বৃহস্পতিবার, ৭ জুন, ২০১৮ ০০:০০ টা

জঙ্গিবাদ, মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান চলবে

—— প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস ও মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকবে। আমরা মাদক, জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে চাই। বাংলাদেশের মানুষের শান্তি-নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চাই। গতকাল বিকালে গণভবনে আইনজীবীদের সম্মানে ইফতারপূর্ব সংক্ষিপ্ত বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী ঢাকা আইনজীবী সমিতিসহ বিভিন্ন জেলা বার সমিতিতে আওয়ামী লীগ সমর্থিত আইনজীবীদের জয়ে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, বিজয়ের এ ধারাবাহিকতা যেন অব্যাহত থাকে। আমি বিশ্বাস করি, আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ থাকলে যে কোনো অবস্থা মোকাবিলা করা এবং যে কোনো পরিস্থিতিতে বিজয়ী হওয়া কঠিন কোনো কাজ নয়। কারণ এই আওয়ামী লীগ সংগঠন তৈরি করেছেন আমাদের মহান নেতা জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমান। তার হাতে গড়া এই সংগঠন নিয়েই তিনি বাঙালিকে ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন। জাতিকে স্বাধীনতা উপহার দিয়েছিলেন।

জি-৭-এ যোগ দিতে আজ কানাডার উদ্দেশে ঢাকা ছাড়বেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গ্রুপ-৭-এ যোগদান প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বের সাতটি ধনী দেশ যাকে গ্রুপ সেভেন বলে সেই দেশের নেতারা আমাকে দাওয়াত দিয়েছেন। তারা বাংলাদেশের উন্নয়নের ম্যাজিক জানতে চান। আমরা ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে শুধু আশ্রয়ই দিইনি, তাদের খাওয়ানোর ব্যবস্থা করেছি। এতে সমগ্র আন্তর্জাতিক সংস্থা ও বিভিন্ন দেশ বাংলাদেশের পাশে দাঁড়িয়েছে। আমাদের হাত শক্তিশালী করেছে। সারা বিশ্ব অতীতে কখনই বাংলাদেশের পাশে এমনভাবে দাঁড়ায়নি। মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় অনেক দেশের সমর্থন পেয়েছিলাম, অনেকের পাইনি। কিন্তু এখন সবাই সমর্থন দিয়েছে। আমি সেখানে দেশের উন্নয়নের কথা তুলে ধরব। রোহিঙ্গাদের কথা তুলে ধরব। শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৮১ সালে আওয়ামী লীগ আমাকে সভাপতি নির্বাচিত করে। আমি দেশের প্রতিটি এলাকায় গিয়েছি। ঘুরে বেড়িয়েছি। দীর্ঘ ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে সরকার গঠন করে। যখনই আওয়ামী লীগ সরকার গঠন, করে তখনই মানুষের ভাগ্যের উন্নয়ন হচ্ছে। কারণ আমাদের সব প্রচেষ্টা মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে। শেখ হাসিনা বলেন, আমি ক্ষমতায় ছিলাম না, বিরোধীদলীয় নেতা ছিলাম। তার পরও ইমারজেন্সির সময় আমাকেই প্রথম গ্রেফতার করা হয়। তখন অনেক আইনজীবী আমার পাশে দাঁড়ান। আমার মামলা চলাকালে অনেকেই জেলা থেকে ছুটে এসেছিলেন। সেটাই ছিল আমার শক্তি। তিনি বলেন, সব বাধা অতিক্রম করে আবার গণতন্ত্র ফিরিয়ে এনে ২০০৮ সালে নির্বাচনে আমরা বিজয়ী হই। বাংলাদেশ আজকে স্বল্পোন্নয়ন দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশ হচ্ছে। বাজেট চার গুণ থেকে পাঁচ গুণ বৃদ্ধি করেছি। সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন-ভাতা ১২৩ ভাগ বৃদ্ধি করেছি। আমরা দেশের মানুষের খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করেছি। বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধি করেছি। ঘরে ঘরে আলো জ্বলছে। স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করছি। ব্যাপকহারে বেসরকারি খাত উন্মুক্ত করে দিয়েছি।

শেখ হাসিনা বলেন, যুদ্ধাপরাধের বিচার জাতির পিতা শুরু করেছিলেন। আর তা বন্ধ করেছিলেন মিলিটারি ডিক্টেটর জিয়া। আমরা আবার যুদ্ধাপরাধের বিচার শুরু করেছি। স্বজনহারারা ন্যায়বিচার পেয়েছে, তাদের অধিকার সুরক্ষিত হয়েছে। যুদ্ধাপরাধের বিচার করে আমরা বাংলাদেশকে কলঙ্কমুক্ত করেছি। জাতির পিতার হত্যার বিচার করে বাংলাদেশকে অভিশাপমুক্ত করেছি। একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলার বিচার চলছে। সে বিচারও হবে। বাংলাদেশে কোনো অন্যায়-অবিচার থাকবে না।

স্যাটেলাইট উেক্ষপণে বিএনপির দুঃখ কেন : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ সরকারই বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১-এর মালিক। এটা যারাই ভাড়া নেবে, যেটুকু ভাড়া নেবে, সে সেটুকুরই মালিক হবে। দুই ব্যক্তি তো এর মালিক হতে পারে না। তিনি বলেন, স্যাটেলাইটের মালিকানা নিয়ে যারা প্রশ্ন তোলে তারা অর্বাচীন। দেশের একটি স্যাটেলাইট উেক্ষপণ হলো, দেশে-বিদেশে সব জায়গায় মানুষ খুশিতে উদ্বেলিত। তাহলে বিএনপির কেন দুঃখ?

গতকাল সকালে জাতীয় সংসদ অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে ভিন্ন ভিন্ন সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদ অধিবেশন শুরু হয়। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১-এর মালিকানা নিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বক্তব্য সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন সরকারি দলের বেগম ফজিলাতুন নেসা বাপ্পী। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১-এর পর নতুন কোনো চিন্তাভাবনা আছে কিনা জানতে চান স্বতন্ত্র এমপি রুস্তম আলী ফরাজী।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এর আগে যখন এই অঞ্চলে সাবমেরিন ক্যাবল এসেছে, তখন ভারত, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড নিয়েছে। তখন তারা বিনা পয়সায় দিয়েছে। তৎকালীন বিএনপি সরকার তা নিল না। এভাবে আমাদের বিশ্বের সঙ্গে বিচ্ছিন্ন করে রাখা হলো। তিনি বলেন, আমরা এখন বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ নিয়ে কাজ শুরু করে দিয়েছি। এরপর আমরা বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-৩ নিয়ে কাজ করব। সমুদ্রের তলদেশ থেকে মহাকাশ পর্যন্ত জয় করে বাংলাদেশ এখন উচ্চ আসনে অধিষ্ঠিত।

শেখ হাসিনা বলেন, যাদের দেশের প্রতি, দেশের মানুষের প্রতি ন্যূনতম ভালোবাসা নেই, দেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না, তারাই (বিএনপি) অর্বাচীনের মতো স্যাটেলাইটের মালিকানা নিয়ে প্রশ্ন তোলে। আমরা গত নয় বছরে দেশকে মহাকাশে নিয়ে যেতে পেরেছি। আমরা যেমন সমুদ্রের তলদেশে পৌঁছাতে পেরেছি, তেমন মহাকাশেও পৌঁছাতে পেরেছি। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটে ৪০টি ট্রান্সপন্ডার আছে। বাংলাদেশের প্রয়োজন হবে ২০টি। বাকি ২০টি আমরা ভাড়া দিতে পারব। একটি স্যাটেলাইটের আয়ুষ্কাল ১৫ বছর। তাই আমার বলছি, সার্কভুক্ত সব দেশ, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন, তুর্কিমেনিস্তানসহ কয়েকটি দেশে আমরা বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ ভাড়া দিতে পারব। আমরা টাকা পাব। সুতরাং দুই ব্যক্তি কীভাবে এর মালিক হলো তা আমার বুঝে আসে না। তিনি বলেন, পৃথিবীর অনেক দেশই বহু আগে স্যাটেলাইট উেক্ষপণ করেছে, আমরা পারিনি কেন? শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে সাবমেরিন সংযোগ করে বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করেছে। একমাত্র আওয়ামী লীগ সরকারই ক্ষমতায় এসে নতুন প্রজন্মের জন্য তথ্য-প্রযুক্তির দ্বার উন্মোচন করে দেয়। বর্তমানে যে স্যাটেলাইট উেক্ষপণ হয়েছে, তাতেও বিরাট কাজ হবে। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মুক্তিযুদ্ধের পরই বাংলাদেশকে আত্মমর্যাদাশীল, স্বনির্ভর দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ শুরু করেছিলেন। তারই ধারাবাহিকতায় বঙ্গবন্ধু ১৯৭৫ সালে বেতবুনিয়া ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্র উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের স্যাটেলাইট যোগাযোগের সূচনা করেন। আমাদের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রক্রিয়ায় তথ্য-প্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব আহমেদ জয়ের উদ্যোগে মহাশূন্যে বাংলাদেশের প্রথম স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১ উেক্ষপণের পদক্ষেপ গ্রহণ করি।

স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য ডা. রুস্তম আলী ফরাজীর সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যেহেতু একটি স্যাটেলাইটের মেয়াদ ১৫ বছর, তাই বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ নির্মাণের প্রস্তুতির কাজ ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বিশ্বের সব নতুন প্রযুক্তিই বাংলাদেশ গ্রহণ করে এগিয়ে যাবে। দ্বিতীয় স্যাটেলাইট নিক্ষেপের পর তৃতীয় স্যাটেলাইট প্রস্তুত করা হবে। এভাবে ধারাবাহিকভাবে দেশকে আধুনিক প্রযুক্তির ধারায় এগিয়ে নিয়ে যাব।

নূরজাহান বেগমের লিখিত প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০১৫ সালে বজ্রপাতকে দুর্যোগ হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। বজ্রপাতে জানমালের ক্ষয়ক্ষতি হ্রাসে সারা দেশে ১০ লাখ উঁচু গাছ (যেমন তালগাছ) রোপণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। ইতিমধ্যে লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করে ৩২ লাখের অধিক তালগাছ রোপণ করা হয়েছে। এ কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এ ছাড়া জাতীয় বিল্ডিং কোডে বজ্রপাত নিরোধক দণ্ড স্থাপন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। তিনি বলেন, ব্রিটিশ আমলে ভূমি ব্যবস্থাপনার জন্য মাটিতে স্থাপিত পিলারের প্রাকৃতিক দুর্যোগে ভূমিকা রাখার কোনো বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই।

সর্বশেষ খবর