বুধবার, ২০ জুন, ২০১৮ ০০:০০ টা

হার্ডলাইনে থাকবে সরকার

নির্বাচন নিয়ে সরকারবিরোধী বা ভোট বানচালের মতো কোনো আন্দোলন হতে দেবে না ক্ষমতাসীনরা

রফিকুল ইসলাম রনি

আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করুক আওয়ামী লীগ তা চায়। এমনকি নির্বাচনে ছোট ছোট দল বিকল্প জোট গঠন করে অংশগ্রহণ করলেও স্বাগত জানাবে। কিন্তু নির্বাচন নিয়ে সরকারবিরোধী বা ভোট বানচালের মতো কোনো আন্দোলন হতে দেবে না। এক্ষেত্রে শুরু থেকেই হার্ডলাইনে থাকবে। বিএনপি সরকারবিরোধী আন্দোলন ও ভোট প্রতিরোধের নামে যেন ২০১৩-২০১৪ সালের মতো সহিংসতার পথ বেছে নিতে না পারে সে জন্য সতর্ক আওয়ামী লীগ সরকার। এক্ষেত্রে ন্যূনতম ছাড় দিতে নারাজ।

সূত্রমতে, আগামী ডিসেম্বরে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সম্ভাব্য তারিখ ধরেই নির্বাচনী প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে রাজনৈতিক দলগুলো। গত জানুয়ারি থেকেই দেশব্যাপী নির্বাচনী সফর শুরু করেছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আর আওয়ামী লীগের ১৫টি সাংগঠনিক টিম সারা দেশ চষে বেড়াচ্ছে। দলীয় প্রধানের নির্দেশে নিজ নিজ এলাকায় সক্রিয় হয়েছেন দলের এমপি-মন্ত্রীরা। গতকাল দুপুরে ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর কার্যালয়ের সম্পাদকমণ্ডলীর সঙ্গে সহযোগী সংগঠনের যৌথ সভা শেষে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, দেশের জনগণের প্রতি আস্থা না থাকায় বিএনপি নেতারা বিদেশ ঘুরে বেড়াচ্ছেন। ঢাকাতেও এখানে-ওখানে গভীর রাতে বৈঠক চলছে। দেশে কূটনীতিকদের কাছে নালিশ করছেন। তিনি বলেন, ওয়ান-ইলেভেনের কুশীলবদের নিয়ে বিএনপি ষড়যন্ত্র করছে। তারা মনে করছে, আমরা জানি না। সব খবরই জানা আছে। এবার কোনো ষড়যন্ত্র টিকবে না। দেশের জনগণ প্রতিহত করবে।  একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আওয়ামী লীগ ও  বিএনপি জোটের বাইরে তৃতীয় জোট গঠনের প্রক্রিয়া শুরু করেছেন গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন, বিকল্পধারা বাংলাদেশের সভাপতি অধ্যাপক এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না এবং জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আবদুর রব। এসব দল ছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন এবং পেশাজীবী নেতৃবৃন্দ ও বিশিষ্ট নাগরিকদেরও এই ঐক্য প্রক্রিয়ায় যুক্ত করার চিন্তা করা হচ্ছে। দুই প্রধান জোটের বাইরে তৃতীয় জোট গঠনের প্রক্রিয়াকে আওয়ামী লীগ স্বাগত জানালেও সরকারবিরোধী কোনো আন্দোলনকে একটুও ছাড় দেবে না ক্ষমতাসীনরা। তারা বলছেন, বিগত দিনেও বিএনপির আন্দোলনে দেশবাসী সাড়া দেয়নি, এবারও দেবে না। এ ছাড়াও আন্দোলন করার জনসমর্থন বিএনপি পাবে না। এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কর্নেল (অব.) মুহম্মদ ফারুক খান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, দেশ চলবে সংবিধান অনুযায়ী। যথাসময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। কিন্তু নির্বাচন ঠেকানো বা সরকারবিরোধী আন্দোলনের নামে সংবিধান বিরোধী কোনো কাজ দেশের মানুষ মেনে নেবে না। বিএনপির অনার্থক আন্দোলনে অতীতেও দেশবাসীকে পাশে পায়নি, এবারও পাবে না। আর আওয়ামী লীগকে আন্দোলনের ভয় দেখিয়ে লাভ হবে না। নতুন জোটকে নিয়ে সরকারবিরোধী আন্দোলন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তারা (বিএনপি) একটি জোট আছে। আবার কাউকে সঙ্গে নিয়ে জোট করতেই পারে। কিন্তু সরকারবিরোধী আন্দোলন সফল হবে না। কারণ জিরো প্লাস জিরো-জিরোই হয়। দলীয় সূত্রমতে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নেতা-কর্মীদের বিশেষ দিকনির্দেশনা এবং নির্বাচনী বার্তা দিতে আগামী ২৩ জুন আওয়ামী লীগের বিশেষ বর্ধিত সভা ডাকা হয়েছে। দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদ নির্বাচনের বার্তা দেবেন। ওই বার্তা নিয়ে নেতারা নিজ নিজ এলাকায় সংগঠনকে শক্তিশালী ও ঐক্যবদ্ধ করার পাশাপাশি সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে বিএনপি-জামায়াত জোটের সম্ভাব্য আন্দোলনকে মোকাবিলার প্রস্তুতি নেবেন। সূত্রমতে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং কারাবন্দী বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য আগামী সেপ্টেম্বর-অক্টোবর থেকে জোর আন্দোলনে নামবে মাঠের বিরোধী দল বিএনপি। এ জন্য তারা সব ধরনের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে। কিন্তু নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপিকে আন্দোলনের সুযোগ দেবে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। রাজনৈতিক এবং আইনিভাবে তাদের আন্দোলন প্রতিহত করবে। এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বিএনপির আন্দোলনে আমরা চিন্তিত না। আমরা দেখছি, তারা (বিএনপি) কী আন্দোলন করে, আর জনগণ কীভাবে গ্রহণ করে। সরকারবিরোধী আন্দোলনের নামে নাশকতা-সহিংসতার পথ বেছে নিলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মোকাবিলা করবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাজ হচ্ছে দেশের শান্তি, স্থিতিশীলতা বজায় রাখা। আমাদের কাজ জনগণকে ঐক্যবদ্ধ রাখা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর