মঙ্গলবার, ১৯ জুন, ২০১৮ ০০:০০ টা

তিন সিটির ভোটযুদ্ধে বিএনপি পাশে চায় যুক্তফ্রন্টকে

শফিউল আলম দোলন

আগামী ৩০ জুলাই একযোগে অনুষ্ঠেয় তিন সিটি করপোরেশনের ভোটযুদ্ধে ড. কামাল হোসেন ও অধ্যাপক ড. বদরুদ্দোজা চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন যুক্তফ্রন্টকে সঙ্গে চায় বিএনপি। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ফ্রন্টের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করছেন। তিন সিটির নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টকে বিএনপি পাশে পাবে এমনটাই মনে করছে। সূত্র জানায়, এ বিষয়ে যুক্তফ্রন্ট নেতারা ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছেন। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বৃহত্তর ঐক্য প্রক্রিয়া গঠনের কাজেও সমন্বয় করছেন। এ ব্যাপারে ফ্রন্ট নেতারাও সম্মত হয়েছেন। তবে তারা চাচ্ছেন আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং স্থানীয় নির্বাচনের ঐক্য প্রক্রিয়া একসঙ্গেই চূড়ান্ত করতে। এ বিষয়ে ফ্রন্ট নেতারা প্রতিশ্রুতিও চেয়েছেন বিএনপির কাছ থেকে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল যুক্তফ্রন্ট নেতা মাহমুদুর রহমান মান্নার ‘ক্ষমতায় গিয়ে ভুলে গেলে চলবে না’— এমন বক্তব্যের জবাবেও ইতিবাচক প্রতিশ্রুতি দিয়ে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্যের ওপরই গুরুত্বারোপ করেছেন। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ বিষয়ে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, দেশের বিদ্যমান সংকট উত্তরণে জাতীয় ঐক্যের কোনো বিকল্প নেই। সব দেশপ্রেমিক ও গণতন্ত্র প্রিয় মানুষকেই যে কোনো মূল্যে ঐক্যবদ্ধ হয়ে বর্তমান স্বৈরাচার সরকারকে উত্খাতে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। অন্যথায় বাংলাদেশে কোনো দিনই গণতন্ত্র আর ফিরে আসবে না। বরং দেশের অস্তিত্ব নিয়েই প্রশ্ন উঠবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, স্থানীয় তথা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি ও ২০-দলীয় জোটের মেয়র প্রার্থীদেরই প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে সমর্থন জানাবে যুক্তফ্রন্টের দলগুলো। এর বাইরে তারা মেয়র পদে কোনো প্রার্থী দেবেন না। পাশাপাশি আগামী ঈদুল আজহার আগ থেকেই যুগপৎ কর্মসূচিতে যাওয়ারও কথা রয়েছে।

যুক্তফ্রন্ট নেতা ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন এ বিষয়ে বলেন, বর্তমান সময়ে জাতীয় বা স্থানীয় যে নির্বাচনের কথাই বলেন না কেন, সেটি অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে করতে হলে আমাদের প্রয়োজন জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলা। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ছাড়া এদেশের মানুষের মুক্তি আসবে না। দেশ বর্তমানে ভয়াবহ এক দুঃসময় অতিক্রম করছে। মানুষের জানমালের কোনো নিরাপত্তা নেই। রাষ্ট্রীয় বাহিনীগুলো একে অপরের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সারাদেশে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে— অর্থের বিনিময়ে শীর্ষ সন্ত্রাসীদের পর্যন্ত ছেড়ে দিচ্ছে। এসব হত্যাকাণ্ডের বিচার করতে হবে। আর ক্ষমতাসীন দলের বিপরীতে যে কোনো নির্বাচনে জিততে হলে এবং জনগণের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হলে অবশ্যই আমাদের জাতীয় ঐক্যের প্রয়োজন। সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলন করতে হবে।

একই বিষয়ে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমরা চাই সব দল ও মতের নেতাদের সঙ্গেই ঐক্য করতে হবে। আর সে ঐক্য শুধুমাত্র স্থানীয় নির্বাচন নয়। জাতীয় পর্যায়ের যে কোনো সংকট মোকাবিলায়ই আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। এ ছাড়াও জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব, কৃষক শ্রমিক লীগের বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী ও নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্নাসহ যুক্তফ্রন্টের নেতৃবৃন্দ এই ঐক্য প্রক্রিয়ার সঙ্গে একমত পোষণ করেন। প্রক্রিয়াটি চূড়ান্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তারা স্থানীয় নির্বাচনেও অঘোষিতভাবে একক প্রার্থী দেবেন।

রাজশাহী, বরিশাল ও সিলেট সিটি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা : আগামী ৩০ জুলাই রাজশাহী, বরিশাল ও সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। গত বুধবার ইসি আনুষ্ঠানিকভাবে এই তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে। একযোগে তিন সিটিতে এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এই নির্বাচনে অংশ নিতে প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া যাবে ২৮ জুন পর্যন্ত। তফসিল অনুযায়ী, ২৮ জুন রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন। মনোনয়ন বাছাইয়ের তারিখ ১-২ জুলাই। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ৯ জুলাই। এরপর ভোটগ্রহণ করা হবে আগামী ৩০ জুলাই। তবে এই তিন সিটির আগে ২৬ জুন গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোটগ্রহণ হবে। গত ১৫  মে খুলনা সিটির সঙ্গে গাজীপুরে ভোট হওয়ার কথা থাকলেও আদালতের আদেশে তা আটকে গিয়েছিল। খুলনা ও গাজীপুরের মতো রাজশাহী, বরিশাল ও সিলেটেও আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তাকে সংশ্লিষ্ট সিটি নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা করা হয়েছে। এই সিটি নির্বাচনের পর চলতি বছরের ৩০ অক্টোবর থেকে আগামী ২৮ জানুয়ারির মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আয়োজন করতে হবে নির্বাচন কমিশনকে।

সর্বশেষ খবর