শুক্রবার, ১৮ মে, ২০১৮ ০০:০০ টা

রহমতের বীজ ফসলে ভরে ওঠার সময়

মাওলানা সেলিম হোসাইন আজাদী

রহমতের বীজ ফসলে ভরে ওঠার সময়

বছর ঘুরে অফুরন্ত রহমত হয়ে ফিরে এসেছে মাগফিরাতের মাস মাহে রমজান। হে আল্লাহ! আপনার দরবারে অগণিত শোকরিয়া আমাদের রমজানের নেয়ামতে ধন্য করেছেন বলে। আমাদের কোরআনের সম্পদ দান করেছেন। শুকর আলহামদুলিল্লাহ।

প্রিয় পাঠক! সময় খুব দ্রুত চলে। অলসতা এবং গাফলতিতে ডুবে থাকলে নিশ্চয় আপনি রমজানের নেয়ামত থেকে মাহরুম হবেন। তাই প্রথমেই আপনাকে সতর্ক করতে চাই রসুল (সা.) এর সেই বাণী শুনিয়ে। তিনি বলেছেন, ‘জাহান্নাম তার জন্য অবধারিত, যে রমজান পেয়েও নিজেকে শুধরে নিতে পারেনি।’ হ্যাঁ ভাই, রমজান এসেছে আমাদের শুধরে সুন্দর মানুষ বানাতে। খাঁটি মুমিন হিসেবে আল্লাহর বন্ধুর খাতায় নাম লিখিয়ে নিতে। আমরা যদি সঠিকভাবে সিয়ামব্রত পালন করতে পারি, আশা করি এই এক মাসের সাধনা শেষে আমাদের কালো জীবনেও আলোর ফুল ফুটবে। বন্দেগির খুশবু ছড়াবে গান্দেগি ভরা জীবনে। সেই সুরই ফুটে উঠেছে কোরআনের এই আয়াতে— ‘ইয়া আইয়্যুহাল্লাজিনা আমানু কুতিবা আলাইকুমুসসিয়ামু কামা কুতিবা আলাল্লাজিনা মিন কাবলিকুম লা আল্লাকুম তাত্তাকুন। ওহে তোমরা যারা নিজেদের বিশ্বাসী মনে কর, তোমাদের জন্য সিয়ামব্রত আবশ্যক করে দেওয়া হয়েছে। তোমাদের আগে যারা মুমিন ছিল, তাদের ওপরও আমি সিয়ামব্রত ফরজ করেছি। আশা করা যায়, সিয়ামব্রত তোমাদের ভিতরের জগেক তাকওয়ার জন্য প্রস্তুত করে দেবে।’ (সুরা বাকারাহ : ১৮৩।)

সিয়াম আসে আমার আপনার অন্তর জগত প্রস্তুত করতে। যেন সেখানে খোদাভীতি জায়গা করে নিতে পারে। বান্দার মনে যদি একবার খোদার প্রেম বসে যায়, তবেই সে সফল জীবনের চাবিকাঠি হাতে পাবে। দুনিয়া ও আখিরাতে সব জায়গায় সে হয়ে উঠবে প্রেমিক মানুষ। প্রেমিক বান্দাই আলোকিত মানুষ। মুত্তাকি মানুষ। মুত্তাকি হওয়ার জন্য, আলোকিত মানুষ হওয়ার জন্য আত্মায় তাকওয়ার বীজ রোপণ করতে হয়। আজ প্রথম রোজার সাহরি খাওয়ার মাধ্যমে আত্মায় তাকওয়ার বীজ রোপণ করতে যাচ্ছি। পুরো মাস খোদার প্রেমে ডুবে থেকে এই তাকওয়া বীজের পরিচর্যা করব এক মনে এবং রমজান চলে গেলে, আহা! একদিন তো চলেই যাবে, তখনো খুব যত্নের সঙ্গে এই তাকওয়া-চারার পরিচর্যা চালিয়ে যাব। এভাবেই আস্তে আস্তে আমরা সফল জীবন, মুত্তাকি জীবনের সন্ধান পাব। সন্ধান পাব ‘ইয়া আইয়্যাতুহান্নাফসুল মুতমাইন্না’— হে প্রশান্তিময় আত্মার জগতের প্রেমিক বান্দা তোমাকে সালাম।  সুফি গবেষক হাফেজ আহমাদ উল্লাহ রমজান সম্পর্কে একটি দারুণ থিওরি দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘রমজানের শুরুতে আল্লাহপাক তোমাকে ডেকেছেন ‘ইয়া আইয়্যুহাল্লাজিনা আমানু’ বলে। তুমি যদি হে প্রেমিক পুরো জীবন সিয়ামব্রত তথা তাকওয়া চর্চায় নিজেকে ডুবিয়ে রাখ, তাহলে একদিন খোদা তোমাকে ডাক দিবেন ‘ইয়া আইয়্যাতুহান্নাফসুল মুতমাইন্না’ বলে। এই যে, ‘ইয়া আইয়্যুহাল্লাজিনা আমানু’ থেকে ‘ইয়া আইয়্যাতুহান্নাফসুল মুতমাইন্না’ বলে ডাক পাওয়ার সাধনা— এটাই আসলে মুমিনের সিয়ামব্রত পালনের সাধনা।  হায়! সিয়াম আসে সিয়াম যায়, ক’জনই আমরা মুমিন থেকে মুত্তাকি, নফসে আম্মারা থেকে নফসে মুতমাইন্নাওয়ালা প্রেমিক মানুষ হওয়ার সাধনা করি? কজনই বা আত্মায় তাকওয়ার বীজ বপন করে জীবনব্যাপী পরিচর্যা করার মাধ্যমে আলোকিত মানুষ হতে পারি? হে আমার দরদি পাঠক! আজ আপনার আত্মায় যে তাকওয়া বীজ বুনেছি, তা যেন অযত্নে-অবহেলায় আগাছার আক্রমণে নষ্ট হয়ে না যায়। তাহলে সত্যিই আমার আপনার চেয়ে বড় হতভাগা আর কেউই হবে না। বলছিলাম, তাকওয়ার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করার মাস রমজান নিয়ে কথা। অনেকেই মনে করেন, রোজা রাখলেই মানুষ মুত্তাকি হয়ে যাবে। আসলে তা নয়। রোজা মানুষকে মুত্তাকি হওয়ার জন্য প্রস্তত করে মাত্র। রোজা হলো তাকওয়ার ট্রেনিং। যে যত ভালো ট্রেনিং নেবে, সে তত বেশি মুত্তাকি ও প্রেমিক হওয়ার সুযোগ পাবে। আনুষ্ঠানিক রোজা তো মাত্র একমাস, কিন্তু মুমিন থেকে প্রেমিক মুত্তাকি হওয়ার সাধনা বারো মাস। একজীবন এ সাধনা করেই আমাদের পৌঁছতে হবে ‘প্রশান্ত আত্মার প্রশান্তিময় জগতে’। হে আল্লাহ! আপনি আমাদের এই সিয়ামকে কবুল করুন। আপনি আমাদের দয়া করুন।  লেখক : বিশিষ্ট মুফাসসিরে কোরআন ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব।

চেয়ারম্যান : বাংলাদেশ মুফাসসির সোসাইটি, www.selimazadi.com

সর্বশেষ খবর