শিরোনাম
মঙ্গলবার, ১২ জুন, ২০১৮ ০০:০০ টা

লাইলাতুল কদর আজ

মুফতি আমজাদ হোসাইন হেলালী

লাইলাতুল কদর আজ

আজ ২৬তম রোজা। সূর্য ডোবার পর থেকেই চাঁদের হিসাবে ২৭তম রাত শুরু হয়ে যাবে। যে রাতটি লাইলাতুল কদর হওয়ার একটি বিশেষ সম্ভাবনাময় রাত। ভারত উপমহাদেশ বিশেষ করে বাংলাদেশে লাইলাতুল কদর শবেকদর নামে পরিচিত। এই শবেকদরে আল্লাহতায়ালা মহাগ্রন্থ আল-কোরআন অবতীর্ণ করেছেন। এ রাতের ইবাদত হাজার মাসের ইবাদত অপেক্ষা উত্তম। এই রাতটির মর্যাদা বর্ণনাতীত। এক কথায় রাতটি মহিমান্বিত, তাৎপর্যপূর্ণ ও বরকতময়। এ বিষয়টি স্বয়ং আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনের ৯৭ নং সূরা কদরে ঘোষণা দিয়েছেন। ‘আমি একে (আল- কোরআনকে) নাজিল করেছি শবেকদরে। শবেকদর সম্বন্ধে আপনি কি জানেন? শবেকদর হলো এক হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। এতে প্রত্যেক কাজের জন্য ফেরেশতারা ও রুহ অবতীর্ণ হয় তাদের পালনকর্তার নির্দেশক্রমে। এটা নিরাপত্তা, যা ফজর উদয় হওয়া পর্যন্ত অব্যাহত থাকে।’ মৌলিকভাবে আল্লাহতায়ালা এই রাতে পবিত্র কোরআন নাজিল করে এই রাতের মর্যাদা প্রকাশ করেছেন। যাতে রাহমাতুল্লিল আলামিনের উম্মতরা এ রাতের মযার্দা বুঝে তার সঠিক মূল্যায়ন করতে পারে। আর রাহমাতুল্লিল আলামিনের উম্মতরা এই রাতকে কেনই বা মর্যাদা দিবে না? মর্যাদা না দেওয়ার কোনো কারণ অন্তত আমি খুঁজে পাই না। এক রাতে ইবাদত করলে যদি হাজার মাস থেকে বেশি ফজিলত পাওয়া যায়, তাহলে এই সুবর্ণ সুযোগ হাতছাড়া করাটা নিতান্তই বোকামি হবে। উম্মতে মোহাম্মদীর হায়াত পূর্ব যুগের উম্মতের মতো দীর্ঘ নয়। তারা শত শত বছর হায়াত পেয়ে আল্লাহর ইবাদতে নিমগ্ন ছিলেন। যেমন— বনি ইসরাঈলের এক ব্যক্তি আল্লাহর প্রিয় বান্দা হওয়ার জন্য এক হাজার বছর শুধু জিহাদে কাটিয়েছেন। হজরত জাকারিয়া (আ.), হজরত আইয়ুব (আ.), হজরত হিজকিল (আ.) ও হজরত ইউশা ইবনে নূন (আ.) এই চারজন নবী শুধু আশি বছর আল্লাহর ইবাদতে নির্জনে ধ্যানমগ্ন ছিলেন আল্লাহর সান্নিধ্য পাওয়ার জন্য। তবে এখানে রাহমাতুল্লিল আলামিনের উম্মতদের জন্য আনন্দের সংবাদ হলো, তাদের দীর্ঘ হায়াত না থাকলে কি হবে! আল্লাহপাক তাদের লাইলাতুল কদর বা মহিমান্বিত একটি রাত হাদিয়াস্বরূপ দান করেছেন। যাতে তাদের ইবাদত কোনো অংশেই পূর্ব যুগের উম্মত থেকে কম না হয়। তাই তো রাহমাতুল্লিল আলামিনের খাঁটি উম্মতরা বরকতময় রাতটি পাওয়ার জন্য অধীর আগ্রহে থাকে। কবে আসবে কাঙ্ক্ষিত রাতটি। এই রাতে অধিক মাত্রায় ইবাদত করে নিজেকে মহান রাব্বুল আলামিনের কাছে উৎসর্গ করে দিতে হবে। যেকোনোভাবে হোক না কেন আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টি হাসিল করতে হবে। শর্ত হলো শবেকদরের বরকত বুঝতে হবে। বুঝে আমলে রূপান্তরিত করতে হবে। তাহলেই আল্লাহপাকের সন্তুষ্টি বা রেজা পাওয়া যাবে। অপরদিকে এই রাতকে আল্লাহপাক উম্মতে মুহাম্মদীর কাছে গোপন রেখেছেন। যাতে মানুষ রমজানের শেষ ১০ দিনের বেজোড় রাতে তাকে তালাশ করে। প্রিয় পাঠক! সেই বেজোড় রাতের একটি হলো ২৭তম রাত। আর এই রাতের তালাশ করতে হবে নামাজ, তেলাওয়াত ও জিকির-আজকারের মাধ্যমে।  আল্লাহপাকের দরবারে সর্বপ্রকার পাপকর্ম এবং পাপকর্মের প্রেরণা বিসর্জন দিয়ে, একনিষ্ঠভাবে পাপ মার্জনার ভিক্ষা চেয়ে, এই রাতের সব বরকত পাওয়ার জন্য দোয়া করতে হবে। আল্লাহপাক সব মুমিন-মুসলমান ভাইদের পবিত্র লাইলাতুল কদরের ফজিলত বুঝে সে অনুযায়ী আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

লেখক : মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও খতিব, বারিধারা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর