শুক্রবার, ২৫ মে, ২০১৮ ০০:০০ টা

ঢাকায় নীরব র‌্যাব-পুলিশ

নিজস্ব প্রতিবেদক

মাদক নির্মূলে হঠাৎ করেই বিশেষ তৎপর হয়ে উঠেছে র‌্যাব-পুলিশ। সারা দেশেই শুরু করেছে সাঁড়াশি অভিযান। এসেছে সফলতাও। ৪ মে থেকে মাদকের বড় বড় চালান উদ্ধারসহ মঙ্গলবার পর্যন্ত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন ৩২ জন মাদক ব্যবসায়ী। তবে এক্ষেত্রে রাজধানীর আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে থাকা ঢাকা মহানগর পুলিশ ও র‌্যাবের বিভিন্ন ব্যাটালিয়ন এবং মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের (ডিএনসি) তৎপরতা নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন। তারা বলছেন, প্রধানমন্ত্রী বার বার মাদক নিয়ে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করলেও ঢাকার মাদক সাম্রাজ্যে খুব একটা প্রভাব পড়ছে না। তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান গতকাল রাজধানীর ফার্মগেটে এক অনুষ্ঠানে বলেন, মাদক নির্মূলে একটি তালিকা তৈরি করা হয়েছে। গোয়েন্দা সংস্থার তালিকা অনুযায়ী দেশের সব মাদক ব্যবসায়ীকে আইনের আওতায় আনা হবে। যারা মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত তাদের তালিকা করা হয়েছে। তাদের সবাইকে শাস্তি পেতেই হবে। মাদকের বিষয়ে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। বিভিন্ন পরিসংখ্যান বলছে, সারা দেশে মাদকসেবীর সংখ্যা ৭০ লাখ। কেবল ঢাকাতেই এর সংখ্যা ১০ লাখ। তবে সরকারি হিসাবে সারা দেশে মাদকসেবী ৩০ লাখ। রাজধানীতে মাদকসেবী অন্তত ১০ লাখ। প্রতিদিন কেবল রাজধানীতেই ইয়াবার চাহিদা ৩০ লাখ। আবার সীমান্ত এলাকা থেকে বেশির ভাগ চালান রাজধানীতে ঢোকার পরই দেশের বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ হয়। শিশু অধিকার ফোরাম, পদক্ষেপ মানবিক উন্নয়ন কেন্দ্র ও টিএইচ নেদারল্যান্ডসের যৌথ পরিচালনার এক জরিপে উঠে আসা তথ্যে দেখা গেছে, রাজধানী ঢাকায় সর্বনিম্ন ২২৯টি মাদক স্পট রয়েছে। এর প্রতিটির বিষয়েই আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা অবগত। নাম প্রকাশ না করার শর্তে পুলিশ ও র‌্যাবের একাধিক কর্মকর্তা বলছেন, ঢাকার অনেক শীর্ষ পর্যায়ের মাদক ব্যবসায়ীর সঙ্গে প্রভাবশালী অনেকের ব্যক্তিগত সম্পর্ক রয়েছে। এ কারণে তাদের পাকড়াও করার ব্যাপারে সবুজ সংকেত পাওয়া যাচ্ছে না। তবে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) দেবদাস ভট্টাচার্য এসব বিষয় অস্বীকার করে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘মাদকের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এরই মধ্যে অনেক ইয়াবা উদ্ধার করা হয়েছে। গ্রেফতার হয়েছেন অনেক মাদক ব্যবসায়ী। বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রীর মাদকের বিরুদ্ধে বিশেষ নির্দেশনার পর আমাদের অভিযান আরও বেগবান হয়েছে।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আজও (গতকাল) এ নিয়ে ডিএমপির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিশেষ বৈঠক হয়েছে। শিগগিরই আরও সফলতা দেখা যাবে বলে দাবি করেন তিনি। ডিএমপি সূত্র বলছে, ১০০ জন শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ীর তালিকা করে অভিযান চালানোর পরিকল্পনা রয়েছে। ইয়াবার খুচরা ব্যবসায়ীদের এ তালিকায় রাখা হয়নি। চারটি বা তার বেশি মামলা রয়েছে এমন ইয়াবা ব্যবসায়ীদের এ তালিকায় রাখা হয়েছে। তবে এরই মধ্যে পুলিশের একটি প্রতিবেদনে ঢাকায় শীর্ষ ৪৫ জন মাদক ব্যবসায়ীর নাম উঠে এসেছে। তাদের পৃষ্ঠপোষক হিসেবে পুলিশ কর্মকর্তা থেকে শুরু করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতার নাম রয়েছে। পুলিশের করা সর্বশেষ একটি গোয়েন্দা প্রতিবেদনে এমন ১১ জনের মধ্যে তিনজন পুলিশ কর্মকর্তা ও বাকি আটজন স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর, আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ নেতা। পুলিশ বলছে, অভিযানের পর থেকে মূল হোতারা আত্মগোপনে চলে গেছেন। তাই জোরালো অভিযানের পরও সে অর্থে মাদক ব্যবসায়ীরা ধরা পড়ছেন না। তাদের কেউ কেউ বিদেশে পাড়িও জমিয়েছেন। অনেকে পাড়ি দেওয়ার চেষ্টায় আছেন। বিষয়টি তাদের নজরে এসেছে। এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। টঙ্গীর শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী বাচ্চু মিয়া ওরফে ইয়াবা বাচ্চু। মাদকবিরোধী বিশেষ অভিযান শুরুর পর পালিয়ে বেড়াচ্ছিলেন। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। সোমবার রাতে নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে র‌্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন। ওই রাতে বাচ্চু মিয়াসহ ১১ জন সারা দেশে র‌্যাব-পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন। র‌্যাব-১ এর মেজর ইশতিয়াক জানিয়েছেন, অবস্থা বেগতিক দেখে বাচ্চু প্রাইভেট কারে করে শেরপুর সীমান্ত দিয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন। একাধিক সূত্র বলছে, ঢাকা এবং আশপাশের কয়েকটি জেলার সহস্রাধিক মাদক ব্যবসায়ী ক্রসফায়ারের ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। তবে তাদের অধিকাংশই নিচের স্তরের। ৪ মে থেকে ২০ দিনে মাদকবিরোধী অভিযানে রাজধানীর বাইরে বিভিন্ন জেলায় মারা গেছেন ৩৩ জন। এর মধ্যে র‌্যাবের হাতে মারা গেছেন ১৯ জন। বাকিরা মারা গেছেন পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে। র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান বলেন, ‘দেশের অন্যান্য স্থানের মতো রাজধানীতেও সমানতালে অভিযান চলছে। এরই মধ্যে ঢাকায় কয়েক লাখ পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়েছে। গ্রেফতার হয়েছেন অনেক ইয়াবা ব্যবসায়ী। সর্বশেষ মঙ্গলবার টঙ্গীর কুখ্যাত মাদক ব্যবসায়ী র‌্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে মারা গেছেন। তিনি ঢাকার শীর্ষ তালিকাভুক্তদের অন্যতম একজন।’ সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ক্রসফায়ারের ভয়ে মাদক ব্যবসায়ীরা তাদের আস্তানা ও বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। তালিকাভুক্ত মাদক ব্যবসায়ীরা মোবাইলসহ ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার করছেন না। মাদকবিরোধী অভিযান শুরু হওয়ার পর থেকে বিপুলসংখ্যক আসামি স্বেচ্ছায় ধরা দিয়ে কারাভোগ করছেন। আইনজীবীরা জানিয়েছেন, পলাতক আসামিরা আদালতে আত্মসমর্পণ করে কারাগারে যেতে চাইছেন। কয়েক দিন ধরে আসামিরা সরাসরি আদালতে গিয়ে আত্মসমর্পণ করছেন। কিন্তু তারা জামিনের আবেদনও করছেন না। তারা জেলে থাকতে চান। ডিএমপি সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের চার মাসে মাদকবিরোধী বিশেষ অভিযানে ৭ হাজার ৪০২ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে ৫ হাজার ১০৫টি মামলা করা হয়েছে। গতকালও মাদকবিরোধী বিশেষ অভিযানে মাদক সেবন ও বিক্রির অপরাধে ৭৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর