মঙ্গলবার, ১৯ জুন, ২০১৮ ০০:০০ টা

এদিকে মেসি, ওদিকে নেইমার

মস্কোর মেট্রো (পাতাল ট্রেন) ছোটার সময় খুব গমগম আওয়াজ হয়। এমনটা সম্ভবত সব মেট্রোতেই হয়। কিন্তু সেদিন মেট্রোর আওয়াজকে ছাপিয়ে গেল ‘ভামোস আর্জেন্টিনা’ কোরাস। আর্জেন্টাইন সমর্থকরা সুর করে কোরাস গাইতে থাকলে সবকিছুই তার নিচে চাপা পড়ে। মেট্রোতে চড়েও তাই শোনা যাচ্ছিল, আর্জেন্টিনার কোরাস। ওদের কোরাস কিছুটা থামতেই একে-ওকে প্রশ্ন করে ইংলিশটা মোটামুটি জানে এ রকম একজনকে  পাওয়া গেল। আপনাদের কোরাসের অর্থটা কী বাহে? প্রশ্ন শুনে তিনি এক গাল হেসে বললেন, অর্থ বলাটা তার পক্ষে সম্ভব নয়। জোরাজুরি করতে বললেন, অনেকটা এরকম; ‘কাম অন আর্জেন্টিনা, আমাদের জয় উপহার দাও। কাম অন মেসি, আমাদের গোল উপহার দাও।’ এই কোরাস চলতেই থাকে। বাসে, ট্রামে, মেট্রোতে, গ্যালারিতে, করিডোরে, রাস্তায়, ফ্যানজোনে, সবখানে। ঈদের দিনে মাঠের লড়াইয়ে কী হলো, জেনেছে গোটা দুনিয়া। আগুয়েরো গোল করেও দলকে   জেতাতে পারেননি। মেসি পেনাল্টি মিস করেছেন। পোলিশ রেফারি মারসিনিয়াক আরও একটা পেনাল্টি দেননি। ম্যাচের বাইরের খবরটা একটু অন্যরকম। মেসি-সিগুর্ডসনরা বিশ্বকাপের মহামঞ্চে ফুটবল যুদ্ধে ঘাম ঝরাচ্ছেন। কেউ কেউ রক্তও! অন্যদিকে গ্যালারিতে চলছে ভিন্ন লড়াই। ‘ভাইকিং চ্যান্ট’ নিয়ে বেশ মাতামাতি হয়েছে গত কয়েক বছরে। আইসল্যান্ড সমর্থকদের বিখ্যাত ‘হু, হু, হু’ শব্দের সঙ্গে তাল মিলিয়ে হাত তালি দেওয়ার রেওয়াজটা বেশ পরিচিত। সেই ভাইকিং চ্যান্টে মেসিরা যেন ভড়কে না যান, সেজন্য পূর্ণ প্রস্তুত ছিল আর্জেন্টাইন সমর্থকগোষ্ঠী। ভাইকিং চ্যান্ট শুরু হতেই ‘ভামোস আর্জেন্টিনা’ কোরাসের সুর এতটা উঁচুতে উঠেছে যে সব চাপা পড়েছে এর নিচে। বার কয়েক চেষ্টা করে ভাইকিং চ্যান্ট করতে ব্যর্থ হওয়ায় কৌশল বদলে দেয় আইসল্যান্ড সমর্থকরা। দ্রুততালে নাকাড়া বেজে ওঠে। হাততালির পদ্ধতি বদলে যায়। দ্রুততালে ‘হু, হু, হু’ করতে থাকে আইসল্যান্ড সমর্থকদের কয়েকটা ব্যাটালিয়ন। গ্যালারির চারদিকে আর্জেন্টাইন সমর্থকদের ভিড়ে স্থানে স্থানে জটলা বেধে বসেছিল আইসল্যান্ডাররা। নতুন পদ্ধতির এই সমর্থনে ক্ষণিকের জন্য থমকে যায় আকাশি-নীল জার্সিধারীরা। তবে বাঁশির চিৎকারে আবারও তারা ডুবিয়ে দেয় আইসল্যান্ড সমর্থকদের। মাঠে মেসি-আগুয়েরোরা নৈতিকভাবে আইসল্যান্ডের কাছে পরাজিত হলেও গ্যালারিতে জয় ছিল আর্জেন্টিনারই। এমনকি খেলাটা ১-১ ড্র হওয়ার পরও তারা উৎসবে এতটুকু কমতি করেনি। স্টেডিয়ামের বাইরে বেরিয়েই ‘ভামোস আর্জেন্টিনা’ কোরাস ধরে মনের আনন্দে আপন আপন গন্তব্যের পথ ধরেছে। আর্জেন্টাইন সমর্থকদের মধ্যে কেমন যেন খেয়ালি ভাব আছে। দলের সমর্থনটা ওরা কখনোই ছাড়ে না। ফলাফল যাই হোক, কখনো হতাশ হয় না। ওরা আনন্দ করে, উচ্ছ্বাস করে। আর সমর্থন করে। মস্কো ‘ভামোস আর্জেন্টিনায়’ মেতে ওঠার দিনই প্রায় ১ হাজার ১০০ কিলোমিটার দূরের শহর রুস্টভ অন ডনে ব্রাজিলিয়ান ভক্তরা ‘ও-লে, ও-লে, ও-লে, ব্রা-জি-ল’ সুরে কাঁপিয়ে তুলেছিল চারদিক। ঈদের পরেরদিনই ছিল তাদের ম্যাচ। ব্রাজিল মুখোমুখি হলো সুইজারল্যান্ডের। নেইমার চুলে নতুন ছাঁট দিয়েছেন।  পেছন দিকে নিম্নমুখী পিরামিড। রঙেও আছে বৈচিত্র্য। পেছন দিকে কালো, সামনের দিকে সোনালি। নেইমারের চুলের ছাঁট নিয়ে সমর্থকরা আহ্লাদিত। কিন্তু নেইমার ও মেসির মতোই তাদের খুশি করতে ব্যর্থ হয়েছেন। ব্রাজিলও ১-১। কটিনহোর গোল ব্রাজিলকে জয় উপহার দিতে পারেনি। কেবল ব্রাজিল আর আর্জেন্টিনা কেন, শীর্ষ ফেবারিট জার্মানিও তো হোঁচট খেয়েছে। হোঁচটটা বেশ বড়সড়ই। মেক্সিকোর কাছে ১-০ গোলে পরাজয়। গোলদাতা লুজানোর মূল্য এখন মেক্সিকানদের কাছে অনেক। এ কারণেই মস্কোতে মেক্সিকানরা জটলা বেধে উৎসব করছে। এবার তারা ছড়িয়ে পড়বে পুরো রাশিয়ায়। বিশেষ করে রুস্টভে আর একাটেরিনবার্গে। গ্রুপ পর্বে পরের দুটি ম্যাচ মেক্সিকো খেলবে এ দুই শহরেই। আর্জেন্টিনা, ব্রাজিলের ড্র এখনো পর্যন্ত গ্রুপ পর্বের হিসেবে খুব বড় পরিবর্তন নিয়ে আসেনি। তবে জার্মানির পরাজয় একটা বড় ধাক্কা হয়েই দেখা দিল। ই গ্রুপে ব্রাজিল চ্যাম্পিয়ন হলে এবং এফ গ্রুপে জার্মানি রানার্সআপ হলে ব্রাজিলকে আরও একবার জার্মান বাধাটা সাহসের সঙ্গে পাড়ি দিতে হবে। মেক্সিকোর জয়, এই হিসাবটাই সহজ করে তুলেছে। কিন্তু দ্বিতীয় রাউন্ডেই দুই শীর্ষ ফেবারিটের দেখা হওয়াটা বেশ অস্বস্তিকর। বিশ্বকাপ যে শ্রী হারাবে অনেকটা! রাশিয়া বিশ্বকাপে আরও একটা বিষয় মোটামুটি স্পষ্ট হয়ে উঠছে। ল্যাটিন ফুটবল ইউরোপীয়দের কৌশলের কাছে ব্যর্থ হচ্ছে! অবশ্য খেলা তো সবে শুরু। বিশ্বকাপ এখনো অনেক দূর!

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর