মঙ্গলবার, ১৯ জুন, ২০১৮ ০০:০০ টা

আনন্দ উৎসবে ঈদুল ফিতর উদযাপিত

নিজস্ব প্রতিবেদক

আনন্দ উৎসবে ঈদুল ফিতর উদযাপিত

আনন্দঘন পরিবেশে ও ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের সঙ্গে গত শনিবার দেশব্যাপী উদযাপিত হয়েছে পবিত্র ঈদুল ফিতর বা রোজার ঈদ। মুসলমানদের এই বৃহৎ উৎসবের দিন প্রায় সারা দেশে আকাশ ছিল মেঘলা। ভোররাত থেকেই দেশের অনেক স্থানে পড়ছিল বৃষ্টি। সকালে গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি উপেক্ষা করে মুসল্লিরা জড়ো হন ঈদগাহ, মসজিদ বা খোলা মাঠে তৈরি প্যান্ডেলে ঈদের নামাজ আদায় করতে। এক মাস সিয়াম সাধনার পর আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় সবার মনেই এক ব্যাকুলতা। বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনার সঙ্গে নতুন জামা-কাপড় পরে পিতা বা দাদা-নানার সঙ্গে ঈদের আনন্দে শামিল হয়েছে শিশু সন্তানরাও। সকাল সাড়ে ৮টার দেশের প্রধান ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয় রাজধানীর জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে। এতে নামাজ আদায় করেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, হাই কোর্ট ও সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি, মন্ত্রিপরিষদ সদস্য, সংসদ সদস্য, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দসহ ধনী-গরিব ও পেশানির্বিশেষে সর্বস্তরের মানুষ। ঈদের প্রধান জামাতে ইমামতি করেন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের সিনিয়র পেশ ইমাম হাফেজ মাওলানা মুহাম্মদ মিজানুর রহমান। নামাজ শেষে মোনাজাতে দেশ, জাতি ও মুসলিম উম্মাহর কল্যাণ কামনা করে দোয়া করা হয়। এ সময় ইমামের সঙ্গে ‘আমিন’ ‘আমিন’ বলে নিজেদের পাপমুক্তির জন্য চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে আল্লাহর কাছে রোনাজারি করেন মুসল্লিরা। এ ছাড়া দেশের সব সমস্যা দূর করতে আল্লাহর গায়েবি মদদ প্রার্থনা করা হয়। বরাবরের মতো ঈদের নামাজ আদায় শেষে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ মুসল্লিদের সঙ্গে কোলাকুলি ও শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। এভাবেই ঈদগাহ ও মসজিদে পরস্পর কোলাকুলি করে মুসল্লিদের ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করতে দেখা যায়। দেশের সর্ববৃহৎ ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয় কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানে। বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে ঈদের পাঁচটি জামাত অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম জামাত অনুষ্ঠিত হয় সকাল ৭টায়। এরপর এক ঘণ্টা পরপর তিনটি ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয়। সর্বশেষ ঈদের নামাজ অনুষ্ঠিত হয় সকাল ১০টা ৪৫ মিনিটে। এতে ইমামতি করেন তেজগাঁও রেলওয়ে জামে মসজিদের খতিব ড. মাওলানা মুশতাক আহমাদ। এ ছাড়া ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের তত্ত্বাবধানে রাজধানীতে পাড়া-মহল্লার খোলা মাঠে ৪০৮টি স্থানে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। সারা দেশে ঈদগাহের পাশাপাশি বিভিন্ন পাড়া-মহল্লার মসজিদ বা খোলা মাঠে ঈদ জামাতের আয়োজন করা হয়। রাজধানীতে চ্যানেল আই জামে মসজিদে সর্বশেষ ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয় ১১টা ৪৫ মিনিটে।

শোলাকিয়ায় দেশের বৃহত্তম ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত : দেশের ঐতিহ্যবাহী ঈদগাহ কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া ময়দানে কঠোর নিরাপত্তায় সকাল ১০টায় ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। এবারের জামাতে প্রায় তিন লাখ মুসল্লি নামাজ আদায় করেন। এবার শোলাকিয়া ঈদগাহে ১৯১তম ঈদ নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। এখানে ঈদের নামাজ আদায়ের জন্য শনিবার সকাল থেকেই দেশ-বিদেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে মুসল্লির ঢল নামে। নামাজে ইমামতি করেন মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ।

বঙ্গভবনে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় : ঈদ জামাত থেকে ফিরে সকাল ১০টায় বঙ্গভবনে দেশের বিশিষ্টজনদের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ আবদুল হামিদ। জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, সংসদ সদস্য, হাই কোর্টের বিচারপতি, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, তিন বাহিনীর প্রধান, আইজিপি, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, ব্যবসায়ী সংগঠনের প্রতিনিধি, বিভিন্ন জাতীয় সংবাদপত্রের সম্পাদক, সিনিয়র সাংবাদিক এবং উচ্চপদস্থ বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তারা এ সময় রাষ্ট্রপতির সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা ও কুশল বিনিময় করেন। এ ছাড়া বাংলাদেশে কূটনৈতিক কোরের ডিন, বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনার, আন্তর্জাতিক সংস্থাসমূহের প্রতিনিধিরা ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন করেন।

গণভবনে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করলেন প্রধানমন্ত্রী : পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে শনিবার সকালে গণভবনে বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার মানুষের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর আগে ঈদের নামাজ শেষে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে সর্বস্তরের মানুষ এসে ভিড় করলে সকাল ৯টায় সাধারণের জন্য গণভবনের গেট খুলে দেওয়া হয়। মন্ত্রিপরিষদ সদস্য, সংসদ সদস্য, আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মী, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, মুক্তিযোদ্ধা, শিক্ষাবিদ, সিনিয়র সাংবাদিক, আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ এবং বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠন ও ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ, ছিন্নমূল মানুষসহ সমাজের বিভিন্ন স্তরের শ্রেণি ও পেশার মানুষের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। এ সময় তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে ঈদের উপহারসামগ্রীও বিতরণ করেন। পরে গণভবন লনে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি, পদস্থ বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তা, বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনারদের সঙ্গে পৃথকভাবে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন তিনি। এ সময় জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন এবং তিন বাহিনী প্রধানগণ উপস্থিত ছিলেন।

ঈদের নানা আয়োজন : পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে রাজধানীকে সাজানো হয়েছে বর্ণিল সাজে। প্রধান প্রধান সড়ক ও সড়কদ্বীপে টানানো হয় কলমা ও ঈদ মুবারক খচিত পতাকার পাশাপাশি রংবেরঙের পতাকা। ঈদ উপলক্ষে হাসপাতাল, জেলখানা, ভবঘুরে কেন্দ্র, বৃদ্ধাশ্রম ও শিশু সদনে বিশেষ খাবার সরবরাহ করা হয়। রাজধানীর শিশু পার্ক, চিড়িয়াখানা, জাদুঘর ও বিজ্ঞান জাদুঘর ছিল উন্মুক্ত। দেশের সরকারি-বেসরকারি বিনোদন কেন্দ্রগুলোয় ছিল উপচে পড়া ভিড়। ঈদ উপলক্ষে টেলিভিশন চ্যানেল ও রেডিওগুলো আয়োজন করেছে কয়েক দিনব্যাপী নানা ঈদ অনুষ্ঠানমালার।

রাস্তায় ঈদ করলেন নন-এমপিও শিক্ষক-কর্মচারীরা : আনন্দের দিনেও পরিবার-পরিজন ছেড়ে রাস্তায় বসে ঈদ করেছেন নন-এমপিও শিক্ষক-কর্মচারীরা। শনিবার সকাল ১০টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের বিপরীত পাশের সড়কে ঈদ জামাত আদায় শেষে এমপিওভুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ করেন তারা। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির দাবিতে ঈদের সাত দিন আগ থেকেই টানা আন্দোলন করে যাচ্ছেন তারা। এ বিষয়ে নন-এমপিও শিক্ষক-কর্মচারী সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ বিনয়ভূষণ রায় শনিবার সাংবাদিকদের বলেন, প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাস বাস্তবায়নের দাবিতে আজকেও (ঈদের দিন) তিন সহস্রাধিক শিক্ষক-কর্মচারী ঈদের আনন্দ উৎসব বাদ দিয়ে ‘ভুখামিছিল’ করেছেন।

শুক্রবারে শতাধিক গ্রামে ঈদ : এর আগে সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সঙ্গে মিল রেখে গত শুক্রবার বাংলাদেশের শতাধিক গ্রামে ঈদুল ফিতর উদযাপন করা হয়। এর মধ্যে চট্টগ্রামের আনোয়ারাসহ দক্ষিণ চট্টগ্রাম, চাঁদপুর, পটুয়াখালী, জামালপুর, পিরোজপুর, শরীয়তপুর, শেরপুর, মৌলভীবাজার, মাদারীপুর ও নারায়ণগঞ্জের কয়েকটি গ্রামে শুক্রবার ঈদুল ফিতর উদযাপিত হয়েছে।

সর্বশেষ খবর