বুধবার, ২০ জুন, ২০১৮ ০০:০০ টা

বিএনপির টার্গেট অক্টোবর

যুক্তফ্রন্ট নিয়ে যুগপৎ আন্দোলন চায়

মাহমুদ আজহার

বিএনপির টার্গেট অক্টোবর

জুলাই থেকে আন্দোলন আন্দোলন সুর তুললেও বিএনপি অক্টোবরকেই টার্গেট করেছে। নির্বাচনের পথ খোলা রেখে অক্টোবরে দলের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি, গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের দাবিতে সরকারকে বড় ধরনের ধাক্কা দিতে চায়। আন্দোলনের ঝড়ো হাওয়া তুলেই নির্বাচনে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। জুলাই থেকে শুরু করবে ছোটখাটো কর্মসূচি দিয়ে আন্দোলনের ওয়ার্মআপ। সঙ্গে চলবে নির্বাচন প্রস্তুতিও। এরই মধ্যে লন্ডনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে আগামী নির্বাচন ও আন্দোলন প্রস্তুতির চূড়ান্ত পরিকল্পনা নিয়ে দেশে ফিরেছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গত রবিবার রাতে দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ নিয়ে তিনি বিস্তারিত বক্তব্যও তুলে ধরেন বলে জানা গেছে। আন্দোলন ও নির্বাচনে জোট শরিকদের বাইরের ছোট দলগুলোর সঙ্গে সমঝোতা করার চেষ্টা করবে বিএনপি। যুক্তফ্রন্টকে পাশে চাইবে যুগপৎ আন্দোলনে। এ নিয়ে যোগাযোগও শুরু করেছে। অন্যদিকে বিএনপি একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য ভারতসহ বিভিন্ন গণতান্ত্রিক দেশেরও সহযোগিতা চাইছে। সূত্র বলছে, সরকারের দমননীতি মাথায় রেখেই বিএনপি আটঘাট বেঁধেই অক্টোবরে আন্দোলনের শেষ আঘাত হানতে চায়।

দলীয় সূত্রে জানা যায়, স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আগামী দিনের আন্দোলন কর্মসূচি ছাড়াও আসন্ন চার সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়েও কথাবার্তা হয়। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, গাজীপুর সিটি নির্বাচন বিএনপি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করবে। সেখানে সরকার অযাচিতভাবে হস্তক্ষেপ করলে পরের তিন সিটি নির্বাচন বর্জনেরও নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়। তবে গাজীপুরে বিএনপি সর্বাত্মকভাবে মাঠে থাকবে বলেও সংশ্লিষ্ট নেতাদের দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়।

জানা যায়, বিএনপির এখন একমাত্র টার্গেট হচ্ছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি। এ নিয়ে বেগম জিয়া কারাগারে যাওয়ার আগে শান্তিপূর্ণ নরম কর্মসূচির বার্তা দিয়ে যান। কিন্তু দিন যতই যাচ্ছে তার মুক্তি বিলম্বিত হচ্ছে। দলের আইনজীবী নেতারাও কারাগারে বেগম জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাতে বলছেন, আইনি প্রক্রিয়ায় বেগম জিয়ার মুক্তি পাওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। তাই রাজপথেই মুক্তির দাবি আদায় করতে হবে। এ কারণে খালেদা জিয়ার মুক্তি আন্দোলন ও নির্বাচন সামনে রেখে প্রতিবেশী রাষ্ট্রসহ বিশ্বের প্রভাবশালী দেশগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ বাড়িয়েছে বিএনপি। সম্প্রতি ভারত সফর করে আসেন বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের তিন নেতা। তারা বিজেপি ও কংগ্রেসের শীর্ষ পর্যায়ের নেতা ও সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। সেখানে কোনো আশ্বাস পেয়েছেন কিনা তাও স্পষ্ট নয়। এ প্রসঙ্গে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আইনি প্রক্রিয়ায় বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি পাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। তার পরও আমরা আইনি যুদ্ধ চালিয়ে যাব। ২৪ জুন থেকে আমরা আবারও আদালতে লড়ব। তবে আমি মনে করি, বেগম জিয়াকে রাজনৈতিকভাবে হেয় করতেই কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এখন রাজপথে গণতান্ত্রিক কর্মসূচির মাধ্যমেই বিএনপি চেয়ারপারসনকে মুক্ত করতে হবে।’ কী ধরনের কর্মসূচি আসতে পারে— জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অপেক্ষা করুন, ধৈর্য ধরুন। যথাসময়ে উপযুক্ত কর্মসূচি দেওয়া হবে।’

বিএনপির নীতিনির্ধারণী ফোরামের একাধিক নেতা জানান, অক্টোবর থেকে রাজপথের শক্ত কর্মসূচিগুলো যুগপৎ করার চিন্তাভাবনা চলছে। এ ক্ষেত্রে ২০-দলীয় জোট ছাড়াও যুক্তফ্রন্টসহ সরকারবিরোধী অন্য দলগুলোকে সঙ্গে নিয়ে যুগপৎ আন্দোলন কর্মসূচির পরিকল্পনাও করা হচ্ছে। এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট সব দলের সঙ্গেই যোগাযোগ করছেন বিএনপির নীতিনির্ধারকরা। এদিকে একাদশ জাতীয় নির্বাচনে যেতে খালেদা জিয়ার মুক্তি ছাড়াও ক্ষমতাসীন সরকারকে একগুচ্ছ শর্ত দিয়েছে বিএনপি। এগুলোও জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে তুলে ধরার চেষ্টা করছে দলটি। খালেদা জিয়ার মুক্তি হলে নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার দাবি নিয়ে রাজনৈতিক সংলাপ চায় দলটি। সেইসঙ্গে বেগম খালেদা জিয়াসহ সর্বস্তরের নেতা-কর্মীর মামলা প্রত্যাহারও চায় তারা। নির্বাচনের অন্তত এক সপ্তাহ আগে সেনা মোতায়েন করতে হবে। তৈরি করতে হবে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড। তফসিলের আগেই সংসদ ভেঙে দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবিও তাদের। ২০০৮ সালের আগে নির্ধারিত সীমানায়ও নির্বাচন চায় দলটি। এর ব্যত্যয় ঘটলে আন্দোলনের মাধ্যমেই দাবি আদায়ের পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে বিএনপি। জানা যায়, পরিস্থিতি যত প্রতিকূলই হোক না কেন, একাদশ জাতীয় নির্বাচনে যাবে বিএনপি। এ ব্যাপারে কারাগারে থাকা বেগম খালেদা জিয়া ও লন্ডনে অবস্থান নেওয়া তারেক রহমান দলের নেতাদের সেই বার্তাই দিয়েছেন। দলের সম্ভাব্য প্রার্থীদের সঙ্গে তারেক রহমান নিজেই কথা বলছেন এবং মাঠ প্রস্তুত করতে দিকনির্দেশনাও দিচ্ছেন। দলের সিনিয়র কয়েকজন নেতা ও দল সমর্থিত বুদ্ধিজীবীরা ইশতেহার তৈরির কাজও করছেন। তবে সরকারকে চাপে রাখতে সব ধরনের কৌশলই গ্রহণ করবে বিএনপি। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আন্দোলন ও নির্বাচনের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে এগোচ্ছে বিএনপি। তবে আমাদের এখন একমাত্র চ্যালেঞ্জ হলো বিএনপি চেয়ারপারসনের মুক্তি। তাকে ছাড়া আমরা নির্বাচনে যাব না। বেগম জিয়াকে নিঃশর্ত মুক্তি দিয়ে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার দাবি ক্ষমতাসীনদের মানতে হবে। তবেই আমরা নির্বাচনে যাব। নইলে রাজপথে আন্দোলনের মাধ্যমে দাবি আদায় করে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করব।’ সূত্রমতে, আগামী এক মাসের মধ্যেই বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের অসম্পূর্ণ সব কমিটি পুনর্গঠনের কাজ শেষ করতে চান দলের নীতিনির্ধারকরা। এ নিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডন থেকে কড়া বার্তাও পাঠিয়েছেন। ঈদের আগে সব কমিটির কাজ শেষ করতে আলটিমেটামও দিয়েছিলেন। কিন্তু নানা জটিলতায় অঙ্গসংগঠনগুলো তা শেষ করতে পারেনি। তাই আরও কিছু দিন সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, কৃষক দল, শ্রমিক দলসহ অন্য দলগুলোকে তাদের অসম্পূর্ণ কমিটির কাজ শেষ করতে হবে। বিএনপির সাংগঠনিক ৮১টি জেলার মধ্যে প্রায় অর্ধশত কমিটি হয়েছে। বেগম জিয়ার নির্দেশনা অনুযায়ী বাকি কমিটির কাজও শেষ করতে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে বিশেষ বার্তা দিয়েছেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। যে কোনো দিনই জেলা কমিটি গঠনের কাজও শুরু হবে বলে জানা গেছে। বিএনপির যুগ্মমহাসচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, ‘গণতন্ত্র ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে বিএনপি আছে। এর মধ্যে এখন বেগম জিয়ার মুক্তির আন্দোলন যুক্ত হয়েছে। বেগম জিয়া গণতন্ত্রের প্রতীক। তাকে ছাড়া বাংলাদেশে কোনো নির্বাচন হতে পারে না। সুতরাং বিএনপি চেয়ারপারসনের মুক্তি এখন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক দাবিতে পরিণত হয়েছে। সরকারের শুভবুদ্ধির উদয় হলে শিগগিরই বেগম জিয়াকে মুক্তি দিতে হবে।’

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর