সোমবার, ১১ জুন, ২০১৮ ০০:০০ টা

ভারতকে হারিয়ে মেয়েরাই নিয়ে এলো এশিয়া কাপ

আসিফ ইকবাল

ভারতকে হারিয়ে মেয়েরাই নিয়ে এলো এশিয়া কাপ

সাকিব, মাশরাফি, মুশফিক, তামিমরা যা পারেননি, তাই করে দেখিয়েছেন সালমা, রুমানা, জাহানারা, ফারজানারা। একবার নয়, দু-দুবার ফাইনাল খেলেও এশিয়া কাপের মুকুট পরা হয়নি সাকিব, মাশরাফিদের। অথচ প্রথমবার ফাইনাল খেলেই এশিয়া কাপ জয় করে নিয়েছেন সালমা, রুমানারা। লিখেছেন সোনালি ইতিহাস। সালমা বাহিনী এমন এক সময়ে ইতিহাস লিখেছে, যখন সমালোচকরা বাংলাদেশের মহিলা ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ অন্ধকার দেখছেন। এশিয়া সেরা হতে এবং শিরোপা জিততে সালমারা একবার নয়, টি-২০ এশিয়া কাপে দুবার হারিয়েছেন পরাক্রমশালী ভারতকে। সালমাদের অবিশ্বাস্য এই কীর্তিগাথা ঈদের আগে দেশবাসীর জন্য বড় একটা উপহারও! টি-২০ এশিয়া কাপে চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় বাংলাদেশ মহিলা ক্রিকেট দলকে অভিনন্দন জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মে মাসে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়েছিলেন সালমা, রুমানারা। সফরে পাঁচটি ওয়ানডে ও তিনটি টি-২০ ম্যাচে নাকাল হয়েছিল বাংলাদেশ। সবাই তখন ধরে নিয়েছিল, আর যাই হোক মেয়েদের দিয়ে ক্রিকেট হবে না! যেখানে সাকিবরাই পারছেন না, সেখানে সালমাদের নিয়ে স্বপ্ন দেখা একটু বাড়াবাড়িই। দিনকয়েক আগে ভারতের দেরাদুনে  আফগানিস্তানের কাছে হোয়াইটওয়াশ হয়েছেন সাকিবরা। নিদাহাস টি-২০ টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলেও শেষ বলের ছক্কায় কান্নায় ভেঙে পড়তে হয়েছিল। এ ছাড়া এশিয়া কাপে দু-দুবার ফাইনাল খেলেও হতাশা, বেদনা ছাড়া কিছুই পায়নি বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীরা। সেখানে সালমারা পারবেন, এটা ভাবতে কষ্ট হয়েছিল দিনের শুরুতে। সবার ধারণাকে অমূলক প্রমাণিত করে সালমারা বেদনার সেই ক্ষতে প্রলেপ দেন অবিশ্বাস্য ক্রিকেট খেলে। শুধু তাই নয়, সাকিব, মাশরাফিদের আত্মবিশ্বাস ফিরে পাওয়ার রসদও জোগালেন। মহিলা এশিয়া কাপ শুরু হয় ২০০৪ সাল থেকে। প্রথম চার আসর ছিল ওয়ানডে সংস্করণে। ২০১২ সাল থেকে পাল্টে হয় টি-২০ সংস্করণে। যে সংস্করণেই খেলা হয়েছে, চ্যাম্পিয়ন দলের নাম পাল্টায়নি একবারও। শিরোপার পাশে বরাবরই লেখা থেকেছে ভারতের নাম। এবারও ফেবারিট হিসেবেই যাত্রা শুরু করেছিল ভারত। কিন্তু সালমারা অবিশ্বাস্য ক্রিকেট খেলে চ্যাম্পিয়ন হয়ে নতুন ইতিহাস লিখেন এশিয়া কাপের।

বাংলাদেশ এর আগে কখনই ভারতকে হারায়নি। টানা ৩৪ ম্যাচ হারের পর ভারতকে প্রথম হারের স্বাদ দেয় গ্রুপ পর্বে। ম্যাচটি সালমা বাহিনী জিতেছিল ৭ উইকেটে। তখন মনে হয়েছিল এটা অঘটন! কিন্তু গতকাল কিনরারা ওভালের ফাইনালে অসাধারণ ক্রিকেট খেলেছেন সালমা, রুমানা, আয়েশা, ফারজানা, নিগার, শামীমা, খাদিজারা। প্রথমে ফিল্ডিং করে ১১২ রানে বেঁধে ফেলে হারমানপ্রিত কাউর, মিতালী রাজদের ভারতকে। এত রান করতে পারত না আগের টানা ছয়বারের চ্যাম্পিয়ন ভারত, যদি অধিনায়ক হারমানপ্রিত ৫৬ রানের সময়োপযোগী ইনিংস না খেলতেন। বাংলাদেশের পক্ষে রুমানা ও খাদিজা উইকেট নেন ২টি করে। ১১৩ রানের টার্গেটে দুই ওপেনার আয়েশা ও শামীমা ৩৫ রান যোগ করে শক্ত ভিত দেন। মিডল অর্ডারে নিগার সুলতানা সর্বোচ্চ ২৭ রান করেন ২৪ বলে ৪ চারে। ম্যাচ সেরা রুমানা বোলিংয়ের পাশাপাশি ২৩ রান করেন ২২ বলে। দুই ওপেনারের গড়া ভিতের পরও সালমা বাহিনী বিপাকে পড়ে ভারতীয় লেগ স্পিনার পুনম যাদবের ঘূর্ণিতে। ৪ উইকেট নিয়ে পুনম বাংলাদেশকে বিপর্যয়ে ঠেলে দেন। সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে শেষ ওভারে জয়ের জন্য ৯ রান দরকার হয় বাংলাদেশের। হারমানপ্রিতের প্রথম বলে এক রান নেন ফাহিমা। দ্বিতীয় বলে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে রুমানা সমীকরণ করেন ৪ বলে ৪ রানের। তৃতীয় বলে আবারও এক রান নেন রুমানা। দরকার দাঁড়ায় ৩ বলে ৩ রান। চতুর্থ বলে আউট হন সানজিদা। দুই বলে ৩ রান। ২ রান নিতে গিয়ে রান আউট হন রুমানা। ফলে শেষ বলে দাঁড়ায় ২ রান। শেষ বলটি মিড উইকেটে ঠেলেই জাহানারা ও সালমা তুলে নেন ২ রান। ওই রানেই ইতিহাস লিখে ফেলে বাংলাদেশ। টেস্ট খেলুড়ে দেশ হওয়ার পর তিনের অধিক কোনো দল নিয়ে টুর্নামেন্টে এই প্রথম চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ। পুরুষ দল এশিয়া কাপের ফাইনাল খেলেছে দুবার, মার্চে নিদাহাস ট্রফির ফাইনালও খেলেছে। এ ছাড়া ফাইনাল খেলেছে ঘরের মাটিতেও। কিন্তু চ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি। মহিলা দল এই প্রথম কোনো আসরে ফাইনালে ওঠে শিরোপা জিতে লিখেছে ইতিহাস। বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে এখন পর্যন্ত এটাই সবচেয়ে বড় সাফল্য।

সর্বশেষ খবর