শুক্রবার, ৮ জুন, ২০১৮ ০০:০০ টা

বাজেট জনগণের স্বার্থে নয় : বিএনপি

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রস্তাবিত বাজেটকে প্রত্যাখ্যান করে একে ‘জনগণের স্বার্থে নয়’ ‘ফাঁকা বাজেট’ বলে মন্তব্য করেছে বিএনপি। সংসদে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বাজেট উপস্থাপনের পর রাজধানীতে পৃথক তিনটি অনুষ্ঠানে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ  হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ ও ড. আবদুল মঈন খান এ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। এ ছাড়া ঢাকার বাইরে স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় সিরাজগঞ্জের বেলকুচিতে তাত্ক্ষণিক প্রতিক্রিয়া দেন। রাজধানীর পুরানা পল্টনে মুক্তি ভবনে ২০ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক কল্যাণ পার্টির আয়োজনে ইফতার মাহফিলে তাত্ক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, এটি জনগণের স্বার্থের বাজেট নয়। সরকার ঋণনির্ভর একটি বাজেট দিয়েছে। এতে জনগণের ওপর ঋণের বোঝা বেড়ে যাবে। আমরা মনে করি, এই বাজেট জনগণের কোনো উপকারে আসবে না। আমরা এই বাজেট প্রত্যাখ্যান করছি। কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিমের সভাপতিত্বে মহাসচিব এম এম আমিনুর রহমানের পরিচালনায় ইফতারে ড. মোশাররফ আরও বলেন, বেশকিছু পণ্যের ওপর স্থানীয় পর্যায়ে আমদানি পর্যায়ে শুল্ক, সম্পূরক শুল্ক, রেগুলেটরি ডিউটি, ভ্যাট বৃদ্ধি করা হয়েছে। তৈরি পোশাক শিল্পে ভ্যাট বাড়ানো হয়েছে, অনেক পণ্যের ট্যারিফ ভ্যালু বৃদ্ধি করা হয়েছে। আমরা যে ১১০০ ধরনের পণ্য আমদানি করি তার ওপরে ভ্যাট বৃদ্ধি করা হয়েছে। ই-কমার্সকে ভ্যাটের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। অন্যদিকে করপোরেট ট্যাক্স কমানো হয়েছে। এর ফলে ধনীকে আরও ধনী করা হবে এবং দরিদ্র আরও দরিদ্র হবে। জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘অর্নব’ সংগঠনের উদ্যোগে বর্তমান সরকার আমলে ‘গুম-খুনে’ নিহত নেতা-কর্মীর পরিবারকে ঈদ উপহার অনুষ্ঠানে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, ‘প্রস্তাবিত বাজেট বিশাল একটি বেলুন, নীল রঙের বেলুন। কিন্তু এর ভিতরে কিছু নেই, ফাঁকা। এটি একটি গতানুগতিক বাজেট। ব্যাংকিং খাত, পূঁজিবাজার, সামাজিক বিভিন্ন খাতে  যে নৈরাজ্য চলছে তা নিরসনে প্রস্তাবিত বাজেটে কোনো দিকনির্দেশনা নেই। ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, এত বড় বাজেট দেওয়া হয়েছে শুধু জনগণের থেকে প্রতারণা করে ভোট আকর্ষণ করার জন্য। এটি নির্বাচনী বাজেট, ভোট আকর্ষণের বাজেট, জনগণের স্বার্থের বাজেট নয়। এই বাজেট বাস্তবায়ন করার জন্য সরকারের আর্থিক সক্ষমতা নেই, আমাদের প্রশাসনিক দক্ষতাও নেই। আমরা মনে করি, এই বাজেট কোনো অবস্থায় বাস্তবায়নযোগ্য নয়। এটা লোক দেখানো বাজেট, জনগণকে প্রতারণা করার বাজেট। প্রস্তাবিত বাজেটকে ‘ঋণনির্ভর’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাজেটে রাজস্ব আদায়ের যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে তা অর্জন সম্ভব হবে না। রাজস্ব ঘাটতি পূরণের জন্য দায়িত্ব পড়বে সাধারণ মানুষের ওপরে। প্রত্যেকের পকেট থেকে এই ঘাটতি পূরণ করা হবে। নির্বাচনী বাজেট দিয়ে সরকার ‘জনগণকে ভোলাতে পারবে না’ বলেও মন্তব্য করেন মওদুদ আহমদ। ২০১৮-২০১৯ সালের প্রস্তাবিত বাজেটকে এ সরকারের সর্বশেষ লুটপাটের বাজেট বলে মন্তব্য করেছেন গয়েশ্বর চন্দ্র রায়।

গতকাল সিরাজগঞ্জ-৫ আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী দলের কেন্দ্রীয় সহপ্রচার সম্পাদক আমিরুল ইসলাম আলিমের পক্ষে বেলকুচির তামাই হাইস্কুল মাঠে দরিদ্রদের মধ্যে শাড়ি-লুঙ্গি ও কম্বল বিতরণ অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, বিলাসী বাজেটে প্রকল্প বাড়ানোর উদ্দেশ্যই হলো লুটপাট। শুধু সরকারি দলের নেতা-কর্মীদের তুষ্ট করার জন্যই এ বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে। এ বাজেটে জনমতের কোনো প্রতিফলন নেই। জনগণের কোনো লাভও হবে না। গতানুগতিক ধারায় বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে। বেলকুচি পৌর বিএনপির আহ্বায়ক গোলাম আজমের সভাপতিত্বে এতে বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ এতে বক্তব্য রাখেন। তবে প্রধান অতিথি গয়েশ্বর রায়ের বক্তব্যের মাঝে পুলিশ এসে হাজির হয়। পরে তিনি সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেন। এর আগে হতদরিদ্রদের মধ্যে দেড় হাজার শাড়ি ও দেড় হাজার লুঙ্গি এবং এক হাজার কম্বল বিতরণ করা হয়।

সর্বশেষ খবর