বুধবার, ২০ জুন, ২০১৮ ০০:০০ টা

আজ কি আবারও রোনালদো ম্যাজিক

ক্রীড়া প্রতিবেদক

আজ কি আবারও রোনালদো ম্যাজিক

ক্যারিয়ারে বহু পেনাল্টি মিস করেছেন। হারের স্বাদও নিয়েছেন। ‘বরফ রাজ্য’ আইসল্যান্ডের বিপক্ষে পেনাল্টি মিসের পর খোলসে পুড়ে নিয়েছেন নিজেকে। তার পেনাল্টি মিসে হারেনি আর্জেন্টিনা। তারপরও দুবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন দলের সমর্থকরা ছিঁড়ে খুঁড়ে ফেলছেন লিওনেল মেসিকে। কেন করবেনই না? পাঁচবারের বিশ্বসেরা ফুটবলারের চির প্রতিদ্বন্দ্বী ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো যেভাবে প্রথম ম্যাচেই রোশনাই ছড়িয়েছেন, বিশ্বকাপের আকাশকে জ্যোত্স্নার আলোয় ভরিয়ে দিয়েছেন, তাতে মেসি কিংবা নেইমারকে পাথর চাপা দিয়ে রোনালদো এখন বন্দনায় ভাসবেন, প্রশংসায় ভাসবেন- সেটাই স্বাভাবিক। সেটাই হচ্ছে। ফুটবল দুনিয়ার সব চোখ এখন ‘সি আর সেভেন’ রোনালদোর দিকে। ইউসেবিও, ফিগোর দেশ পর্তুগাল। দুজনেই দেশের সফল তারকা। কিংবদন্তির তারকা ইউসেবিও পারেননি পর্তুগালকে বিশ্বকাপ উপহার দিতে। এমনকি পারেননি ইউরো সেরা করতেও। ফিগোও পারেননি স্বপ্ন পূরণ করতে। কিন্তু রোনালদো এরই মধ্যে ইউরো সেরা করে পর্তুগিজবাসীর স্বপ্নের পরিসরটা বাড়িয়ে দিয়েছেন। এবার স্বপ্ন দেখাচ্ছেন বিশ্বকাপ জয়ের। ফুটবল মহাযজ্ঞে নিজেদের প্রথম ম্যাচে সাবেক বিশ্বচ্যাম্পিয়ন স্পেনের সঙ্গে ড্র করেছে ৩-৩ গোলে। ইউরো ও বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের বিপক্ষে পর্তুগালের পক্ষে একা লড়ে করেছেন হ্যাটট্রিক। চলতি বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত এটাই একমাত্র হ্যাটট্রিক। এই হ্যাটট্রিকেই তিনি এরই মধ্যে দাবিদার হয়ে পড়েছেন গোল্ডেন বুট ও বলের। স্পেনের বিপক্ষে অসাধারণ ম্যাচের আত্মবিশ্বাস নিয়ে আজ রোনালদোর ইউরো চ্যাম্পিয়ন পর্তুগাল মাঠে নামছে দ্বিতীয় ম্যাচ খেলতে। প্রতিপক্ষ মরক্কো। আফ্রিকার দেশটি আবার প্রথম রাউন্ডে আত্মঘাতী গোলে হেরেছিল মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ইরানের কাছে। রাশিয়া বিশ্বকাপে প্রথম ম্যাচেই দুরন্ত হ্যাটট্রিকে শক্তিশালী স্পেনের ম্যাচ জেতার স্বপ্ন শেষ করে দিয়েছেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। গোটা বিশ্ব তার প্রশংসায় পঞ্চমুখ। কিন্তু সি আর সেভেন উচ্ছ্বাসে ভাসছেন না। বিশ্বকাপের পরের ম্যাচের জন্য প্রস্তুতি শুরু করে দিলেন রবিবার। অবশ্য অনুশীলনে রোনালদোকে দেখা গিয়েছে ফুরফুরে মেজাজেই। গ্রুপের দ্বিতীয় ম্যাচে পর্তুগাল বুধবার মুখোমুখি হচ্ছে মরক্কোর। প্রথম ম্যাচে যারা ইরানের কাছে ০-১ হেরে গিয়েছিল। মরক্কোকে হারালেই শেষ ষোলোর দিকে এক ধাপ এগিয়ে যাবে পর্তুগাল। হের্ভে রেনর দল মরক্কোর এই ম্যাচে নামার আগে প্রথম চ্যালেঞ্জ ইরানের বিরুদ্ধে আত্মঘাতী গোলে হারের ধাক্কা কাটিয়ে ওঠা। ঠিক উল্টো ছবি পর্তুগাল শিবিরে। প্রথম ম্যাচে না জিতলেও যেভাবে পিছিয়ে পড়েও পর্তুগাল ঘুরে দাঁড়ায় তাতে আত্মবিশ্বাস আরও বেড়ে গিয়েছে রোনালদোর দলের। রবিবার সকালে ক্রাতোভোয় প্রস্তুতি শিবিরে শরীরি ভাষা দেখেই বোঝা গিয়েছে। তবে সবার নজর ছিল একজনের দিকেই। রোনালদো। তাকেও ফুরফুরে মেজাজে দেখা গিয়েছে অনুশীলনে। দেশের হয়ে সর্বোচ্চ গোলদাতার নজির তো আগেই গড়েছিলেন রোনালদো। শুক্রবার হ্যাটট্রিকের পরে তিনি ইউরোপের সর্বোচ্চ আন্তর্জাতিক গোলদাতা হিসেবে ফেরেঙ্ক পুসকাসকে ছুঁয়ে ফেলেছেন। অনুশীলনে রোনালদোকে তার বিখ্যাত ফ্রি-কিক এবং মধ্যাকর্ষণকে হার মানানো লাফে হেড দেওয়ার প্রস্তুতি নিতে দেখা যায়। বেশ খোশমেজাজে ছিলেন তিনি। হাসি-ঠাট্টাতেও মাতেন সতীর্থ ব্রুনো আলভেস এবং পেপের সঙ্গে। তার পরেই দেখা যায় কোচ ফের্নান্দো স্যান্টোসের সঙ্গে হাত মেলাচ্ছেন রোনালদো। স্পেন ম্যাচের পরে স্যান্টোস প্রশংসায় ভাসিয়ে দিয়েছিলেন তার দলের এক নম্বর তারকাকে। তিনি রোনালদোর শারীরিক শক্তির পাশাপাশি মানসিক জোরেরও প্রশংসা করেছিলেন। চতুর্থ ফুটবলার হিসেবে চারটে বিশ্বকাপে গোল করার কৃতিত্ব দেখানোর পরে রোনালদো বলেছিলেন,‘দারুণ লাগছে খেলোয়াড় জীবনে আরও একটা রেকর্ড গড়তে পেরে।’ শুক্রবারের ম্যাচের আগেই স্পেনে কর ফাঁকি কাণ্ডে জরিমানা হয়েছে সি আর সেভেনের। কিন্তু তাতে মনোযোগ হারাচ্ছেন না পর্তুগিজ মহাতারকা। তার ফোকাস এখন শুধু বিশ্বকাপ। বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচেই স্পেনের বিরুদ্ধে দুরন্ত হ্যাটট্রিক করে সাড়া ফেলে দিয়েছেন। তার পরে প্রয়োজনীয় বিশ্রাম নিয়ে সোমবারই অনুশীলনে নেমে পড়লেন পর্তুগাল অধিনায়ক ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। বুধবার মস্কোতে ফের্নান্দো স্যান্টোসের দলের প্রতিপক্ষ মরক্কো। এ দিন অনুশীলনে পুরো সময় হাসিমুখেই দেখা গিয়েছে সি আর সেভেনকে। কখনও বল পায়ে নাচাতে দেখা যায় তাকে। কখনও বা সতীর্থ পেপে, রিকার্ডো কোয়ারেজমা-দের সঙ্গে হাসি, ঠাট্টায়ও মেতে উঠতে দেখা গিয়েছে সি আর সেভেনকে। অনুশীলনের একটা বড় সময় ফ্রি-কিক মারতেও ব্যস্ত ছিলেন তিনি। এরই মাঝে জয়ের জন্য রোনালদোর মরিয়া মনোভাব সম্পর্কে মুখ খুলেছেন ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডে তার ফরাসি সতীর্থ প্যাত্রিস এভ্রা। যিনি ম্যানইউতে রোনালদোর সঙ্গে তিন মৌসুম কাটিয়েছেন। সেই এভ্রা মজা করে বলছেন, ‘রোনালদোর বাড়িতে খাওয়াদাওয়ার নিমন্ত্রণ থাকলে তাতে না বলে দেওয়াই ভালো। কারণ ও একটা যন্ত্রের মতো। ওর ট্রেনিং কখনও শেষ হয় না।’এভ্রা তার নিজের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা জানিয়েছেন, ‘একবার রোনালদোর নিমন্ত্রণ পেয়ে ওর বাড়ি গিয়ে কেবল স্যালাড, ‘হোয়াইট চিকেন’ আর জল খেয়ে ফিরেছিলাম। ভেবেছিলাম এর পরেই ফলের রস ও মাংসের আরও পদ আসবে। কিন্তু তা হয়নি।’ এভ্রা আরও বলেন, ‘খাওয়ার পরেই আমাকে টানতে টানতে নিয়ে গিয়ে প্রথমে ‘টু-টাচ’ খেলল। তার পরে নিয়ে গেল সাঁতারে। তার পরে জাকুজকি এবং ‘সনা বাথ’-এর পালা।’ এভ্রা সঙ্গে যোগ করেন, ‘সব শেষে বিরক্ত হয়ে বলেছিলাম, ক্রিস্টিয়ানো  তোমার বাড়িতে দুপুরের ভোজ খেতে এসেছি নাকি পরবর্তী ম্যাচের প্রস্তুতি নিতে!’ পাশাপাশি, এভ্রা আরও বলেন, ‘একবার রিয়ো ফার্ডিনান্ড টেবল টেনিস খেলে ক্রিস্টিয়ানোকে হারিয়েছিল। হারার পরেই ও নিজের বাড়িতে একটা টেবিল টেনিস বোর্ড নিয়ে আসে। তারপরে দুসপ্তাহের মধ্যেই খেলাটা ভালো করে রপ্ত করে রিয়োকে হারিয়ে দিয়েছিল।’

সর্বশেষ খবর