মঙ্গলবার, ১৯ জুন, ২০১৮ ০০:০০ টা

যেভাবে ঈদ কাটালেন খালেদা জিয়া

নিজস্ব প্রতিবেদক

যেভাবে ঈদ কাটালেন খালেদা জিয়া

আল্লাহর ওপর ভরসা রেখে ধৈর্য ধারণসহ সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার কথা বলেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন কারান্তরীণ বেগম খালেদা জিয়া। তিনি বলেন, একমাত্র আল্লাহতায়ালাই সবকিছুর মালিক। তবে সবাইকে তাঁর ওপর ভরসা রেখে ধৈর্য ধারণ করে ঐক্যবদ্ধভাবে সব অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। এ সময় স্বজনদের মাধ্যমে তিনি দেশের সর্বস্তরের মানুষকে ঈদের শুভেচ্ছা জানান এবং সবার কাছে দোয়া চান।

শনিবার বেলা ২টার দিকে তাঁর স্বজনরা পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডের কারাগারে দেখা করতে গেলে তাদের সঙ্গে আলাপকালে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। দীর্ঘ ৩৬ বছরের রাজনৈতিক জীবনে খালেদা জিয়া কারান্তরিন অবস্থায় এ নিয়ে তিনবার ঈদ উদ্‌যাপন করেছেন। সাক্ষাৎ করা স্বজনদের সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। প্রায় দেড় ঘণ্টার এই সাক্ষাতের শুরুতেই আত্মীয়স্বজনদের পক্ষ থেকে সাদা ও বেগুনি অর্কিডের একটি ফুলের তোড়া দিয়ে বেগম খালেদা জিয়াকে স্বাগত জানানো হয়। বোন সেলিনা এস্কান্দার, ভাইয়ের স্ত্রী ও স্বজনদের বুকে জড়িয়ে ধরে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন খালেদা জিয়া। কারাগারে প্রবেশের পর স্বজনরা খালেদা জিয়াকে দেখেই আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। খালেদা জিয়া নিজেও তখন আবেগ ধরে রাখতে পারেননি। এ সময় আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। গত ৮ ফেব্রুয়ারি কারাগারে যাওয়ার পর এই প্রথম ঈদ উপলক্ষে ২০ জন স্বজন তাঁর সঙ্গে একসঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ পান। স্বজনরা আরও জানান, বিএনপি চেয়ারপারসনের শারীরিক অবস্থা ভালো নয়। তিনি কারও সাহায্য ছাড়া দাঁড়াতে পারেন না। তাঁর মনটাও ভালো নেই। ঈদের দিন তিনি নতুন শাড়ি পরেননি। স্বজনরা যে যার মতো খালেদা জিয়ার পছন্দের খাবার রান্না করে নিয়ে গিয়েছিলেন। সেই খাবার সবাই একত্রে খেয়েছেন। তবে খালেদা জিয়া খেয়েছেন সামান্যই। নতুন শাড়ি না পরার কারণ জানতে চাইলে তারা বলেন, নির্যাতন এবং কারাবন্দী অবস্থায় নতুন শাড়ি পরে আনন্দ করার মনোভাব থাকে না। তবে নিকটাত্মীয়দের দেখে একপর্যায়ে খালেদা জিয়ার মন কিছুটা ভালো হয়। তিনি সবার খোঁজখবর নেন।

পরিবারের সদস্যরা আরও জানান, দলের সিনিয়র নেতারা দুপুরে কারাফটকে গিয়ে তাঁর সঙ্গে দেখা করার অনুমতি না পাওয়ার বিষয়টি খালেদা জিয়া শুনেছেন। এজন্য তিনি হতাশা প্রকাশ করেছেন। তিনি পরিবারের সদস্যদের মাধ্যমে দেশবাসী এবং দলের সর্বস্তরের নেতা-কর্মীকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন এবং সবার কাছে দোয়া চেয়েছেন। জানা যায়, কারাগারে সাক্ষাৎ করতে গিয়ে ছোট ভাই শামীম এস্কান্দারসহ তাদের সন্তানরা বেগম খালেদা জিয়ার পায়ে হাত দিয়ে সালাম করেন। স্বজনদের তিনি ‘আল্লাহর ওপর ভরসা রেখে ধৈর্য ধরতে’ বলেন। এ সময় তিনি স্বজনদের প্রত্যেকের নাম ধরে খোঁজখবর নেন এবং বিশেষ করে শিশু ও বাচ্চারা কেমন আছে তা জানতে চান। কারাগারে নিজের কক্ষ থেকে অসুস্থ শরীর নিয়ে অন্য দুজনের সহায়তায় খালেদা জিয়া আত্মীয়স্বজনদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে আসেন। তাঁকে দুই পাশ দিয়ে দুজন ধরে নিয়ে আসেন সাক্ষাতের জন্য নির্ধারিত কক্ষে। সাক্ষাৎকালেই কারাগারে আত্মীয়স্বজনদের নিয়ে বাসায় রান্না করা খাবার তিনি। বিএনপি চেয়ারপারসন সাধারণত দেড়টার মধ্যে দুপুরের খাবার সেরে ফেলেন। কিন্তু কারা কর্তৃপক্ষ স্বজনদের সাক্ষাতের জন্য বেলা ২টায় সময় নির্ধারণ করায় অপেক্ষা করতে হয়েছে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে। এরপর বেলা সোয়া ২টায় খালেদা জিয়ার প্রয়াত ভাই সাঈদ এস্কান্দারের স্ত্রী নাসরিন এস্কান্দার ও তার ছেলে শামস এস্কান্দার, শাফিন এস্কান্দার, ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার, তার স্ত্রী কানিজ ফাতেমা, ছেলে অভীক এস্কান্দার, এরিক এস্কান্দার, ভাগনি অরণি এস্কান্দার, অনন্যা এস্কান্দার, শাফিয়া ইসলাম, ভাগনে সাজিদ ইসলাম, মো. মেহরাব ও ডা. মো. আল মামুন কারাগারে প্রবেশ করেন। তাদের সঙ্গে ছিলেন বেগম খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমানের বড় বোন শাহিনা খান জামান বিন্দু, তার স্বামী শফিউজ্জামান। এ ছাড়া বিএনপি চেয়ারপারসনের একান্ত সচিব এ বি এম আবদুস সাত্তার, গুলশানের বাসা ‘ফিরোজা’র গৃহকর্মী, গাড়িচালকসহ সর্বমোট ২০ জন সাক্ষাতের সুযোগ পান। তারা সবাই বিকাল ৪টা ৪০ মিনিটে কারাফটক দিয়ে বেরিয়ে আসেন।

গত ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় পাঁচ বছরের সাজা হওয়ার পর বিএনপি চেয়ারপারসন নাজিমউদ্দিন রোডের পুরাতন কারাগারে বন্দী রয়েছেন। তাঁর সঙ্গে রয়েছেন গৃহকর্মী ফাতেমা বেগম। পরিবারের সদস্যরা জানান, খালেদা জিয়া ঈদের দিনে যেসব খাবার পছন্দ করেন সেগুলো তারা রান্না করে এনেছেন। ওইসব খাবার ভিতরে নিয়ে কারা কর্তৃপক্ষ পরীক্ষা করে তারপর পরিবেশনের জন্য দেন। এ ছাড়া প্রথম শ্রেণির বন্দী হিসেবে বিএনপি চেয়ারপারসনকে ঈদ উপলক্ষে সকালে দুধের সেমাই, জর্দা ও মিষ্টি দেওয়া হয়েছে। তার চাহিদা অনুযায়ী দুপুরের খাবার রান্না করা হলেও তা না খেয়ে বেগম জিয়া ঈদের দিন দুপুরে আত্মীয়স্বজনের রান্না করা খাবার খেয়েছেন বলে কারাগারের একাধিক কর্মকর্তা জানান। জানা যায়, ঈদের দিন সকাল ১০টায় কেন্দ্রীয় কারাগারের বাইরে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। বিএনপি নেতা-কর্মীরা কারাগারের সামনে আসবেন— এমন কর্মসূচির পরিপ্রেক্ষিতে নিরাপত্তা জোরদারের অংশ হিসেবে এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

সর্বশেষ খবর