বৃহস্পতিবার, ২৪ মে, ২০১৮ ০০:০০ টা

মাদকবিরোধী অভিযান চলছেই বন্দুকযুদ্ধে নিহত আরও ৯

চট্টগ্রামে ভুল তথ্যে হাবিবকে নেওয়া হয়েছে, দাবি পরিবারের

প্রতিদিন ডেস্ক

দেশের আট জেলায় পুলিশ ও র‌্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে আরও নয়জন নিহত হয়েছেন। মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর থেকে গতকাল সকালের মধ্যে এ বন্দুকযুদ্ধ হয়। এর মধ্যে কুষ্টিয়ায় দুই এবং জামালপুর, কুমিল্লা, ঠাকুরগাঁও, লালমনিরহাট, রংপুর, ফেনী ও গাইবান্ধায় একজন করে নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া বগুড়ায় পুলিশের গুলিতে আহত হয়ে সন্দেহভাজন একজন হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর— কুষ্টিয়া : কুষ্টিয়ায় মঙ্গলবার বন্দুকযুদ্ধের দুটি ঘটনায় দুজন নিহত হয়েছেন। কুমারখালী থানার ওসি আবদুল খালেক জানান, মঙ্গলবার রাত ১টার দিকে উপজেলার লাহিনীপাড়ায় গড়াই নদীর ব্রিজের নিচে গোলাগুলির মধ্যে ফটিক ওরফে গাফফার (৩৭) নামে একজন নিহত হন। ফটিক কুমারখালী উপজেলার এলেঙ্গীপাড়ার ওসমান গনির ছেলে। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় মাদক আইনে মামলা রয়েছে। অন্য ঘটনাটি ঘটে রাত সাড়ে ৩টার দিকে ভেড়ামারা উপজেলার হাওয়াখালীর মাঠে। সেখানে নিহত লিটন হোসেন (৪৫) ভেড়ামারা পৌরসভার নওদাপাড়ার গোলজার হোসেনের ছেলে। ফেনী : মঙ্গলবার রাতে র‌্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে একজন নিহত হয়েছেন। র‌্যাব-৭ ফেনী ক্যাম্পের কোম্পানি অধিনায়ক স্কোয়াড্রন লিডার শাফায়াত জামিল ফাহিম বলেন, মঙ্গলবার রাত ১২টার দিকে ফেনী শহরের দাউদপুরে বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটে। নিহত মোহাম্মদ ফারুক (৩৫) চট্টগ্রামের চন্দনাইশ এলাকার অলি আহমেদের ছেলে। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় মাদক আইনে একাধিক মামলা রয়েছে। রংপুর: রংপুরে বন্দুকযুদ্ধে একজন নিহত হয়েছেন। মঙ্গলবার রাত আড়াইটার দিকে নগরের হাজীরহাট এলাকার জাফরগঞ্জ সেতুর কাছে এ ঘটনা ঘটে। নিহত শাহীন মিয়া (৪৫) রংপুর সিটি করপোরেশনের ২ নম্বর ওয়ার্ডের মনোহর শুকানচৌকি এলাকার শহিদার ওরফে সিরাজুলের ছেলে। পুলিশ বলছে, শাহীনের নামে কোতোয়ালি ও গঙ্গাচড়া থানায় মাদক ও সড়ক ডাকাতির ১১টি মামলা রয়েছে। কুমিল্লা : মঙ্গলবার বিকালে পুলিশের মাদকবিরোধী অভিযানে গ্রেফতার এক ব্যক্তি মধ্যরাতে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন। রাত ১টার দিকে জেলার আদর্শ সদর উপজেলার চানপুর ব্রিজসংলগ্ন সামারচর এলাকায় ওই ঘটনা ঘটে। নিহত নুরুল ইসলাম ইছাক ওরফে ইছা উপজেলার গাজীপুর গ্রামের আবদুল জলিলের ছেলে। তার বিরুদ্ধে থানায় মাদক আইনে ১১টি মামলা থাকার কথা জানিয়েছে পুলিশ। ঠাকুরগাঁও : পুলিশ সুপার ফারহাত আহমেদ বলেন, গতকাল ভোরে উপজেলার ঠাকুরগাঁও-পীরগঞ্জ সড়কের বনবাড়ী এলাকায় বন্দুকযুদ্ধের ঘটনায় একজন নিহত হয়েছেন। নিহত আলতাফুর (৩৮) বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার বড় পলাশবাড়ী ইউনিয়নের পারুয়া গ্রামের ভেলসা মোহাম্মদের ছেলে। তার বিরুদ্ধে ১৯টি মামলা রয়েছে। পুলিশ সুপার বলেন, মঙ্গলবার রাত ১২টার দিকে পুলিশ আক্তাফুলকে গ্রেফতার করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে বাড়ির পাশের বাঁশঝাড় থেকে ১০০ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার করা হয়। জামালপুর : জামালপুর সদর থানার ওসি নাছিমুল ইসলাম বলেন, মঙ্গলবার রাত ৩টার দিকে পৌর শহরের ছনকান্দা মাদ্রাসা ঘাটে পুলিশের সঙ্গে মাদক চোরাকারবারিদের গোলাগুলির মধ্যে এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। নিহত মোশারফ হোসেন বিদ্যুৎ (৪৮) জামালপুর পৌরসভার বগাবাইদ এলাকার নিজাম উদ্দিনের ছেলে। তার বিরুদ্ধে সদর থানায় ১৬টি মাদকের মামলা রয়েছে। তার স্ত্রী শিল্পীর নামে রয়েছে মাদকের আটটি মামলা। ওসি বলেন, পুলিশ গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সেখানে মাদকবিরোধী অভিযানে গিয়েছিল। এ সময় মাদক ব্যবসায়ীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়েন। পুলিশও পাল্টা গুলি চালালে বিদ্যুৎ নিহত হন। গাইবান্ধা : পলাশবাড়ীতে বন্দুকযুদ্ধে একজন নিহত হয়েছেন। মঙ্গলবার রাত দেড়টার দিকে উপজেলার বিশ্রামগাছী গ্রামে ওই ঘটনা ঘটে। নিহত রাজু মিয়া (৩৬) পলাশবাড়ী উপজেলার বরিশাল ইউনিয়নের রাই গ্রামের জোব্বার মিয়ার ছেলে। তার বিরুদ্ধে সদর ও পলাশবাড়ী থানায় মাদক চোরাচালানসহ বিভিন্ন অভিযোগে ১৮টি মামলা রয়েছে। লালমনিরহাট : সদর উপজেলায় বন্দুকযুদ্ধে একজন নিহত হয়েছেন। পুলিশ সুপার এস এম রশিদুল হক জানান, মঙ্গলবার দিবাগত ভোররাতে সদর উপজেলার কুলাঘাট এলাকার ধরলা চরাঞ্চলে এ ঘটনা ঘটে। নিহত নূরে আলম (৩৫) কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার পানিমাছকুটি (যকুরতল) গ্রামের আজিম উদ্দিনের ছেলে। নুরে আলম দলবল নিয়ে মাদক পাচার করছেন— খবরে পুলিশ শেষ রাতে ধরলার চরাঞ্চলে অভিযানে যায় জানিয়ে রশিদুল হক বলেন, পুলিশ মাদক ব্যবসায়ীদের ধাওয়া দিলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে তাদের গোলাগুলি হয়। তখন নুরে আলম নিহত হন। বগুড়া : বন্দুকযুদ্ধে সন্দেহভাজন এক মাদক চোরাকারবারি গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। আহত শাহীন মিয়া ওরফে হাজী শাহীন (৪২) চকসূত্রাপুর হাড্ডিপট্টি এলাকার আজিজার রহমানের ছেলে। তাকে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

‘ভুল তথ্যে’ ‘বন্দুকযুদ্ধে’ হাবিব নিহত, দাবি পরিবারের : র‌্যাবের মাদকবিরোধী অভিযানে নিহত হাবিবুর রহমান হাবিব ‘ভুল তথ্যের’ শিকার বলে দাবি করেছে তার পরিবার। হাবিব নিহত হওয়ার চার দিন পর গতকাল চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে তার পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হয়, র‌্যাব হাবিব শেখ নামে একজনকে খুঁজছিল, হাবিবুর রহমানকে নয়। কিন্তু ‘সোর্স’ মোশাররফ হোসেন ‘ভুল তথ্য’ দিয়ে হাবিব শেখের পরিবর্তে হাবিবুর রহমানকে ধরিয়ে দেয়। খবর বিডিনিউজের। গত বৃহস্পতিবার মাদকের আখড়া বলে পরিচিত বরিশাল কলোনিতে হাবিবসহ দুজন নিহত হওয়ার পর মোশাররফও কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন। র‌্যাব বলছে, নিহত হাবিব ছিল চিহ্নিত মাদক বিক্রেতা, তার বিরুদ্ধে ১২টি মাদক মামলা ছিল। তার স্ত্রী মর্জিনার বিরুদ্ধেও মামলা রয়েছে দুটি। প্রেস ক্লাবের সংবাদ সম্মেলনে মর্জিনা ছিলেন না। হাবিবের অষ্টম শ্রেণিতে পড়ুয়া মেয়ে সানজিদা রহমান ইভা, ছেলে আবদুল আলী রাব্বি, শাশুড়ি হাসিনা বেগম ও শ্যালিকা লায়লা আক্তার ছিলেন সংবাদ সম্মেলনে। ইভা বলে, ‘ঝাউতলায় যে জমিতে আমরা থাকি সেটা স্থানীয় ইকবাল, সুমন, রাসেদ ও মিন্টু দখলে নিতে চেয়েছিল। আমার বাবা এর প্রতিবাদ করায় নানাভাবে হয়রানি করা হতো। প্রশাসনের (পুলিশ প্রশাসন) সহায়তায় ভয়ভীতি দেখানো হতো এবং একের পর এক মামলা দেওয়া হয়। সব শেষে আমার বাবাকে মেরে ফেলা হয়েছে।’

সর্বশেষ খবর