শিরোনাম
শনিবার, ২৬ মে, ২০১৮ ০০:০০ টা
যোগ্য প্রার্থীর সন্ধানে দুই দল

তালিকা প্রস্তুত করতে বিএনপিতে জরিপ

মাহমুদ আজহার

তালিকা প্রস্তুত করতে বিএনপিতে জরিপ

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যোগ্য প্রার্থীর সন্ধানে ফের তৃণমূলে জরিপ চালাচ্ছে বিএনপি। দলটির সাবেক আমলাদের সমন্বয়ে একটি জরিপ চলছে। অন্যটি চলছে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের তত্ত্বাবধানে। এ ছাড়া আরও একটি জরিপ চলছে বেসরকারি সংস্থার অধীনে। এর আগে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন ঘিরেও অন্তত তিনটি জরিপ চালায় দলটি। সব জরিপের ফলাফলে এগিয়ে থাকা ব্যক্তিকেই ‘যোগ্য প্রার্থী’ হিসেবে বিবেচনায় নেবে বিএনপি। তবে ৩০০ সংসদীয় আসনে তিন স্তরের প্রার্থী বাছাই করা হচ্ছে। দলীয় নির্ভরযোগ্য সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

বিএনপি সূত্র জানায়, সাবেক আমলাদের নেতৃত্বে জরিপে নেতৃত্ব দিচ্ছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ইসমাইল জবিউল্লাহসহ কয়েকজন সাবেক সরকারি কর্মকর্তা। জরিপের নির্ধারিত পদ্ধতি অনুসরণ করেই গোপনীয়তার সঙ্গে এই কার্যক্রম চলছে। এ নিয়ে সম্ভাব্য একাধিক প্রার্থীর সঙ্গেও তারা কথা বলছেন। এলাকার সাধারণ মানুষ ও নেতা-কর্মীদেরও মতামত নেওয়া হচ্ছে। তাছাড়া আন্দোলন-সংগ্রামে কার কতটুটু ভূমিকা, দলের জন্য কার কতটুকু ত্যাগ, মামলা হামলার শিকার কিনা, এলাকায় জনপ্রিয়তা কতটুকু, ক্লিন ইমেজ আছে কি না নানা বিষয়কে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘বিএনপি দেশের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দল। এখানে নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা আছে। যে কোনো নির্বাচনে আমাদের একাধিক প্রার্থীও থাকে। আমরা সেখান থেকে যোগ্য প্রার্থীকেই বেছে নিই। একইভাবে ৩০০ সংসদীয় আসনেও আমাদের নির্বাচন করার মতো সহস্রাধিক প্রার্থী রয়েছে। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে আমরা একাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে চাই। সেখানে যোগ্য প্রার্থীদেরই মনোনয়ন দেওয়া হবে।’

বিএনপি নেতারা আশা করছেন, দুর্নীতির মামলায় সাজা নিয়ে কারাগারে যাওয়া দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া উচ্চ আদালতের আদেশে একাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন। খালেদা জিয়া নির্বাচন করতে পারলে ফেনী-১ ও বগুড়ার একটি আসনসহ মোট ৫টি আসনে অন্য কোনো প্রার্থী রাখবে না বিএনপি। একইভাবে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের জন্যও বগুড়ার একটি আসন রাখা হচ্ছে। এ ছাড়া তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জোবায়দা রহমান সিলেটে এবং প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমান মাগুরা-১ আসন থেকে নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন। তাই এ দুই আসনেও অন্য প্রার্থী না রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। জরিপের ক্ষেত্রে  এ বিষয়গুলো গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। একইভাবে ২০-দলীয় জোটের কে কোথায় কত জনপ্রিয় তাও জরিপে উঠে আসছে। ৩০০ আসনে জরিপ চালালেও এর মধ্যে ৫০টি ২০-দলীয় জোট ও সমঝোতার ভিত্তিতে অন্য দলগুলোকে ছেড়ে দেবে বিএনপি।

তবে এই জরিপে আস্থা নেই বিএনপির তৃণমূলের অনেক নেতার। বেশ কয়েকজন প্রার্থী হতে আগ্রহী বাংলাদেশ প্রতিদিনের কাছে অভিযোগ করেন, একাদশ সংসদ নির্বাচনে কারা প্রার্থী হতে পারেন তার ৮০ ভাগই বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান অবগত। তাছাড়া বিগত আন্দোলনে কার কী ভূমিকা তাও বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বের জানা। তাই আমলাদের মধ্যে যারা জরিপ কাজ করছেন, তারা গুটিকয়েক মানুষের মতামতের ভিত্তিতে একটি সিদ্ধান্ত দিতে পারে না। একটি সংসদীয় আসনে জরিপ করতে হলে তাকে ওই এলাকায় অন্তত মাসখানেক থেকে পুরো রাজনৈতিক চিত্র জেনে প্রার্থীর বিষয়ে সিদ্ধান্ত দিতে হবে। তাছাড়া জরিপ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধেও অর্থ দিয়ে নাম দেওয়ার নজির আছে। সুতরাং রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের আলোকেই প্রার্থী বাছাই করা সমীচীন বলে মনে করেন তারা।

জানা যায়, বিগত আন্দোলন-সংগ্রামে সাবেক মন্ত্রী-এমপি ও স্থানীয় নেতাদের ভূমিকা নিয়ে বিএনপি কেন্দ্রীয়ভাবে একটি  প্রতিবেদন তৈরি করেছে। কোন জেলায় বিএনপির কেন্দ্রীয় কতগুলো কর্মসূচি পালিত হয়েছে, কর্মসূচিতে কে নেতৃত্ব দিয়েছেন— সবই উল্লেখ আছে তাতে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নের ক্ষেত্রে এসব বিষয়ও বিএনপির হাইকমান্ড গুরুত্ব দেবে বলে জানা গেছে।

এদিকে বিভিন্ন জরিপকে ঘিরে বিএনপির সাবেক মন্ত্রী-এমপি ও নেতাদের বড় একটি অংশই ঢাকায় জরিপ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি আন্দোলনে তাদের কোনো ভূমিকা নেই। রমজানে নেতা-কর্মীদেরও পাশে নেই তারা। এমনকি অনেক নেতা নিজ সংসদীয় আসনে ইফতার পার্টি না দিয়ে ঢাকায় বিভিন্ন ইফতার পার্টিতে অংশ নিচ্ছেন। ঢাকায় বিএনপির নীতিনির্ধারকদের পাশাপাশি লন্ডনে অবস্থান নেওয়া বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে এ ব্যাপারে রিপোর্ট করা হয়েছে।

চট্টগ্রাম বিভাগে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, ‘৩০০ সংসদীয় আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী সম্পর্কে দলের হাইকমান্ড অবগত। তারপরও নানাভাবে খোঁজ-খবর নিতে পারে। এতে দোষের কিছু নেই।’ বরিশাল বিভাগীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক আ ক ন কুদ্দুসুর রহমান বলেন, ‘দল যদি বিগত আন্দোলন-সংগ্রামে কার কী ভূমিকা ছিল, দলের জন্য নিবেদিত কিনা, জনপ্রিয়তা কতটুকু তা মূল্যায়ন করে তাহলে অবশ্যই যোগ্যরাই মনোনয়ন পাবে। তবে আমি মনে করি, ওয়ান-ইলেভেনসহ বিগত সময়ে ষড়যন্ত্রকারী কিংবা বেইমানদের মনোনয়ন দেওয়া ঠিক হবে না।’

সর্বশেষ খবর