সোমবার, ১১ জুন, ২০১৮ ০০:০০ টা

ব্যাংকিং খাত নিয়ে সংসদে অর্থমন্ত্রীর তুমুল সমালোচনা

নিজস্ব প্রতিবেদক

ব্যাংকিং খাত নিয়ে সংসদে অর্থমন্ত্রীর তুমুল সমালোচনা

সম্পূরক বাজেটের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে সরকারি ও বিরোধী দলের এমপিরা ব্যাংকিং খাতের অব্যবস্থাপনা ও লুটপাট নিয়ে অর্থমন্ত্রীর কড়া সমালোচনা করেছেন। ব্যাংক লুটকারী ও অর্থ পাচারকারীদের ধরতে না পারায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন তারা। একই সঙ্গে লুটপাটকারীদের শাস্তির আওতায় এনে আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি কালো টাকা সাদা করার সুযোগের দাবি করেন এমপিরা।

স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে গতকাল জাতীয় সংসদের বাজেট অধিবেশনে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের সম্পূরক বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে সমালোচনার সূচনা করেন সরকারদলীয় এমপি অধ্যাপক আলী আশরাফ। এরপর বিরোধী দল জাতীয় পার্টির এমপি কাজী ফিরোজ রশীদ ও স্বতন্ত্র সদস্য রুস্তম আলী ফরাজী, জাতীয় পার্টির নূরুল ইসলাম ওমর, পীর ফজলুর রহমান মিসবাহসহ অন্য এমপিরা সংসদে অর্থমন্ত্রীর সাফল্যের পোস্টমর্টেম করেন। এ সময় ব্যাংকিং খাতের অব্যবস্থাপনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে তারা পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনতে না পারার জন্য অর্থমন্ত্রীর সাফল্যের প্রতি প্রশ্ন তোলেন। বিরোধীদলীয় এমপি কাজী ফিরোজ রশিদ বলেন, ভারতের সোমনাথ মন্দিরের লুটপাটের সঙ্গে আমাদের ব্যাংকিং খাতের লুটপাটের তুলনা করা যায়। তখন সোমনাথ মন্দির আক্রমণ করে ২০ বিলিয়ন ডলার লুটপাট করা হয়েছিল। আর বাংলাদেশে ব্যাংক লুটপাটের আগ পর্যন্ত এত বড় লুটপাটের ঘটনা আর ঘটেনি। সামনে নির্বাচন, নির্বাচনের আগে এই ব্যাংক মালিক ও লুটপাটকারীরা দেশে থাকবে না, তাদের খুঁজেও পাবেন না। তারা বিদেশে পালিয়ে যাবে, ইতিমধ্যে ভিসা লাগিয়ে ফেলেছে। অর্থমন্ত্রীর উদ্দেশে তিনি বলেন, ব্যাংক খেলাপি কারা? এটা কি আপনি জানেন না? কেন তাদের কাছ থেকে টাকা আদায় করছেন না। এরা ২৪ হাজার কোটি টাকা নিয়ে গেছে। এই সমস্ত ভুয়া বাজেট দিয়ে কাজ হবে না। এই বাজেটের মধ্যে কিছু নেই। ধনীকে খুশি, গরিবকে নিঃস্ব আর ব্যাংক ডাকাতদের উৎসাহিত করেছেন এই বাজেটে। সরকারের বিভিন্ন সাফল্য তুলে ধরে অধ্যাপক আলী আশরাফ বলেন, আমাদের আবাদি জমি কমেছে, কিন্তু খাদ্য উৎপাদন বেড়েছে। দেশ এখন খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছে, এটা অভূতপূর্ব সাফল্য। অবকাঠামো উন্নয়নেও অভূতপূর্ব সাফল্য এসেছে। শিক্ষা ক্ষেত্রে যুগান্তকারী সাফল্য ও বিরাট বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে। এ ছাড়া স্বাস্থ্য খাতে বিরাট সাফল্য অর্জন করেছি। সাধারণ মানুষ আজ কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে ৩২ রকমের ওষুধ ফ্রি পাচ্ছে। এখন আমরা টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু ব্যাংকিং খাতের ব্যর্থতা আমাদের সব অর্জন ম্লান করে দিচ্ছে। এ জন্য ব্যাংকিং খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার আহ্বান জানিয়ে আলী আশরাফ বলেন, এই খাতে শৃঙ্খলা আনতে না পারলে দেশের অর্থনীতি ভেঙে পড়বে। কিছু মানুষ ব্যাংকিং খাতে লুটপাট করবে, এটা হতে পারে না। এই ঋণ খেলাপি অর্থ পাচারকারীদের আপনি ধরেন। করের আওতা বাড়াতে প্রতিটি উপজেলায় একটি করে কর অফিস করেন। স্বতন্ত্র সদস্য রুস্তম আলী ফরাজী বলেন, ব্যাংকের টাকা পাচার হয়ে যায়— মানুষ এই আতঙ্কে আছে। ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ঋণ খেলাপিরা টাকা দেশেও রাখে না, বিদেশে পাচার করে। এরা ব্যাংকের কিছু আর রাখবে না। যারা ব্যাংকে লুটপাট করেছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রশাসনে চলছে অনিয়ম। বেতন বাড়ানো হলো তবুও কর্মকর্তারা ঘুষ খায়। বেতন নিলে ঘুষ বন্ধ করতে হবে। আর ঘুষ নিলে বেতন বন্ধ করতে হবে। এক সঙ্গে দুটো চলবে না। সরকারদলীয় সদস্য সোহরাব উদ্দিন কালো টাকা সাদা করার সুযোগ সৃষ্টির দাবি করে বলেন, কালো টাকা বাইরে পাচার হয়। যদি এই টাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া হয় তাহলে এ টাকা আমাদের উন্নয়নে ব্যয় হবে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়বে। জাতীয় পার্টির সদস্য পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ বলেন, ব্যাংকিং খাতের লুটপাট সরকারের উন্নয়ন ম্লান করে দিয়েছে। তিনি ব্যাংক লুটপাটকারীদের শাস্তির আওতায় এনে আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার দাবি জানান। অর্থমন্ত্রীর ব্যাংক কমিশন গঠন করার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসায় সমালোচনা করে তিনি বলেন, অর্থমন্ত্রী বলেছেন, পরবর্তী সরকারের কাছে দিয়ে যাবেন। কেন উনি দিতে পারলেন না? কারণ কমিশন দিলে কারা লুটপাটের সঙ্গে জড়িত সব বেরিয়ে আসবে।

সর্বশেষ খবর