শিরোনাম
মঙ্গলবার, ১২ জুন, ২০১৮ ০০:০০ টা
এবার বাড়ি ফেরার যুদ্ধ

বিত্তবানদের আগ্রহ হেলিকপ্টারে

মানিক মুনতাসির

ঈদে গন্তব্যে পৌঁছাতে বাস-ট্রেনের মতো এরই মধ্যে হেলিকপ্টার সার্ভিসের বুকিংও শেষ হয়ে গেছে। বাণিজ্যিকভাবে হেলিকপ্টার সেবাদানকারী একাধিক সংস্থা সূত্রে জানা গেছে, সড়ক পথে যানজট আর ট্রেন স্ট্রেশনে প্রচণ্ড ভিড় এবং শিডিউল বিপর্যয়ের কারণে আকাশপথে মানুষের আগ্রহ বেড়েছে। সূত্র মতে, বাস, ট্রেন, বিমানের পাশাপাশি হেলিকপ্টার সার্ভিসের চাহিদা অনেক বেড়েছে। সে কারণে ঈদের এখনো চার দিন বাকি থাকলেও হেলিকপ্টার সার্ভিস প্রদানকারী কোম্পানিগুলোর প্রায় সব কপ্টারেরই অগ্রিম বুকিং শেষ হয়ে গেছে। এই সার্ভিস জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। শুধু ঈদ কিংবা উৎসবে নয়, সারা বছরই হেলিকপ্টার সার্ভিসের চাহিদা এখন আগের তুলনায় অনেক বেশি। সিকদার গ্রুপের মালিকানাধীন আর অ্যান্ড আর এভিয়েশনের ম্যানেজার তাসাদ্দুক নূর বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, তাদের চার সিট, সাত সিট এবং ডাবল ইঞ্জিনের সবগুলো কপ্টারের ঈদের বুকিং শেষ হয়ে গেছে। ‘কারা সাধারণত হেলিকপ্টার ভাড়া নেন’ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বৃহৎ করপোরেট কোম্পানি, শিল্পপতি, গার্মেন্টস ব্যবসায়ী এবং ব্যাংক—এই তিন থেকে চারটি ক্যাটাগরির গ্রাহকের কাছে মূলত হেলিকপ্টারের চাহিদা বেশি। বিশেষ করে গার্মেন্টস ব্যবসায়ীরা ঈদের সময় এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যেতে হেলিকপ্টারকে স্বাচ্ছন্দ্যে বেছে নেন। কেননা এতে সময় লাগে খুব কম। আর অনেকটা প্রাইভেট কারের মতো সুবিধা পাওয়া যায়।’

এভিয়েশন কোম্পানি প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, হেলিকপ্টার মূলত ভাড়া দেওয়া হয় ঘণ্টাভিত্তিক। এক্ষেত্রে চার সিটের হেলিকপ্টার প্রতি ঘণ্টায় ৯০ হাজার টাকা, সাত সিটের এক লাখ ১৫ হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকা, আর ডাবল ইঞ্জিনের হেলিকপ্টার প্রতি ঘণ্টায় ১ লাখ ৮০ হাজার থেকে দুই লাখ টাকায় ভাড়া দেওয়া হয়। তবে এই ভাড়া কোম্পানি এবং মৌসুম ভেদে হেরফেরও হয়।

জানা গেছে, শুধু ব্যক্তিগত আর পারিবারিক কাজেই নয়, বিয়ের অনুষ্ঠানেও হেলিকপ্টারের চাহিদা বেড়েছে। সে ক্ষেত্রে ভাড়ারও হেরফের হয়। এমনকি অনেক ব্যবসায়ী-শিল্পপতি ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে নিয়মিত যাতায়াত করেন হেলিকপ্টারযোগে। কেউ কেউ আবার ঢাকায় পরিবার পরিজন নিয়ে বসবাস করলেও চট্টগ্রামে নিয়মিত অফিস করেন। এক্ষেত্রে সময় বাঁচাতে হেলিকপ্টারে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম নিয়মিত যাতায়াত করেন। আবার অনেক করপোরেট কোম্পানি নিজেরা হেলিকপ্টার কিনে বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার না করলেও নিজেদের কাজে ব্যবহার করছেন।

আরও জানা গেছে, বর্তমানে দেশের ১০টির বেশি কোম্পানির ২০টিরও বেশি হেলিকপ্টার রয়েছে। এর মধ্যে দু-একটি বাদে প্রায় সব কোম্পানিই বাণিজ্যিকভাবে হেলিকপ্টার ভাড়া দিয়ে থাকে। নিজেদের কাজেও কপ্টার ব্যবহার করা হয়। তবে এর মধ্যে পাঁচটি কোম্পানি কয়েক বছর আগে থেকেই পুরোপুরিভাবে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে সার্ভিস দিয়ে আসছে। আর যারা নিজেদের ব্যবসায়িক প্রয়োজনে কপ্টার ব্যবহার করেন, তারাও ঈদের সময় হেলিকপ্টার ভাড়া দিয়ে থাকেন। ঈদের আগে ও পরে বাড়তি যাত্রী পরিবহন করতে প্রস্তুত তারা। জানা গেছে, কয়েক বছর ধরে রাজধানীর বিত্তশালীদের অনেকেই ঈদের সময় হেলিকপ্টার সার্ভিসে যাতায়াত করছেন। সড়ক পথের ভোগান্তি এড়িয়ে দ্রুত গন্তব্যে পৌঁছতে লাখ লাখ টাকা ব্যয় করছেন শুধুমাত্র স্বাচ্ছন্দ্যে পরিবার পরিজনের সঙ্গে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করতে।

বর্তমানে হেলিকপ্টার সার্ভিসে বাণিজ্যিক বিপণনে এগিয়ে রয়েছে সিকদার গ্রুপের আর অ্যান্ড আর এভিয়েশন ও সাউথ এশিয়ান এয়ারলাইনস। এ দুই এভিয়েশনের রয়েছে মোট আটটি হেলিকপ্টার। এ ছাড়া ইউনিয়ন গ্রুপের বাংলা ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইনসের দুটি, স্কয়ার গ্রুপের একটি, পিএইচপি গ্রুপের একটি, বিআরবি গ্রুপের একটি, ইয়াংওয়ান (আরিয়ান) গ্রুপের একটি, আকিজ গ্রুপের একটি, বেঙ্গল গ্রুপের বেঙ্গল এভিয়েশনের একটি, চ্যানেল আই পরিবারের মালিকানাধীন আই এভিয়েশনের একটি হেলিকপ্টার রয়েছে। সর্বশেষ এক বা দুই বছর আগে এভিয়েশন ব্যবসায় নাম লিখিয়েছে পারটেক্স গ্রুপ। তারা ঈদ মৌসুমে বাণিজ্যিকভিত্তিতে হেলিকপ্টার সার্ভিস দিয়ে থাকে বলে জানা গেছে। এর বাইরে আরও কয়েকটি কোম্পানি পরীক্ষামূলক এভিয়েশন ব্যবসা করছে। দেশের সবচেয়ে বড় বহর নিয়ে হেলিকপ্টার সার্ভিস দিচ্ছে সিকদার গ্রুপের আর অ্যান্ড আর এভিয়েশন। তাদের বহরে বিভিন্ন ক্যাটাগরির ছয়টি হেলিকপ্টার রয়েছে। আর অ্যান্ড আর এভিয়েশন সারা বছর করপোরেট গ্রাহকদের হেলিকপ্টার ভাড়া দিয়ে থাকে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দেশে সেবাদানকারী সবচেয়ে ব্যয় বহুল হেলিকপ্টার হিসেবে ছয় সিটের ভিআইটি হেলিকপ্টার ভাড়া দেওয়া হয় ঘণ্টায় ২ থেকে আড়াই লাখ টাকায়। আর সবচেয়ে ছোট তিন সিটের হেলিকপ্টারগুলো প্রতি ঘণ্টা ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকায় ভাড়া দেওয়া হয়। এবারের ঈদ উপলক্ষে বিশেষ হেলিকপ্টার সার্ভিস চালুর ঘোষণা দিয়েছিল জনপ্রিয় রাইড শেয়ারিং সার্ভিস উবার ও পাঠাও। বিশেষ এ হেলিকপ্টার সার্ভিসটির নামও জানানো হয়েছিল ‘উঠাও’। তবে গতকাল উবার ও পাঠাওয়ের বাংলাদেশ মিডিয়া উয়িং জানিয়েছে, এ বছর তারা এ ধরনের সার্ভিস দিচ্ছে না।

সর্বশেষ খবর