মঙ্গলবার, ১২ জুন, ২০১৮ ০০:০০ টা
এবার বাড়ি ফেরার যুদ্ধ

টিকিটের কাড়াকাড়ি আকাশ পথেও

মির্জা মেহেদী তমাল

বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা বরকত উল্লাহ। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে ঈদের ছুটিতে যাবেন কক্সবাজার। ১৫ জুনের জন্য কক্সবাজারের টিকিট কাটতে যান বিমান অফিসে। কিন্তু টিকিট আছে একটি। দাম তাও আবার প্রায় ১০ হাজার টাকা। বরকত উল্লাহ বলেন, ‘স্ত্রী-সন্তানসহ একটি টিকিটে হবে না, তাই ফিরে যাচ্ছি।’ তিনি ফিরে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই অন্য আরেক যাত্রী সেই চড়া দামে টিকিট কিনে ফেলেন। টিকিট কিনতে পেরে এই যাত্রী অবশ্য খুশি। তিনি বলেন, এই দামে টিকিট না কিনলে অন্য আরেক যাত্রী ঠিকই কিনে নেবেন। তবে ব্যবসায়ী স্বপন গত কয়েক দিন ট্রাভেল এজেন্সি ঘুরেও টিকিট পাননি। এই মুহূর্তে আকাশপথের ঈদ যাত্রার টিকিট নিয়ে চলছে এমন কাড়াকাড়ি। তিনগুণ চারগুণ দামেও মিলছে না উড়োজাহাজের টিকিট। বাস-ট্রেনের মতো আকাশপথেও ঈদ যাত্রার টিকিট নিয়ে চলছে হুলুস্থূল কাণ্ড। ২ হাজার ৫০০ টাকার টিকিট এখন ১০ হাজার টাকায়ও মিলছে না। অভ্যন্তরীণ রুটে চলাচলকারী উড়োজাহাজ কোম্পানিগুলোর কর্মকর্তারা বলছেন, শুধু রোজার ঈদ নয়, আগামী কোরবানির ঈদের টিকিটও বিক্রি প্রায় শেষ। ইউএস-বাংলা, নভোএয়ার, রিজেন্ট এয়ার ও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস গত ১০ জুন থেকে অতিরিক্ত ফ্লাইট পরিচালনা শুরু করে। তারপরও চাপ সামাল দিতে পারছে না। ঈদের আগের তিন দিন ও পরের কয়েক দিনের আকাশপথের টিকিট নেই নিয়মিত ফ্লাইটের। অতিরিক্ত ফ্লাইটে দু-একটি টিকিট মিললেও দাম তিন/চারগুণের বেশি। আকাশছোঁয়া দামেই আকাশপথের টিকিট কিনছেন মানুষ। এরপরও খালি হাতে ফিরতে হয় অনেক যাত্রীকে। ঢাকা-রাজশাহী রুটের নিয়মিত যাত্রী ইমাম হোসেন বিমানের ঈদের টিকিট কাটতে পারেননি। তাকে ফেরত আসতে হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আগামী ১৪ জুনের টিকিট বিক্রি হচ্ছে ৮ হাজার ২০০ টাকায়। পরিবারের ৫ সদস্য, হিসাব মেলানো যাচ্ছে না।’

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, প্রায় সব এয়ারলাইনসের ঈদের আগের অভ্যন্তরীণ রুটের টিকিট বিক্রি শেষ। বাড়তি ফ্লাইটের কিছু টিকিট যদিও আছে, এজন্য চারগুণ পর্যন্ত বেশি অর্থ গুনতে হচ্ছে। ঢাকা থেকে সৈয়দপুর রুটে আগে টিকিট বিক্রি হতো সর্বোচ্চ তিন হাজার ২০০ টাকায় (ওয়ানওয়ে); এখন দাম ৮ হাজার ৫০০ থেকে ৯ হাজার ৫০০ টাকা। ঢাকা-যশোর রুটের ২ হাজার ৫০০ টাকার টিকিট বিক্রি হচ্ছে ৮ হাজার টাকায়। ঢাকা থেকে বরিশাল রুটের তিন হাজার টাকার ওয়ানওয়ে টিকিটের দাম রাখা হচ্ছে সাত হাজার ৫০০ থেকে আট হাজার ৫০০ টাকা। ঢাকা-রাজশাহী রুটের টিকিটও বিক্রি হচ্ছে আট হাজার টাকায়, যা স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে তিন হাজার টাকা বেশি। একইভাবে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম ছয় থেকে আট হাজার, কক্সবাজার আট থেকে ১২ হাজার এবং সিলেট রুটে পাঁচ হাজার ৫০০ টাকায় টিকিট কিনতে হচ্ছে যাত্রীদের। জানা যায়, ঈদ যাত্রায় আকাশপথে যাত্রীদের অতিরিক্ত চাপ সামাল দিতে অভ্যন্তরীণ রুটে ৬৩টি বাড়তি ফ্লাইট গত ১০ জুন থেকে চলতে শুরু করেছে। তবে যাত্রীদের অভিযোগ, স্বল্প মূল্যের টিকিট ‘ব্লক’ করে রেখে ইকোনমি ক্লাসেও চড়ামূল্য হাঁকিয়ে যাত্রীদের পকেট কাটছে এয়ারলাইনসগুলো। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি ট্রাভেল এজেন্সির একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘ঈদের সময় স্বল্প ভাড়ার টিকিটগুলো কোনো কোনো এয়ারলাইনস ব্লক করে আপার ক্লাসে রেখে দেয়। ফলে শুরু থেকেই ভাড়া বেশি দেখায়।’ তবে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) শাকিল মেরাজ বলেন, ‘অনলাইনে আমাদের টিকিট উন্মুক্ত, এটা আটকে রাখা কিংবা ব্লক করে রাখার সুযোগ নেই। সব যাত্রীই বিমানের কাছে সমান বলে দাবি করেন তিনি। তিনি বলেন, ‘ঈদে ভাড়া বেড়েছে, এটা নির্ভর করে বাজারের ওপর। তবে অন্যান্য এয়ারলাইনসের তুলনায় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ভাড়া কম। ঈদের আগের চার দিন ও ঈদের ছুটি শেষে চার দিনের টিকিটের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। ১২  থেকে ২২ জুন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি টিকিটের চাহিদা বলে জানান তিনি। এয়ারলাইনসের কর্মকর্তাদের দাবি, বাড়তি চাহিদা ও ফিরতি ফ্লাইটে আসন খালি থাকায় খরচ ওঠাতে দাম বেশি রাখা হয়।

ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনসের মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) কামরুল ইসলাম বলেন, ‘অন্য সময় যাওয়া-আসা দুই পর্যায়েই ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ যাত্রী থাকে। ঈদে সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ যাত্রী পাওয়া যায় ফিরতি ফ্লাইটে। তাই তেলের খরচও ওঠে আসে না। এ কারণেই ওয়ানওয়ে টিকিটের একটি অংশে ভাড়া সর্বোচ্চ হয়ে যায়। তবে ফিরতি ফ্লাইটে যাত্রী আকর্ষণে ইউএস-বাংলা চারটি গন্তব্য (সৈয়দপুর, রাজশাহী, যশোর ও বরিশাল)  থেকে ঢাকায় সর্বনিম্ন এক হাজার ৮৯৯ টাকায় টিকিট বিক্রি করছে বলে জানান তিনি।

নভোএয়ারের হেড অব মার্কেটিং অ্যান্ড সেলস মেসবাহ-উল হক বলেন, ‘যাত্রীরা যেসব টিকিটের দাম আট হাজার বলছেন, তা একটি ফ্লাইটের মোট আসনের মাত্র ১০ শতাংশ। ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ টিকিট কম দামেই বিক্রি হয়েছে। বাকি ৫০ শতাংশ টিকিট বিক্রি হয়েছে মধ্যম দামে। উড়োজাহাজের টিকিট সারাবিশ্বে একই নিয়মে বিক্রি হয়। শেষ মুহূর্তে টিকিটের দাম বেশি থাকে।’

এদিকে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম, সিলেট, কক্সবাজার, যশোর, রাজশাহী, সৈয়দপুর ও বরিশাল রুটে চলবে বাড়তি ৬৩টি ফ্লাইট। নভোএয়ার অতিরিক্ত ২৪টি, ইউএস-বাংলা ৩৫টি এবং বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস চারটি ফ্লাইট বাড়তি পরিচালনা করবে। এয়ারলাইনসগুলোর আবেদনের পর বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ-বেবিচক এই অনুমোদন দেয়।

সর্বশেষ খবর