৮৮ শতাংশ। সংসদের প্রধান কাজ আইন প্রণয়ন হলেও এ কাজে অধিবেশনের মাত্র ৯ শতাংশ সময় ব্যয় হয়েছে। এ সময়ে ২৪টি সরকারি বিল পাসে প্রতিটিতে গড়ে মাত্র ৩৫ মিনিট সময় লেগেছে। সবচেয়ে বেশি ৬৬ শতাংশ সময় ব্যয় হয়েছে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর ধন্যবাদ প্রস্তাবে। প্রতিবেদনের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, এ সময়ে সংসদ সদস্যদের উপস্থিতি তুলনামূলক বাড়লেও মন্ত্রীদের উপস্থিতি কমেছে। সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ উভয়ের উপস্থিতি বাড়লেও এমপিদের উপস্থিতি উল্লেখযোগ্যভাবে কম ছিল। এ সময় সরকারি ও বিরোধী উভয় দলের সংসদে দেওয়া বক্তব্যে আর্থিক খাতে অনিয়ম ও দুর্নীতির উল্লেখসহ বাজেটে প্রস্তাবিত বিষয়ের ওপর গঠনমূলক আলোচনা ইতিবাচক। সংসদে নারী এমপিদের উপস্থিতি বাড়লেও সংসদীয় কার্যক্রমে তাদের উল্লেখযোগ্য ভূমিকা দেখা যায়নি। আইন প্রণয়নে জনমত যাচাই-বাছাই ও সংশোধনী প্রস্তাবের আলোচনার তুলনামূলকভাবে বিরোধী দল বেশি অংশ নিলেও তাদের মতামতকে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। সংসদে বিরোধী দল নিজেদের ভূমিকা নিয়ে যে বক্তব্য দিয়েছে তাতে তাদের দলীয় আত্মপরিচয় বা অবস্থান সংকটের প্রতিফলন ঘটেছে। এ ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত এইচ এম এরশাদের দায়িত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলা হয়, তাকে বিশেষ দূত হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হলেও কোনো প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়নি। এ-সংক্রান্ত কোনো কাগজপত্র পাওয়া যায়নি। অথচ তার পেছনে প্রতি মাসে রাষ্ট্রের খরচ ৫ লাখ টাকা। তিনি বিশেষ দূত হিসেবে কী দায়িত্ব পালন করছেন তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে প্রতিষ্ঠানটি। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও টিআইবির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান সুলতানা কামাল বলেন, রাষ্ট্রের যে কোনো চুক্তি সম্পর্কে জনগণের জানার অধিকার রয়েছে। কিন্তু অন্য রাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তিগুলো সংসদে উত্থাপন বা জনগণকে জানানোর কোনো উদ্যোগ নেই। গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রকাশের সময় আরও উপস্থিত ছিলেন টিআইবির নির্বাহী ব্যবস্থাপনা উপদেষ্টা ড. সুমাইয়া খায়ের, রিসার্চ ও পলিসি বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, প্রোগ্রাম ম্যানেজার জুলিয়েট রোজেটি। গবেষণা প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি বিভাগের ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার মোরশেদা আক্তার, নিহাররঞ্জন রায় ও অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রোগ্রাম ম্যানেজার অমিত সরকার।

সর্বশেষ খবর