শুক্রবার, ২৫ মে, ২০১৮ ০০:০০ টা

রোহিঙ্গা শিশুর ভবিষ্যৎ নিয়ে বিশ্বকে ভাবতে হবে : প্রিয়াঙ্কা

প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ

নিজস্ব প্রতিবেদক

রোহিঙ্গা শিশুর ভবিষ্যৎ নিয়ে বিশ্বকে ভাবতে হবে : প্রিয়াঙ্কা

ভারতের জনপ্রিয় অভিনেত্রী প্রিয়াঙ্কা চোপড়া গতকাল গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এ সময় বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ কন্যা শেখ রেহানা উপস্থিত ছিলেন —বাংলাদেশ প্রতিদিন

রোহিঙ্গা শিশুদের ভবিষ্যৎ নিয়ে বিশ্বকে ভাবার আহ্বান জানিয়েছেন ইউনিসেফের শুভেচ্ছা দূত এবং ভারতীয় অভিনেত্রী প্রিয়াঙ্কা চোপড়া। চার দিনের সফর শেষে গতকাল সন্ধ্যায় রাজধানীর একটি হোটেলে এক সংবাদ সম্মেলনে এই আহ্বান জানান তিনি।

এ সময় তিনি বলেন, রোহিঙ্গা শিশুরা একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যতের দাবিদার।

সংবাদ সম্মেলনে প্রিয়াঙ্কা বলেন, আমার মনে হয় পৃথিবীর প্রতিটি শিশুরই একটি সুন্দর ভবিষ্যৎ প্রাপ্য। যাতে তারা মানবতার যাত্রায় অংশগ্রহণ করতে পারে। প্রিয়াঙ্কা বলেন, ছয় মাস আগেও ইউনিসেফের প্রতিনিধি দল রোহিঙ্গা শিবিরগুলো পরিদর্শন করার সময় শিশুদের ছবি আঁকতে বললে তারা রকেট, বোমা, বন্দুক, গুলি এগুলোর ছবি এঁকেছে। এখন তারা বাংলাদেশে এসে কিছু বেসিক বিষয় যেমন অঙ্ক, ইংরেজি বিষয়ে শিক্ষা পাচ্ছে। এই শিক্ষা থেকেই তাদের ছবি আঁকার বিষয় পরিবর্তন হয়ে গেছে। এখন শিবিরের রোহিঙ্গা শিশুরা প্রকৃতির ছবি আঁকছে। এখন তারা সূর্যের ছবি আঁকে, নদীর ছবি আঁকে। ছয় মাসের মধ্যে তাদের মানসিকতা বদলে গেছে, কেউ কি বিশ্বাস করবে? আপনি পৃথিবীর যেখানেই থাকুন না কেন এদের বিষয়ে আপনাকে ভাবতে হবে। এরাই এই পৃথিবীর ভবিষ্যৎ। ভারতীয় এই অভিনেত্রী বলেন, আমি আজকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করেছি। বাংলাদেশকে ধন্যবাদ জানিয়েছি এরকম একটি পরিস্থিতিতে মানবিক দিক বিবেচনা করে দরজা খুলে দেওয়ার জন্য। তিনি (শেখ হাসিনা) আমাকে উপহার দিয়েছেন। তার বাবা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ওপর লেখা বই। বাংলাদেশ সফর সম্পর্কে তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষ আমাকে অনেক ভালোবাসা দিয়েছে। আমি চাই তারা এই শিশুদেরও ভালোবাসুক। ইউনিসেফ শরণার্থী ক্যাম্পগুলোতে খুব ভালো কাজ করছে। এ জন্য আমি তাদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। এ সময় ইউনিসেফ বাংলাদেশের অফিসার ইনচার্জ সীমা সেন গুপ্ত এবং ইউনিসেফের প্রধান কমিউনিকেশন অফিসার জন জেকিস সিমন উপস্থিত ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাত : মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা ১২ লক্ষাধিক রোহিঙ্গার মানবেতর জীবন-যাপনের মধ্যে বাংলাদেশের মাটিতে প্রতিদিন গড়ে ৬০ রোহিঙ্গা শিশুর জন্মের মতো জটিল সংকট নিরসনে বিশ্ববাসীর জোরালো ভূমিকা চান প্রধানমন্ত্রী। জাতিসংঘে ইউনিসেফের শুভেচ্ছা দূত হিসেবে বাংলাদেশ সফররত বলিউড অভিনেত্রী প্রিয়াঙ্কা চোপড়া গণভবনে দেখা করতে এলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজের এ বার্তা দেন তার কাছে। বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর অতিরিক্ত প্রেস সচিব এম নজরুল ইসলাম সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। এ সময় বঙ্গবন্ধুর ছোট মেয়ে শেখ রেহানা উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতে রোহিঙ্গা শিশুদের জন্য সোচ্চার হতে জাতিসংঘের হয়ে বিশ্ববাসীর প্রতি আবেদন রেখে প্রিয়াঙ্কা চোপড়া বলেন, বিশ্বের কোনো শিশুরই যেন রোহিঙ্গা শিশুদের মতো অবস্থা না হয়। এ সময় মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত রোহিঙ্গা শিশুদের আশ্রয় ও শিক্ষার সুযোগ দেওয়ায় ইউনিসেফের হয়ে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান প্রিয়াঙ্কা। তিনি রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনে তার অভিজ্ঞতার কথা এ সময় তুলে ধরেন।

ইউনিসেফের শুভেচ্ছা দূত হিসেবে কক্সবাজারে রোহিঙ্গা আশ্রয় কেন্দ্রগুলো থেকে ফিরে বাংলাদেশে ৪ দিনের সফরের শেষ দিনে গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে নিজের এ বার্তা দেন বলিউড অভিনেত্রী ও শিশু অধিকারে আন্তর্জাতিক খ্যাতিমান কর্মী প্রিয়াঙ্কা চোপড়া। বাংলাদেশে এসে তিনি কক্সবাজারে টেকনাফ উপজেলার বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর রোহিঙ্গা ক্যাম্প ঘুরে দেখেন। গত মঙ্গলবার সকালে উখিয়ার বালুখালী ও জামতলী রোহিঙ্গা ক্যাম্প এবং টেকনাফ রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেন তিনি। পরদিন বুধবার উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেন। প্রধানমন্ত্রীর অতিরিক্ত প্রেস সচিব নজরুল ইসলাম বলেন,  রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে রোহিঙ্গা শিশুদের কথা উল্লেখ করে প্রিয়াঙ্কা চোপড়া বলেছেন, একটা প্রজন্ম হারিয়ে যেতে বসেছে। রোহিঙ্গা শিশুরা যথাযথ শিক্ষা না পাওয়ায় চরমপন্থার দিকে ঝুঁকে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন প্রিয়াঙ্কা। প্রধানমন্ত্রীর অতিরিক্ত প্রেস সচিব বলেন, ‘রোহিঙ্গারা বিপর্যয়ের মধ্যে আছে’ মন্তব্য করে ইউনিসেফের এই শুভেচ্ছা দূত বলেছেন, যারা কর্মক্ষম তাদের কাজ নেই। রোহিঙ্গা ক্যাম্পের শিশুরা শিক্ষার যথাযথ সুযোগ পাচ্ছে না। ‘বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে আশ্রয় দেওয়াকে অভূতপূর্ব’ উল্লেখ করে প্রিয়াঙ্কা বলেছেন, বিশ্বকে বাংলাদেশের কাছ থেক শেখার আছে যে, কীভাবে মানবতার পাশে দাঁড়াতে হয়। নৃশংসতার মুখে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা এই রোহিঙ্গাদের মানবিক কারণে বাংলাদেশে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে বলে প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন।

ক্যাম্পগুলোতে রোহিঙ্গাদের জন্য সব ধরনের সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করা হচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের একার পক্ষে এটা দুরূহ। এ সংক্রান্ত চুক্তি বাস্তবায়নে মিয়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ অব্যাহত রাখার কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। এ সময় প্রিয়াঙ্কা চোপড়া বলেন, ‘এই সমস্যর সমাধান হলো; যেখান থেকে তারা এসেছে, সেখানে ফেরত পাঠানো।’ ভাসানচরে এক লাখ রোহিঙ্গাকে শিগগিরই ফেরত পাঠানোর কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেখানে তাদের জন্য আধুনিক সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

সর্বশেষ খবর