শুক্রবার, ২৫ মে, ২০১৮ ০০:০০ টা

চলছে মাদকবিরোধী জিহাদ

২০ দিনে বন্দুকযুদ্ধে নিহত ৬৪

আনিস রহমান

দেশজুড়ে চলছে মাদকবিরোধী অভিযান। সরকার মাদক নির্মূলে কঠোর অবস্থান নিয়েছে। এ বিষয়ে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণ করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। গত ৪ মে থেকে শুরু হওয়া বিশেষ এ অভিযানে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ মাদক ব্যবসা ও পাচারের সঙ্গে জড়িত এ পর্যন্ত ৬৪ জন নিহত হয়েছে। সবচেয়ে বেশি নিহত হয়েছে সীমান্তবর্তী জেলা যশোরে। গ্রেফতার হয়েছে সহস াধিক। বিশেষ এ অভিযানে আতঙ্কিত হয়ে অনেক মাদক ব্যবসায়ী অনেকে ‘গা ঢাকা’ দিয়েছে। তবে এই অভিযানে যারা নিহত হয়েছে তাদের বেশিরভাগই সাধারণ ব্যবসায়ী। প্রভাবশালী ও রাঘব বোয়ালরা রয়েছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। উদ্ধার করা হয়েছে বিভিন্ন ধরনের মাদকের পাশাপাশি বিপুল পরিমাণ ইয়াবা। সর্বশেষ গত বুধবার দিনগত রাত থেকে গতকাল ভোর পর্যন্ত মাদকবিরোধী অভিযানে বন্দুকযুদ্ধে ১২ জন নিহত হয়েছে। নিহতদের মধ্যে ফেনীতে দুজন, কুমিল্লায় পাঁচজন, নারায়ণগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, মাগুরায়, সাতক্ষীরা ও কক্সবাজারে একজন করে মারা যায়।

জানা গেছে, মাদকবিরোধী অভিযানে বন্দুকযুদ্ধে নিহতদের মধ্যে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতা-কর্মীও রয়েছে। গত ২০ মে রাজশাহীর পুঠিয়ায় র‌্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয় শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী লিয়াকত আলী মণ্ডল (৪১) নামে এক যুবলীগ নেতা। তিনি পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বর ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি। গত ২২ মে নেত্রকোনায় পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত মাদক ব্যবসায়ী আমজাদ হোসেন ছাত্রদলের সক্রিয় কর্মী ছিল। জেলা ছাত্রদলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি না থাকায় সে কোনো পদে ছিল না। নেত্রকোনা মডেল থানায় খুন, অস্ত্র, বিস্ফোরক, দ্রুতবিচার, চুরি, মাদকসহ ১৩টি মামলার আসামি ছিল আমজাদ। তবে স্বজনদের দাবি, আমজাদ নিরপরাধ ছিলেন। তার বিরুদ্ধে সবকটি মামলাই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।

র‌্যাব ও পুলিশের পরিসংখ্যানে জানা যায়, ৪ থেকে ২৪ মে পর্যন্ত মাদকবিরোধী অভিযানে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে যশোরে ছয়জন, ফেনীতে ছয়, কুমিল্লায় পাঁচ, চট্টগ্রামে তিন, নারায়ণগঞ্জ ও মাগুরায় দুজন এবং কুষ্টিয়ায়, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, টাঙ্গাইল, ঝিনাইদহ, নরসিংদী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, গাইবান্ধা,  চুয়াডাঙ্গা, ময়মনসিংহ, দিনাজপুর, সাতক্ষীরা, কক্সবাজার, নেত্রকোনা ও গাজীপুরে একজন করে। র‌্যাবের অভিযানে গ্রেফতার হয়েছে ৭১১ জন। জব্দ করা হয়েছে ছয় লাখ আট হাজার ২২৭ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট ও ছয় হাজার ৩২৯ বোতল ফেনসিডিল। এ ছাড়া একই সময়ে র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালিয়ে দুই হাজার ৭৯৫ জনকে গ্রেফতার করে। এর মধ্যে ৪৮৫ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেন।

‘চলো যাই যুদ্ধে মাদকের বিরুদ্ধে’ এই স্লোগানকে সামনে রেখে মাদকবিরোধী সচেতনতামূলক কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছে এলিট ফোর্স র‌্যাব। এর পাশাপাশি মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর মাদকের কুফল নিয়ে স্কুলে স্কুলে ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক-শিক্ষিকা ও অভিভাবকদের নিয়ে সভা-সেমিনার, দেয়াল লিখনসহ নানা কর্মসূচি পালন করছে। পুলিশও প্রস্তুতি নিয়ে মাঠে নেমেছে মাদক ব্যবসায়ী ও মাদকসেবীদের বিরুদ্ধে।

এ বিষয়ে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান বলেন, র‌্যাব যাত্রা শুরুর পর থেকেই মাদকের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে। তবে বর্তমান প্রেক্ষাপট বিবেচনায় বিশেষ অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। আইন অনুযায়ী মাদক কারবারিদের বিরুদ্ধে যা যা করা যায়, এর সবই করবে র‌্যাব।

আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো সংবাদ, কুমিল্লা : চৌদ্দগ্রামে পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ বাবুল প্রকাশ ওরফে লম্বা বাবুল (৩৫) এবং সদর দক্ষিণে রাজিব (২৬) নিহত হয়েছে। রাত ১টার দিকে চৌদ্দগ্রাম উপজেলাধীন ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক-সংলগ্ন আমানগণ্ডা সলাকান্দা নতুন রাস্তার মাথায় এবং রাত সোয়া ২টার দিকে সদর দক্ষিণ উপজেলার চৌয়ারা-সংলগ্ন ঢাকা-চট্টগ্রাাম পুুরাতন ট্যাংক রোডের গোয়ালমথন এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। বাবুল চৌদ্দগ্রাম উপজেলার বৈদ্দেরখিল গ্রামের হাফেজ আহাম্মদের ছেলে এবং রাজিব সদর দক্ষিণ উপজেলার কোটবাড়ি-সংলগ্ন চাঙ্গিনী গ্রামের মৃত শাহ আলমের ছেলে। পুলিশ দাবি করেছে, উভয়েই তালিকাভুক্ত মাদক ব্যবসায়ী। কুমিল্লা সদরের সীমান্তবর্তী এলাকা বিবির বাজারের পাশে অরণ্যপুরে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী শরীফ (২৬) ও পিয়ার আলী (২৮) নিহত হয়। সদরের টিক্কারচর ব্রিজ এলাকায় বন্দুকযুদ্ধে নুরুল ইসলাম ইছা নামে আরেক মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়।

ফেনী : ফুলগাজীতে নিহত হয়েছে দুই যুবক। পুলিশের দাবি, এরা মাদক ব্যবসায়ী। অন্যদিকে পরিবারের দাবি, তাদের বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে টাকা দাবি করা হয়।

মাগুরা : বন্দুকযুদ্ধে পারনান্দুয়ালী হাউজিং প্রজেক্ট এলাকায় আয়ুব হোসেন (৪৮) ও মিজানুর রহমান কালু (৪৫) নামে দুই মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছে।

সিদ্ধিরগঞ্জ : নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে সেলিম ওরফে ফেন্সি সেলিম (৩২) নিহত হয়েছে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া : আখাউড়ায় পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে আমির খাঁ (৪০) নামে এক ব্যক্তি নিহত হয়েছে। পুলিশের দাবি, নিহত আমির জেলার শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী। তার বিরুদ্ধে ৯টি মাদক ও একটি হত্যাসহ মোট ১২টি মামলা রয়েছে।

সাতক্ষীরা : কালিগঞ্জ উপজেলার চৌবাড়িয়ায় আবদুল আজিজ (৪০) নামে এক মাদক ব্যবসায়ীর গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করা হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। পুলিশ জানায়, গতকাল ভোর ৫টার দিকে উপজেলার চৌবাড়িয়া পাকা রাস্তার পাশ থেকে ওই ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার করে কালিগঞ্জ থানা পুলিশ।

কক্সবাজার : শহরে মাদক মামলার এক আসামির গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আফরুজুল হক টুটুল জানান, স্থানীয়দের কাছে খবর পেয়ে গতকাল সকাল ৮টার দিকে কলাতলী এলাকা থেকে লাশটি তারা উদ্ধার করেন। নিহত মোহাম্মদ হাসান (৩৬) কলাতলীর আদর্শগ্রাম এলাকার খুইল্ল্যা মিয়ার ছেলে।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর