শুক্রবার, ২৫ মে, ২০১৮ ০০:০০ টা

সিয়ামের ঐতিহাসিক আলোচনা

মাওলানা সেলিম হোসাইন আজাদী

সিয়ামের ঐতিহাসিক আলোচনা

আত্মার দাগ মুছে দেয় সিয়াম সাধনা। তাই যুগ যুগ ধরে আল্লাহতায়ালা তার প্রিয় বান্দাদের ওপর সিয়াম ফরজ করেছেন। কামা কুতিবা আলাল্লাজিনা মিন কাবলিকুম— বলে সে কথাই বুঝিয়েছেন আল্লাহতায়ালা। প্রথম মানুষ ও প্রথম নবী হজরত আদম (আ.) থেকে শুরু করে শেষ নবী ও শেষ পূর্ণ

মানুষ মুহাম্মদ (সা.) পর্যন্ত প্রতিটি আসমানি ধর্মের শরিয়তে রোজা ছিল ফরজ। তাই তো আমরা দেখি ইহুদি এবং খ্রিস্টান বন্ধুদের ধর্মেও সিয়ামের বিধান রয়েছে ফরজ হিসেবেই। শুধু তাই নয়, পৃথিবীর ইতিহাসে যতগুলো ধর্ম পরিচিতি পেয়েছে, যতজন ধর্মগুরু প্রভু সাধনার কথা বলেছেন, তারা সবাই আত্মার দাগ মোছার জন্য উপবাসব্রতের কথাই বলেছেন। হিন্দু, বৌদ্ধ, জৈন, কনফুসিয়াজমসহ সব ধর্মেই উপবাসের প্রথা আছে গুরুত্বের সঙ্গে। উম্মতে মুহাম্মাদির ওপর রোজা ফরজ হয়েছে দ্বিতীয় হিজরি সনে। কিন্তু এর আগে কি নবীজি (সা.) সিয়াম ব্রত করতেন? আত্মার কালি মোছার জন্য সিয়াম সাধনা করেছেন কি? চলুন জেনে নিই সিয়ামের ইতিহাস। মাশাহিরে হক গ্রন্থকার বলেন, অধিকাংশ আলেম খুব জোর দিয়েই বলেছেন, রমজান মাসের রোজা ফরজ হওয়ার আগেও নবীজি (সা.) এবং সাহাবিদের মাঝে সিয়ামের চর্চা ছিল। তখন মহররম মাসের ১০ তারিখের সিয়াম এবং প্রতি মাসের ১৩, ১৪, ১৫ তারিখ রোজা রাখা উম্মতে মুহাম্মাদির জন্য ফরজ ছিল। এভাবেই কেটে যায় পনেরোটি বছর। দ্বিতীয় হিজরি সনের শাবান মাসের মাঝামাঝি সময় কেবলা পরিবর্তনের বিধান প্রবর্তিত হয়। এর ১০ দিন পর নাজিল হয় সেই ঐতিহাসিক আত্মার কালি মোছার ইরেজার। ছোটবেলায় যেমন খাতায় ভুল হলে আমরা ইরেজার দিয়ে মুছে ফেলতাম, এই বড় বেলার জীবনে এসে আমরা যেন জীবন খাতার ভুলগুলো সিয়াম নামক ইরেজার দিয়ে মুছে ফেলতে পারি সেজন্য আল্লাহতায়ালা নাজিল করলেন, ইয়া আইয়ুহাল্লাজিনা আমানু কুতিবা আলাইকুমুস সিয়াম। ওহে ইমানদাররা! তোমাদের জীবন খাতার গোনাহ মোছার ইরেজার সিয়াম তোমাদের ওপর ফরজ করা হয়েছে।’ রমজান মাসের রোজা ফরজ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আশুরা ও প্রতি মাসের তিনটি রোজা নফল হয়ে গেল। তখন রোজার নিয়ম ছিল, কেউ চাইলে রোজা রাখতে পারত, আবার কেউ চাইলে রোজার বিনিময়ে কাউকে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা বা খাবার ফিদিয়া দিয়ে দায়মুক্ত হতে পারত। তারপর আল্লাহ বললেন, শুধু অসুস্থ হলেই এভাবে অন্যকে ফিদিয়া দিয়ে দায় সারানো যাবে। নয়তো সবার জন্য রোজা বাধ্যতামূলক। আরেকটি নিয়ম তখন ছিল। কেউ যদি ইফতারের পর ঘুমিয়ে যায়, তাহলে ওই রাতে সে আর কিছু খেতে পারত না। স্ত্রীর সঙ্গে মিশতেও পারত না। এভাবেই না খেয়ে তাকে রোজা রাখতে হতো। অনেক সাহাবিই তখন ক্লান্তির কারণে সন্ধ্যায় ঘুমিয়ে পড়ত আর না খেয়েই রোজা রেখে অসুস্থ হয়ে যেত। কেউ কেউ আবার ঘুম থেকে উঠে স্ত্রীর সঙ্গে মিশে যেত। এসব জেনে আল্লাহ উম্মতে মুহাম্মাদির ওপর দয়া করলেন। তিনি নাজিল করলেন, উহিল্লালাকুম লাইলাতাস সিয়ামির রাফাসু— রাতে তোমাদের জন্য তোমাদের স্ত্রীদের হালাল করা হয়েছে এবং সুবহে সাদিক না হওয়া পর্যন্ত খাওয়া-পড়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।’ রোজার এই পর্যায়ক্রমিক বিধান সূরা বাকারার ১৮৩ আয়াত থেকে ৮৭ আয়াত পর্যন্ত পাওয়া যাবে। আমাদের সবার উচিত আয়াতগুলোর বাংলা অনুবাদ এবং সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা জেনে নেওয়া। আল্লাহ আমাদের সহি সিয়াম পালনের তাওফিক দিন। লেখক : বিশিষ্ট মুফাসসিরে কোরআন ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব।

চেয়ারম্যান : বাংলাদেশ মুফাসসির সোসাইটি

www.selimazadi.com

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর