শিরোনাম
বুধবার, ১৩ জুন, ২০১৮ ০০:০০ টা

ঢাকার মতো বিশ্বকাপ উন্মাদনা নেই মস্কোয়

রাশেদুর রহমান, মস্কো থেকে

লুঝনিকি স্টেডিয়াম থেকে বেরিয়ে ডানদিকে কিছু দূর হাঁটলেই মস্কোভা নদী। শহরের নামকরণ এই নদীর নামেই। মস্কোর বুকচিরে এঁকে-বেঁকে মস্কোভা বয়ে গেছে দূর-বহুদূর। লুঝনিকির পাশেই মস্কোভা নদীর তীর ঘেঁষে আছে গোর্কি পার্ক। অবসর বিনোদনে এই পার্কের গুরুত্ব মস্কোবাসীর কাছে অনেক। হাজারো মানুষ প্রতিনিয়ত আপনমনে হেঁটে বেড়াচ্ছে। ধুলাবালিমুক্ত তাজা বাতাস সেবনের উপযুক্ত স্থান। বিখ্যাত উপন্যাস ‘মা’র লেখক ম্যাক্সিম গোর্কির নাম অনুসারে পার্কের নাম। মস্কোভা নদীর ক্রুজশিপগুলো বিরাটাকারের হাঁসের মতোই ভেসে বেড়ায় এদিক-ওদিক। লুঝনিকি স্টেডিয়াম থেকে খুব একটা দূর নয় মস্কো স্টেট ইউনিভার্সিটি। মস্কোভা নদীর পরই বিশ্ববিদ্যালয়। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের চত্বরেই ভরোবিওভি গোরির স্প্যারো হিলে ফিফা সাজিয়েছে ফ্যানদের উৎসব মঞ্চ। এই এলাকাটা গত কয়েকদিন ধরেই লোকারণ্য। ইকার ক্যাসিয়াসদের মতো গ্রেটরা এখানে ভক্তদের নাগালে ধরা দিচ্ছেন প্রতি নিয়ত। ঢাকা-ঢোল বাজছে, সংগীত চলছে, বিশ্বকাপের আগমনী গান শোনা যায় এখানেই। এবার উদ্বোধনী আর ফাইনালের মঞ্চ লুঝনিকির বর্ণনায় আসা যাক। মাঠের ভিতরটা এখনো ঘোমটা দেওয়া। সেই ঘোমটা খোলার অনুমতি নেই কারও। খালি হাতে এগিয়ে গেলেও তেড়ে আসে প্রহরী। ওদিকে যাবার অনুমতি নেই। যেন গোপনে কোনো শক্তিশালী মিসাইল তৈরি করছেন রুশ বিজ্ঞানীরা! তবে দূর থেকে সৌন্দর্যের ছিটেফোঁটা উপভোগে বাধা নেই। ক্যামেরা কিংবা মোবাইল বের না করলেই হলো। দূর থেকে ভিতরের সৌন্দর্য দেখার তেমন সুযোগ নেই। তবে বাইরের সৌন্দর্যও কম নয়। লুঝনিকি কমপ্লেক্সটা বিশাল এলাকাজুড়ে। মূল স্টেডিয়ামের সদর দরোজায় দাঁড়িয়ে আছে বক্তব্যরত লেনিনের বিশাল কালো মুর্তি। যেন এখুনি বিপ্লবের ঘোষণা দিবেন তিনি! পাশেই ছোট্ট একটা পার্ক। সেখানে বসার ব্যবস্থা করা আছে। ইচ্ছে হলেই ফুটবল ফ্যানরা ওখানে বসে আড্ডা জমাতে পারে। মূল ফটকের পাশে নানা রকমের স্টোর। আর আছে বিশাল এক মিডিয়া সেন্টার। যেখানে ৩৯০ জন রিপোর্টার একসঙ্গে বসে কাজ করতে পারেন। এমাথা-ওমাথা করতেই চলে যায় অনেকটা সময়। কেবল লুঝনিকি স্টেডিয়াম নয়, এর আশপাশে কয়েক বর্গ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে আছে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা। কসাক সৈনিকরা রাস্তায় ঘুরে বেড়ায়। সন্দেহ হলেই প্রশ্ন ছুড়ে দেয়। কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়েই চলছে মহাড়ম্বরপূর্ণ আয়োজন। কিন্তু উৎসবের মঞ্চ লুঝনিকি স্টেডিয়াম এলাকা থেকে বের হলেই থমকে যেতে হয়। এটা কী সত্যিই কোনো বিশ্বকাপের শহর!  সেরেমাতিয়েভো বিমানবন্দর থেকে হোটেল মস্কোভিচের দূরত্ব প্রায় ৫০ কিলোমিটার। রাস্তার দুই ধারে তন্নতন্ন করে খুঁজলেও চোখে পড়ে না কোনো পোস্টার-ফেস্টুন-বিলবোর্ড। মাঝে-মধ্যে রুশ সুন্দরী মডেলদের কিছু বিজ্ঞাপন চোখে পড়লেও মেসি-নেইমার-রোনালদোরা সেখানে প্রায় অনুপস্থিত। বিশ্বকাপের বড় কোনো ব্যানার নেই কোথাও। বাইরে উৎসব করার ঢাকাইয়া চলটা বুঝি এখানে নেই। সত্যি বলতে কি ঢাকা শহরে যেভাবে বিশ্বকাপের উন্মাদনা চোখে পড়ছে। মস্কোয় তা এখন পর্যন্ত দেখা যায়নি। এই ক্ষেত্রে মনে হয় ঢাকার কাছে হার মেনেছে মস্কো। তবে ভিতরে ভিতরে ঠিকই রুশীয়রা উত্তেজিত। কখন আসবে সেই প্রহর? অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড ঝুলিয়ে মেট্রোতে চড়লেই আধো আধো ইংরেজি জানা রুশীয়রা ছুড়ে দেয় নানান প্রশ্ন। ইংরেজি না জানলে কেবল ‘ফুতবল, ফুতবল’ শব্দ উচ্চারণ করে সাধুবাদ জানায়। মস্কো এখন হাজারো রিপোর্টারের ভিড়। ঘণ্টাখানেক লাইনে দাঁড়িয়ে অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড তোলার সময়ই তা অনুমান করা গেছে। তার চেয়েও বহুগুণ বেশি ভক্তের দল। লুঝনিকি স্টেডিয়ামকে ঘিরে উৎসবে মেতে আছে সবাই। ব্যয় এতটুকুই। মস্কো শহরে আশপাশে উন্মাদনা চোখে পড়ছে না।

সর্বশেষ খবর