মঙ্গলবার, ১২ জুন, ২০১৮ ০০:০০ টা
এবার বাড়ি ফেরার যুদ্ধ

ফিটনেসবিহীন লঞ্চে ঝুঁকির যাত্রা

ঝর্ণা মনি

স্বজনের সঙ্গে ঈদ করতে এবারও নৌপথে পাড়ি দেবেন অসংখ্য মানুষ। অগ্রিম টিকিট বিক্রিও শেষ। যাত্রা নির্বিঘ্ন করতে ফিটনেসবিহীন এবং ঝুঁকিপূর্ণ লঞ্চ ঠেকাতে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে নেওয়া হয়েছে নানা উদ্যোগ। তবুও ঈদে ঘরমুখী মানুষের চাপ সামাল দিতে অন্যান্যবারের মতোই পুরনো, ফিটনেসবিহীন, চলাচলের অনুপযোগী লঞ্চ সংস্কার করেছেন কিছু কিছু মালিক। ফলে ঝুঁকিপূর্ণ ঈদযাত্রার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, দীর্ঘদিন পড়ে থাকা ফিটনেসবিহীন ও ত্রুটিপূর্ণ অনেক লঞ্চ জোড়াতালি দিয়ে মেরামত আর রঙের প্রলেপে নিয়েছে নতুন সাজ। ফিটনেসবিহীন এসব লঞ্চের অভ্যন্তরে ভাঙাচোরা ও জোড়া লাগানো পাটাতন, জং ধরে যাওয়া সিলিং, বেঁকে যাওয়া ও ভাঙা রেলিংয়ের কাজ সারানো হয়েছে। এই নতুন রূপ দেওয়ার কাজ চলছিল রমজানের এক-দেড় মাস আগে থেকেই। ঈদে ঘরমুখো মানুষের ভিড় বাড়তে থাকলে নদীতে নামবে এসব ঝুঁকিপূর্ণ নৌযান। প্রশাসন এসব রোধে নানা ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বললেও শেষ পর্যন্ত ঠেকিয়ে রাখতে পারে না। সূত্র জানায়, প্রতিদিন সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল থেকে ৪১টি নৌপথে শতাধিক লঞ্চ চলাচল করে। সাধারণ সময়ে এসব লঞ্চ বোঝাই হয়ে চলাচল করে। ঈদের মৌসুমে যাত্রীর চাপ কয়েক গুণ বেড়ে যায়। এ অতিরিক্ত যাত্রীর লোভে কিছু অসাধু লঞ্চমালিক লক্কড়-ঝক্কড়, চলাচলে অনুপযোগী লঞ্চ সংস্কার ও রং করে চাকচিক্যময় করে তোলেন। কয়েক বছর ধরে বসা লঞ্চও ঘাটে আনা হয় ঈদযাত্রী পরিবহনে। তবে বিষয়টির সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিসি) চেয়ারম্যান কমোডর এম মোজাম্মেল হক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, এক্ষেত্রে আমাদের অবস্থান জিরো টলারেন্স। কোনো অবস্থায়ই আনফিট নৌযান চলাচল করতে দেওয়া হবে না। নদীর পাড় থেকে ইতিমধ্যেই অবৈধ সব জাহাজ তুলে দিয়েছি। পুলিশ, প্রশাসন নিয়ে আমাদের কমিটি গঠন করা হয়েছে। তিনি জানান, ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে সবার ছুটি বাতিল রয়েছে। সদরঘাটসহ প্রতিটি ঘাটেই কমিটির সদস্যরা থাকবেন। ফলে আনফিট লঞ্চ নামানোর কোনো সুযোগ নেই। সাধারণত ঈদ মৌসুমে লঞ্চগুলোর ছাদ থেকে শুরু করে বারান্দা— কোনো জায়গায় তিল ধারণের ঠাঁই থাকে না। ২ হাজার ধারণক্ষমতার লঞ্চগুলোতে ৫ থেকে ৬ হাজার যাত্রী উঠানো হয়। এ কারণে প্রতি বছর লঞ্চগুলোতে জীবনের ঝুঁকি নিয়েই যাতায়াত করেন যাত্রীরা। নৌ, সড়ক ও রেলপথ রক্ষা জাতীয় কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী, এবার ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুর থেকে গ্রামের বাড়িতে ঈদ করতে যাওয়া ১ কোটি ২৯ লাখের মধ্যে নৌপথ ব্যবহার করবেন ২৫ শতাংশ মানুষ। ঈদে বরিশাল-ঢাকা নৌরুটে এবারও ধারণক্ষমতার চেয়ে বেশি যাত্রী পরিবহনের আশঙ্কা করছেন যাত্রীরা। বিআইডব্লিউটিএ’র দাবি কোনোভাবেই ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে লঞ্চ ছাড়তে দেওয়া হবে না। এ ব্যাপারে কমোডর এম মোজাম্মেল হক বলেন, দুর্ঘটনা এড়াতে অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহনের ক্ষেত্রে আমরা সতর্ক রয়েছি।

আগামীকাল থেকে শুরু ঈদ স্পেশাল সার্ভিস : আগামীকাল বুধবার থেকে ঈদ স্পেশাল সার্ভিস শুরু করবে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিসি)। রাষ্ট্রীয় এ সংস্থার চারটি নিয়মিত জাহাজের সঙ্গে আরও দুটি যুক্ত হয়ে মোট ৬টি জাহাজ নিয়ে এবারের ঈদে ঘরে ফেরা মানুষদের পৌঁছে দেবে। বিশেষ এ নৌ-সার্ভিস চলবে ২৪ জুন পর্যন্ত। তবে যাত্রীর চাপ বেশি থাকলে সময় আরও বাড়ানো হবে। বিআইডব্লিউটিসি চেয়ারম্যান কমোডর এম মোজাম্মেল হক বলেন, ঈদ ঘিরে আমাদের ব্যাপক প্রস্তুতি রয়েছে। বুধবার সদরঘাট থেকে ছেড়ে যাওয়ার জন্য ১৮০টি লঞ্চ প্রস্তুত রয়েছে। চারটি নিয়মিত জাহাজের সঙ্গে ঈদযাত্রায় আরও দুটি জাহাজ যুক্ত হচ্ছে বলেও জানান তিনি। জানতে চাইলে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ চলাচল (যাত্রী পরিবহন) সংস্থার সদস্য সচিব ছিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বুধবার থেকে সদরঘাট থেকে ১২০টি লঞ্চ ছাড়বে। বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, গলাচিপা, চরফ্যাশান, ঝালকাঠি, হাতিয়া, চাঁদপুরসহ দক্ষিণ ও উপকূলীয় এলাকার মানুষের যাতায়াতের জন্য আমরা ২১০টি লঞ্চের ব্যবস্থা করে রেখেছি। এবার মান নিয়ে প্রশ্ন তোলার কোনো সুযোগ নেই। প্রতিটি লঞ্চই পাঁচ তারকা হোটেলের মতো। ভাড়া সরকার কর্তৃক নির্ধারিত বলে জানান তিনি। ঈদে নৌ-দুর্ঘটনা এড়াতে বেশকিছু সুপারিশ করেছে নৌ, সড়ক ও রেলপথ রক্ষা জাতীয় কমিটি। এ ব্যাপারে সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক আশীষ কুমার দে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, অবৈধ ও ত্রুটিপূর্ণ লঞ্চসহ সব ধরনের যাত্রীবাহী নৌযান চলাচল বন্ধে সারা দেশে ভ্রাম্যমাণ আদালতের কার্যক্রম শুরু করার সুপারিশ করেছি আমরা। অন্যান্য সুপারিশের মধ্যে রয়েছে- শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ি ও পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথে ঝুঁকিপূর্ণ লঞ্চসহ সব ধরনের ক্ষুদ্র নৌযান চলাচল বন্ধ, রাতে বালু ও তেলবাহীসহ সব ধরনের পণ্যবাহী নৌযান চলাচল সম্পূর্ণ নিষিদ্ধকরণ, সব টার্মিনাল ও লঞ্চঘাটে লাউড স্পিকার ও বড় পর্দায় সার্বক্ষণিক এবং টেলিভিশন ও বেতারে প্রতি ঘণ্টায় আবহাওয়া বার্তা প্রচার করা।

সর্বশেষ খবর