মঙ্গলবার, ১২ জুন, ২০১৮ ০০:০০ টা

আমাকে জাপার সাবেক মন্ত্রী বললে মামলা করব : অর্থমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

জাতীয় সংসদের বাজেট আলোচনায় অর্থমন্ত্রীর সমালোচনা করা হলেও তিনি নীরব ছিলেন কিন্তু তিনি জাতীয় পার্টির এমপি ছিলেন, এই দাবি করতেই চটে গেলেন প্রবীণ এই রাজনীতিবিদ। প্রতিবাদ করলেন। বললেন, নো। কখনো জাতীয় পার্টির এমপি বা সদস্য ছিলাম না। ভবিষ্যতে আমাকে জাতীয় পার্টির সাবেক মন্ত্রী বললে আইনের আশ্রয় নিতে বাধ্য হব বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন অর্থমন্ত্রী।

স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে গতকাল বাজেট আলোচনার সময় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, আমি আগেও কয়েকবার বলেছি কিন্তু জাতীয় পার্টির সদস্যরা সেটা অস্বীকার করে যান। আজকেও অস্বীকার করেছেন। আমি আবারও স্পষ্টভাবে বলতে চাই, আমি কোনো দিন জাতীয় পার্টির সদস্য ছিলাম না। কোনো দিন জাতীয় পার্টির মন্ত্রীও ছিলাম না। তিনি বলেন, জেনারেল এরশাদ যখন সামরিক শাসক ছিলেন সেই সময় মন্ত্রী ছিলাম, জাতীয় পার্টির তখন জন্মও হয় নাই। জাতীয় পার্টি জন্ম হওয়ার আগে আমি সেই সরকার থেকে পদত্যাগ করে চলে যাই। কাজেই আমার অনুরোধ হবে ভবিষ্যতে যেন জাতীয় পার্টির সদস্যরা এ কথা মনে রাখেন, যদি মনে না রাখেন তাহলে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করব। ক্ষুব্ধ অর্থমন্ত্রী আদালতে যাওয়ারও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন জাপা এমপিদের বিরুদ্ধে। এ সময় জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ অর্থমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে বলেন, জাতীয় পার্টি গঠনের পূর্বেই এরশাদ সাহেবের সামরিক শাসনের সময় অর্থমন্ত্রী হিসেবে আবুল মাল আবদুল মুহিত সাহেব বাজেট দিয়েছিলেন। উনি (অর্থমন্ত্রী) কখনো জাতীয় পার্টি করেননি। তবে আমি আশ্বস্ত করতে চাই, ভবিষ্যতে তার (অর্থমন্ত্রী) মতো জ্ঞানী, অভিজ্ঞ ব্যক্তিকে জাতীয় পার্টি তাদের দলে স্থান দেবে না। এর জন্য (জাতীয় পার্টি ও মন্ত্রী বলায়) আপনাকে (অর্থমন্ত্রী) আদালতে যেতে হবে না। কিন্তু আপনি ব্যাংক ডাকাতদের যে প্রটেকশন দিয়েছেন তার জন্য আদালতে যেতে হবে। পরে জাতীয় পার্টির সেলিম উদ্দিন বলেন, আমি তাকে (অর্থমন্ত্রী) জাতীয় পার্টির আমলের মন্ত্রী কথাটি বলিনি। তিনি খুবই শ্রদ্ধেয় ব্যক্তি কিন্তু সংসদে আমরা সহকর্মী। অর্থমন্ত্রী বয়স্ক হলেও অন্য সংসদ সদস্যকে এভাবে ধমকানো তার সঠিক হয়নি।

ব্যাংকিং খাতের অনিয়মে সরব সংসদে নীরব অর্থমন্ত্রী : ব্যাংকিং খাতের অব্যবস্থাপনা ও লুটপাট নিয়ে গতকালও সরব ছিল সংসদ। অর্থমন্ত্রীর উপস্থিতিতে সরকারি দল ও বিরোধী দলের এমপিরা সমালোচনা করলেও এ বিষয়ে একটি কথাও বলেননি অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। গতকাল সংসদের বাজেট অধিবেশনে চলতি ২০১৭-১৮ অর্থ বছরের সম্পূরক বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে এমপিরা ব্যাংকিং খাতের সংস্কার ও ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান। অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ড. আবদুর রাজ্জাক বলেন, সাধারণ মানুষ যখন ঋণখেলাপি হয়, তাদের বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট হয়, তাদের কোমরে দড়ি দিয়ে বেঁধে নেওয়া হয়, তাহলে যারা এই ব্যাংকের লুটের সঙ্গে জড়িত, তাদেরকে কেন কোমরে দড়ি দিয়ে বেঁধে আদালতে নেওয়া হচ্ছে না? আমি এই সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের অবজারভেশনকে অভিনন্দন জানাই। তিনি আরও বলেন, পৃথিবীর সব দেশেই কিছু দুষ্ট ও দুর্বৃত্ত থাকে, যারা এসব করে থাকে। আমাদের দেশেরও ব্যাংকিং খাতে কিছুটা অনিয়ম হয়েছে। এতে ব্যাংকিং খাতের ওপর চাপ পড়েছে। দিনদুপুরে যারা বেসিক ব্যাংকসহ দু-একটি ব্যাংকে অনিয়ম করেছে, তারা সবাই এখন বিচারের মুখোমুখি। ব্যাংক লুটের সঙ্গে জড়িত সরকার কাউকেই ছাড় দিচ্ছে না। তবে ব্যাংকিংব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে এমন অভিযোগ মোটেই সত্য নয় বরং বাংলাদেশের অর্থনীতি সুদৃঢ় অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে। জাতীয় পার্টির ফখরুল ইমাম বলেন, প্রতিবছরই বড় বাজেট দিয়ে জনগণকে বড় স্বপ্ন দেখানো হয়। কিন্তু গত ১০ বছরে একটি বাজেটও পুরোপুরি বাস্তবায়ন হয়নি। ব্যাংক খাতকে পরিপূর্ণ পরিবারতন্ত্রে রূপ দেওয়া হয়েছে। ব্যাংকগুলোর অবস্থা খুবই খারাপ, কোনো রেগুলেটরি কমিটি নেই। ১ লাখ ২৫ হাজার ঋণখেলাপি রয়েছে। কারা ঋণখেলাপি, কিসের জন্য ঋণখেলাপি আজ পর্যন্ত দেশবাসীকে জানানো হয়নি, তাদের নাম প্রকাশ করা হয়নি। দেশ থেকে বিপুল অর্থ পাচার বন্ধ করা না গেলে প্রবৃদ্ধি জনগণের কোনো কাজে আসবে না। কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী বলেন, আমরা ঋণ করে ঘি খাই না, জনগণের কল্যাণ, সমৃদ্ধি ও দেশের উন্নয়নে ব্যয় করি। বাংলাদেশ যে আজ উন্নয়নের মহাসড়কে, উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হয়েছে— এই সার্টিফিকেট পয়সা দিয়ে কেনা যায় না। বাংলাদেশের অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রার কথা আজ কেউই অস্বীকার করতে পারে না, পারবেও না।

তিনি আরও বলেন, অনেক আলোচনা হয়েছে, অর্থমন্ত্রী সব শুনেছেন, আসা করি অর্থমন্ত্রী যথাযথ ব্যবস্থা নেবেন। একই সঙ্গে উনি এ বিষয়ে কিছু বলবেন।

সম্পূরক বাজেটের ওপর সমাপনী বক্তব্যে অংশ নিয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, গতবার সম্পূরক বাজেট নিয়ে যেসব আলোচনা হয়েছিল তাতে আমার ইচ্ছা ছিল সম্পূরক বাজেটটাকে আরেকটু অর্থবহ করা এবং সেটা বিস্তৃততর আলোচনার ব্যবস্থা করা। এটা এ বছর আমি করতে পারিনি সে জন্য খুবই দুঃখিত। আশা করছি ভবিষ্যতে এ ধরনের একটা ব্যবস্থা হবে। সম্পূরক বাজেটে আমরা যে পরিবর্তন করেছিলাম সেটা খুবই সামান্য। মোটামুটিভাবে আগে বিভিন্ন বিভাগে যে ক্ষমতা এই সংসদ দিয়েছিল সেটা যতদূর সম্ভব রক্ষা করেছি। তবে কিছুটা আয়-ব্যয় এদিকে সেদিক হয়েছে। সেটিকে আইনগত ভিত্তি দিতেই এই সম্পূরক বাজেট। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের টানা দুই টার্মে অর্থাৎ ১০ বছরে বাজেট পাঁচ লাখ কোটিতে উন্নীত হয়েছে। আগে সংসদ সদস্যরা এক লাখ কোটি টাকার বাজেট পাস করতেন, এখন করছেন পাঁচ লাখ কোটি টাকা। আর সংবিধানই সম্পূরক ব্যয়ের সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে। সম্পূরক বাজেট পাস হয় সংবিধান সম্মতভাবেই। বরাদ্দের অতিরিক্ত খরচ করার পর তা জায়েজ করতে সম্পূরক বাজেট পাস করা হয়। সংবিধানে এই ক্ষমতা দিয়েছে বলে সংবিধান প্রণেতাদের ধন্যবাদ।

সর্বশেষ খবর