বৃহস্পতিবার, ৭ জুন, ২০১৮ ০০:০০ টা

হে আল্লাহ! নাজাত চাই

মুফতি আমজাদ হোসাইন হেলালী

হে আল্লাহ! নাজাত চাই

দেখতে দেখতে চলে গেল মাহে রমজানের বিশটি দিন। আর বাকি আছে ৯ কি  ১০ দিন।  রহমত ও মাগফিরাতের দশক শেষ। শুরু হলো নাজাতের

দশক। তবে এর অর্থ এই নয় যে, এখন আর রহমত বা মাগফিরাত পাওয়া যাবে না। বরং মহান আল্লাহতায়ালার রহমত ও মাগফিরাতের দরজা সব সময় বান্দাদের জন্য খোলা থাকে। তিনি যে কোনো সময়, যে কোনো বান্দাকে রহমতের চাদরে আবৃত করে, পূর্ণ ক্ষমা ও জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করার ফয়সালা করে থাকেন।  রমজানের শেষ দশকে সমূহ আমলের মধ্যে বিশেষ দুটি আমলের কথা হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। এক. ২০ রমজান সূর্যাস্তের পর থেকে শুরু হয়ে গেছে ইতিকাফ। রমজানের শেষ দশকে পুরুষদের জন্য মসজিদে ইতিকাফ করার মাঝে রয়েছে বহু ফজিলত। এক কথায় অপরাধী বান্দা নিজের অপরাধ স্বীকার করে রহমানের দরজায় পড়ে আছে। যেন সে এমনটি বুঝাতে চায়— হে আল্লাহ! এক অপরাধী গোলাম বেশুমার অপরাধ করার পর, তা স্বীকার করে তোমার দরজায় পড়ে আছে, যে পর্যন্ত তুমি ক্ষমা না করবে ওই পর্যন্ত এই গোলাম তোমার দরজা ত্যাগ করবে না। দুই. রমজানের শেষ দশকে লাইলাতুল কদর বা শবেকদর হওয়ার বিশেষ সম্ভাবনা রয়েছে। এই কদর সম্পর্কে বুখারি ও মুসলিম শরিফে একটি হাদিস বর্ণিত হয়েছে। ‘যে ব্যক্তি ছওয়াবের বিশ্বাস নিয়ে ইখলাসের সঙ্গে লাইলাতুল কদরে ইবাদত করবে তার পেছনের সব গোনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে’। অর্থাৎ কদরের রাত্রিতে বান্দা যদি কায়মনে তাওবা করে আল্লাহর দরবারে কান্নাকাটি করে ক্ষমা প্রার্থনা করে ইবাদতে মগ্ন থাকে,  হাদিসের ভাষ্য মতে তার পেছনের সব গোনাহ আল্লাহ মাফ করে দিবেন। সুবহানাল্লাহ। সেই মহিমান্বিত রাত পাওয়া সহজতর হয় রমজানের আখেরি দশকে। আখেরি দশকে যতগুলো বেজোড় রাত আছে। অর্থাৎ ২১, ২৩, ২৫, ২৭, ২৯ এই রাতগুলোতে আমরা লাইলাতুল কদর তালাশের উদ্দেশ্যে ঘুমানোর আগে কয়েক রাকাত নফল নামাজ আদায় করি। ক্ষমা চাই, জাহান্নাম থেকে মুক্তি চাই। আমার চাওয়া যদি লাইলাতুল কদরে হয়ে যায়, তাহলে তো জীবনের বড় একটি আশা পূরণ হলো, অর্জিত হলো বড় সফলতা। হজরত রসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লাইলাতুল কদরে বেশি বেশি ক্ষমা চাওয়ার কথা ইরশাদ করেছেন। একবার হজরত আয়শা সিদ্দীকা (রা.) রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লামকে উদ্দেশ্য করে বললেন, ইয়া রসূলুল্লাহ! আমি যদি লাইলাতুল কদর পাই তাহলে কী দোয়া করব এবং আল্লাহর কাছে কী চাইব? রহমতে আলম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উত্তরে বলেছিলেন! তুমি দোয়া করবে ‘আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুয়্যুন তুহিব্বুল আফওয়া ফা’ফু আ’ন্নি’। অর্থাৎ হে আল্লাহ! তুমি বড়ই ক্ষমাশীল, ক্ষমা করতে ভালোবাস, তাই আমাকে ক্ষমা করে দাও। (্ইবনে মাজাহ, ও তিরমিজি) রহমতে আলম সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম এই দোয়া হজরত আয়েশা সিদ্দীকা (রা.)-এর মাধ্যমে কেয়ামত পর্যন্ত আগত সব উম্মতকে শিক্ষা দিয়েছেন। তাই আসুন আমরাও বেশি বেশি বলি, ‘হে আল্লাহ! তুমি ক্ষমাশীল, ক্ষমা করতে ভালোবাস, আমাকে ক্ষমা করে দাও’। আরও বলি হে আল্লাহ! নাজাত চাই নাজাত দেওয়াই তোমার মহাগুণ। আল্লাহতায়ালা আমাদের সবাইকে রমজানের শেষ দশকে পূর্ণ নাজাত দান করুন। আমিন। লেখক : মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও খতিব বারিধারা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর