বুধবার, ২০ জুন, ২০১৮ ০০:০০ টা

মহাজোটেই জাপা ভোটে যাবে জামায়াত

শফিকুল ইসলাম সোহাগ

আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটে থেকেই আগামী জাতীয় নির্বাচনে লড়বে এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি। দেশের তৃতীয় বৃহত্তম রাজনৈতিক দল জাতীয় পার্টির নেতা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ যেমন এই ভোটযুদ্ধকে জীবনের পড়ন্তবেলায় সর্বাধিক গুরুত্ব দিচ্ছেন, তেমনি বিএনপি শেষ মুহূর্তে নির্বাচনে আসবে এমন বিবেচনায় আওয়ামী লীগও জাতীয় পার্টিকে মহাজোটে চায়। পর্দার অন্তরালে তৃতীয় দলের দূতিয়ালিও চলছে। এরশাদ সংসদে ৭০টি আসন ১০টি মন্ত্রীও চেয়েছেন। এরশাদ মনে করেন ১০০ আসনে তার শক্তিশালী প্রার্থী রয়েছেন। অপরদিকে হাই কোর্টের রায়ের নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন এবং দলীয় প্রতীক হারানো ২০-দলীয় জোটের অন্যতম প্রধান শরিক দল জামায়াতে ইসলামী যে কোনো মূল্যে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে চায়। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার মতো ভুল আর করতে চায় না দলটি। জাতীয় পার্টির মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, একটাই লক্ষ্য আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মধ্যদিয়ে জাতীয় পার্টিকে ক্ষমতায় নেওয়া। তিনি বলেন, আমাদের প্রায় প্রতিটি আসনেই একাধিক প্রার্থী রয়েছে। আবারও আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট প্রসঙ্গে বলেন, ইতিমধ্যে এইচ এম এরশাদের নেতৃত্বে সম্মিলিত জাতীয় জোট করেছি। জাতীয় নির্বাচনের আগে চূড়ান্ত বিবেচনায় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা পার্টির চেয়ারম্যানকে দিয়েছে দলের সর্বোচ্চ পর্ষদ। সূত্র জানায় কোনো কারণে বিএনপি নির্বাচনে না এলে জাতীয় পার্টিকে বিরোধী দলের আসনেই চায় আওয়ামী লীগ। এক্ষেত্রেও সমঝোতায় ৭০টি আসনে ছাড় দিতে রাজি। নেতা-কর্মীরা জানান, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সারা দেশের শীর্ষ নেতাদের ঢাকায় ডাকছেন পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। লক্ষ্য জাতীয় নির্বাচনের জন্য প্রার্থী চূড়ান্ত করার আগে শীর্ষ নেতাদের মত নেওয়া। প্রোগ্রামটি ঈদের পর দ্বিতীয় সপ্তাহে অনুষ্ঠিত হবে। এসব বিষয় নিয়েও যৌথ সভায় আলোচনা হবে। সভা সফল করার জন্য পার্টির মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার কয়েকটি বৈঠক করবেন। জানতে চাইলে পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা বলেন, ঈদের পর জাতীয় পার্টির নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করা হবে। ইশতেহারে নির্বাচনী ব্যবস্থার আমূল সংস্কার, প্রাদেশিক ব্যবস্থা প্রবর্তনসহ ক্ষমতায় গেলে মানুষের কল্যাণে যা যা করা প্রয়োজন সে বিষয় মাথায় রেখেই ইশতেহার প্রণয়নের কাজ চলছে। আরেক প্রেসিডিয়াম সদস্য মীর আবদুস সবুর আসুদ বলেন, আগামী নির্বাচনে জাতীয় পার্টি ছাড়া কেউ ক্ষমতায় যেতে পারবে না। আমরা সেভাবেই নিজেদের প্রস্তুত করছি। নেতা-কর্মীরা জানান, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ৩০০ আসনে জাতীয় পার্টির আগ্রহী অন্তত ৮৫০ প্রার্থীর তালিকা দলের চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের হাতে রয়েছে। এককভাবে নির্বাচনে অংশ নিলে এদের মধ্য থেকে ৩০০ আসনের জন্য ৩০০ প্রার্থী চূড়ান্ত করবেন এইচ এম এরশাদ। এদিকে নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন এবং দলীয় প্রতীক হারানো ২০-দলীয় জোটের অন্যতম শরিক জামায়াতে ইসলামী যে কোনো মূল্যে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে চায়। বর্তমানে দলের স্বাভাবিক কার্যক্রমের পাশাপাশি নির্বাচনী প্রস্তুতিকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। শেষ পর্যন্ত আদালতের রায়ে নিজস্ব প্রতীক দাঁড়িপাল্লা না পেলে বিএনপির প্রতীক ধানের শীষ অথবা স্বতন্ত্র প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নিয়ে ভোট প্রস্তুতি শুরু করেছে দলটি। জামায়াতের দায়িত্বশীল সূত্রমতে দলটি মনে করে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করা রাজনৈতিকভাবে ভুল সিদ্ধান্ত। অস্তিত্বের প্রয়োজনেই আগামী নির্বাচনে তারা অংশগ্রহণ করতে চায়। তা ছাড়া জামায়াত কখনই নির্বাচন বিরোধী দল নয়। আগামী নির্বাচন সামনে রেখে ১০০ প্রার্থীর তালিকা চূড়ান্ত করে জামায়াত প্রস্তুতি নিচ্ছে। বিএনপি তাদের ৫০টি আসনে ছাড় দিবে এমনটা আশা করে। জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল ডা. শফিকুর রহমান ঢাকার মিরপুর থেকে নির্বাচন করবেন। এভাবেই দলের নেতারা আসন ঘিরে গোপন তৎপরতা চালাচ্ছেন।

সর্বশেষ খবর