বৃহস্পতিবার, ১৪ জুন, ২০১৮ ০০:০০ টা
ট্রাম্প-কিম বৈঠক

আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে নতুন হিসাব-নিকাশ

প্রতিদিন ডেস্ক

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও উত্তর কোরিয়ার শীর্ষ নেতা কিম জং উনের মধ্যে ঐতিহাসিক বৈঠক ঘিরে প্রত্যাশা-প্রাপ্তির হিসাব-নিকাশ চলছে বিশ্বজুড়ে। চুক্তিতে আমেরিকা নাকি উত্তর কোরিয়া, কে লাভবান হয়েছে— বিশ্লেষণে ব্যস্ত পর্যবেক্ষকরা। ট্রাম্প কোরীয় অঞ্চলে ‘যুদ্ধমহড়া’ বাতিলের ঘোষণা দেন। তার এ পদক্ষেপকে পিয়ংইয়ংয়ের জন্য ‘বড় ধরনের ছাড়’ বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা। কিম পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণের অঙ্গীকার করেছেন— একেও ছোট করে দেখার অবকাশ নেই বলে উল্লেখ করেছেন তারা। তবে এসব চুক্তি স্বাক্ষরিত হলেও কবে নাগাদ বাস্তবায়ন হবে সে বিষয়ে চুক্তিপত্রে কোনো উল্লেখ না থাকায় তা নিয়ে তৈরি হয়েছে ধোঁয়াশা। বৈঠক আর পরবর্তী সমঝোতা নিয়ে ট্রাম্পের দল রিপাবলিকান পার্টিতে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। তবে ডেমোক্র্যাটরা একে ‘প্রচারণামূলক’ পদক্ষেপ হিসেবেই দেখছেন। বিবিসির উত্তর আমেরিকাবিষয়ক সাংবাদিক অ্যান্থনি জুরকার এসব কথা জানিয়েছেন। তিনি আরও জানান, দুই বছর আগে বারাক ওবামা যখন কিউবা সফরে যান তখন অনেকেই এর সমালোচনা করেছিলেন। কনজারভেটিভরা সমালোচনা করলেও প্রশংসা করেছিলেন লিবারেলরা। ট্রাম্পের ক্ষেত্রে ঘটনা ঘটেছে পুরো উল্টো। ট্রাম্পকে সব সময়ই সমর্থন দিয়ে আসা কনজারভেটিভ ফক্স নিউজ এ বৈঠকের প্রশংসা করেছে। আর ডেমোক্র্যাটরা একে পাবলিসিটি স্টান্ট হিসেবে মনে করছেন। এখান থেকে সাফল্য আসার সম্ভাবনাও কম বলে করেন তারা। কংগ্রেসে থাকা রিপাবলিকানরা মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। স্বাভাবিকভাবে এ ইস্যুতে অনেক কথা হয়েছে। সিনেট রিপাবলিকান নেতা মিচ ম্যাককনেল বলেন, বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন তিনি। বিস্তারিত প্রকাশের পর কী হয় তার জন্য অপেক্ষা করছেন। কয়েকজন কনজারভেটিভ তো যুক্তরাষ্ট্র ও উত্তর কোরিয়ার পতাকা পাশাপাশি লাগানোরও সমালোচনা করেছেন। মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী একটি দেশের সঙ্গে ট্রাম্পের সৌহার্দ্যপূর্ণ আচরণ মেনে নিতে পারেননি তারা। মঙ্গলবারের এ ঘটনার পর যুক্তরাষ্ট্র ও বিশ্বরাজনীতি গত ১৬ মাস থেকে একদম উল্টে গেছে বলেও দাবি করেন অ্যান্থনি জুরকার। তবে বিশেষজ্ঞদের দাবি, স্বাক্ষরিত নথিতে কোনো কিছুর বিস্তারিত উল্লেখ নেই। বিশেষ করে কীভাবে উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ কর্মসূচি সম্পন্ন হবে সে বিষয়েও স্পষ্ট করে কিছু বলা হয়নি। এ ছাড়া দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে যৌথ সামরিক মহড়া বন্ধ রাখায় আঞ্চলিক সহযোগীরা দুশ্চিন্তায় পড়েছে। মঙ্গলবার ট্রাম্প-কিম শীর্ষ বৈঠককে উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম বিপুল সাফল্য হিসেবে তুলে ধরেছে। ট্রাম্প দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে যৌথ সামরিক মহড়াকে ‘উসকানিমূলক’ হিসেবে স্বীকার করে তা বন্ধ রাখার যে ইঙ্গিত দিয়েছেন, সে বিষয়টি বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে। উত্তর কোরিয়ার প্রাপ্তির তালিকা আরও দীর্ঘ। কোরীয় উপদ্বীপে পরমাণু নিরস্ত্রীকরণের অঙ্গীকার করে তারা নিরাপত্তা গ্যারান্টির প্রতিশ্রুতি আদায় করতে পেরেছে। সম্পর্কের উন্নতি হলে নিষেধাজ্ঞাও তুলে নেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন ট্রাম্প। যথেষ্ট অগ্রগতি হলে দক্ষিণ কোরিয়া থেকে মার্কিন সৈন্যও প্রত্যাহার করতে চান তিনি। উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা কেসিএনএ ফলাও করে বিষয়গুলো উল্লেখ করেছে। কোনো স্পষ্ট অগ্রগতি ছাড়াই উত্তর কোরিয়ার প্রতি ট্রাম্প প্রশাসনের এমন নরম মনোভাবের কড়া সমালোচনা শোনা যাচ্ছে; বিশেষ করে ট্রাম্প যেভাবে দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে সামরিক মহড়া বন্ধ রাখার সিদ্ধান্তের পক্ষে ব্যয়ভারের বিষয়টি তুলে ধরেছেন, এর ফলে আমেরিকায় অনেক মহল ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। গোটা অঞ্চলে মার্কিন স্বার্থ বজায় রাখতে দক্ষিণ কোরিয়ায় মার্কিন সৈন্যদের উপস্থিতির গুরুত্বের কথা মনে করিয়ে দিয়েছেন রিপাবলিকান দলেরই সংসদ সদস্য লিন্ডসে গ্রাহাম। ১৯৫০-৫৩ সালের কোরিয়া যুদ্ধের পর থেকে প্রায় ২৮ হাজার ৫০০ মার্কিন সৈন্য দক্ষিণ কোরিয়ায় মোতায়েন রয়েছে। সিঙ্গাপুর থেকে আমেরিকায় ফেরার পথে ট্রাম্প নিজে এক টুইট বার্তায় এ বৈঠকের সাফল্য তুলে ধরেছেন। তার মতে, ‘পৃথিবী এক পরমাণু বিপর্যয় থেকে পিছিয়ে এসেছে।’ দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন জে ইনের সরকারও সামরিক মহড়া বন্ধ রাখার আচমকা ঘোষণার ফলে বিস্ময় প্রকাশ করেছে। সে দেশের অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করছেন, উত্তর কোরিয়া তার উদ্দেশ্য পূরণ করতে পেরেছে। পরমাণু শক্তিধর দেশ হিসেবে সমান মর্যাদা নিয়ে তারা মার্কিন প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করে সামরিক মহড়া বন্ধ করাতে সফল হয়েছে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও গতকাল সিউলে পৌঁছেছেন। আজ তিনি প্রেসিডেন্ট মুন এবং পরে দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠকে উত্তর কোরিয়া সম্পর্কে ট্রাম্প প্রশাসনের অবস্থান তুলে ধরবেন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর