শনিবার, ২৩ জুন, ২০১৮ ০০:০০ টা

আজ থেকে পুরাতন ঠিকানায় নতুন অফিসে আওয়ামী লীগ

নিজস্ব প্রতিবেদক

আজ থেকে পুরাতন ঠিকানায় নতুন অফিসে আওয়ামী লীগ

আজ থেকে নতুন ভবনেই শুরু হচ্ছে কার্যক্রম —বাংলাদেশ প্রতিদিন

ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ তার প্রতিষ্ঠার ৬৯ বছর পর আজ নিজস্ব ভবন পেতে যাচ্ছে। রাজধানীর গুলিস্তানে ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে গড়ে তোলা নয়নাভিরাম ও বিশ্বমানের অত্যাধুনিক নতুন ভবনে আজ চালু হচ্ছে তার কার্যালয়। কার্যালটি সকাল ১০টায় উদ্বোধন করবেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিনে এই কার্যালয় উদ্বোধনীতে সারাদেশ থেকে সাড়ে চার হাজার নেতাকে শরিক করা হয়েছে। তাঁরা গণভবনের পশ্চিম লন থেকে প্রজেক্টরের মাধ্যমে শরিক হবেন। নতুন দশ তলা কার্যালয় ভবন হবে আওয়ামী লীগের স্থায়ী ঠিকানা।  পুরান ঢাকার কে এম দাস লেনের রোজ গার্ডেনে ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন আত্মপ্রকাশ করে আওয়ামী লীগ। প্রতিষ্ঠার পর থেকে আওয়ামী লীগের অফিস স্থানান্তরের ঘটনা ঘটেছে ৮ থেকে ৯ বার। প্রতিষ্ঠার পর পালাক্রমে সিনিয়র নেতাদের বাসায় বসেই দল পরিচালনার নীতি-কর্মসূচি গ্রহণ করা হতো। ১৯৫৩ সাল থেকে ৯ কারকুন বাড়ি লেনে অস্থায়ী একটি অফিস ব্যবহার করা হতো। এরপর ১৯৫৬ সালে পুরান ঢাকার ৫৬ সিমসন রোডে দলের অফিস করা হয়। ১৯৬৪ সালের ২৫ জানুয়ারি আওয়ামী লীগকে পুনরুজ্জীবিত করার পর এর তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক শেখ মুজিবুর রহমান ৯১, নবাবপুর রোডে দলের অফিস নেন। এর কিছুদিন পর অস্থায়ীভাবে সদরঘাটের রূপমহল সিনেমা হলের গলিতে কিছুদিন বসেন নেতারা। পরে পুরানা পল্টনে দুটি স্থানে দীর্ঘদিন দলের অফিস ছিল। সর্বশেষ ১৯৮১ সালের দিকে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা দলের দায়িত্ব নেওয়ার পর ২৩ বঙ্গবন্ধুু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ঠিকানা হয়। সেই থেকে এখনো এখানেই আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়। ২০১৬ সালে এটিকে যুগোপযোগী এবং আধুনিক করার লক্ষ্যে পুরনো ভবন ভেঙে ১০ তলা ভবন করার কাজে হাত দেন দলটির সভানেত্রী শেখ হাসিনা। সে লক্ষ্যে ২০১৬ সালের ১৭ জুলাই ওই ভবন ভাঙা হয়। এরপর

একটানা কাজ চলে। আওয়ামী লীগের নেতারা জানিয়েছেন, নতুন ভবন উদ্বোধনের পর আওয়ামী লীগের সব সাংগঠনিক কার্যক্রম চলবে ২৩, বঙ্গবন্ধু এভিনিউর এ কার্যালয় থেকে। আর ধানমন্ডির আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর কার্যালয় থেকে দলের নির্বাচনী কার্যক্রম ও সিআরআইসহ দলের অন্যান্য সংস্থার গবেষণামূলক কর্মকাণ্ড পরিচালিত হবে। দলটির নেতারা মনে করছেন, নতুন দৃষ্টিনন্দন ও অত্যাধুনিক ভবনে আগামী জাতীয় নির্বাচনের কাজ পরিচালনা করতে গিয়ে উৎসাহ পাবেন দলটির নেতা-কর্মীরা। ভবন নির্মাণের দায়িত্বে থাকা গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বলেন, নির্বাচনের আগে দলের নেতা-কর্মীদের জন্য নতুন কার্যালয় একটি উপহার। নতুন করেই শুরু হবে পথচলা। আশা করছি নতুন ভবন আমাদের জন্য নতুন বিজয় বয়ে আনবে। গতকাল সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, ভবনে ঢুকেই হাতের বাম পাশে অভ্যর্থনা ডেস্ক। বিশাল ফ্লোর। সিঁড়ির পাশাপাশি দুটি লিফট। বেসমেন্ট ও প্রথমতলায় গাড়ি পার্কিংয়ের কথা বলা হলেও পরে এ সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে আওয়ামী লীগ। সামনের সড়কে ছেড়ে দেওয়া নিজস্ব জায়গায় পার্কিংয়ের ব্যবস্থা করা হবে। নিচে রক্ষিত নির্দেশনা অনুযায়ী জানা যায়, চতুর্থ ও পঞ্চম তলায় সাধারণ অফিস, ডিজিটাল লাইব্রেরি, মিডিয়া রুম। ষষ্ঠ তলায় সম্মেলন কক্ষ। সপ্তম তলা দলের কোষাধ্যক্ষের জন্য। অষ্টম তলায় সাধারণ সম্পাদকের অফিস। আর নবম তলায় বসবেন দলের সভানেত্রী শেখ হাসিনা। দশম তলায় ক্যাফেটেরিয়া। কর্তব্যরতদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আগের নির্দেশনা অনুযায়ী বেসমেন্ট ও নিচ তলায় কার পার্কিং এবং ছাদে হ্যালিপ্যাড স্থাপন আপাতত হচ্ছে না। দ্বিতীয় তলার কনফারেন্স রুমে ৩৫০ জনের এবং তৃতীয় তলায় ২৪০ জনের বসার ব্যবস্থা। রয়েছে বিশ্রামাগার ও নামাজের জায়গা। মাঝখানে কনফারেন্স রুম আর দুই পাশে বেশকিছু কক্ষ রয়েছে। তিন তলার সামনের অংশটা ‘ওপেন স্কাই টেরাস’। অনেকটা বাসার ড্রয়িংরুম বা পাঁচ তারকা হোটেলের আদলে করা হবে এ অংশ। এখানে কৃত্রিম বাগানের ফাঁকে ফাঁকে চেয়ার-টেবিল দিয়ে বসার ব্যবস্থা থাকছে। পাশাপাশি থাকবে চা-কফি খাওয়ার আয়োজন। এ ছাড়া ভবনের চার ও পাঁচ তলায় দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় ছাড়াও সহযোগী-ভ্রাতৃপ্রতিমসহ সমমনা অন্যান্য সংগঠনের কার্যালয় হিসেবে ব্যবহূত হবে। সাত, আট ও নয় তলায় দলীয় সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, প্রেসিডিয়াম সদস্য, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, সাংগঠনিক সম্পাদক, বিষয়ভিত্তিক সম্পাদকসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের কক্ষ রাখা হয়েছে। এর মধ্যে সভানেত্রীর ফ্লোর থাকবে বুলেটপ্রুফ ডাবল গ্লাস। এ ছাড়া ভবনের বিভিন্ন তলায় রাখা হয়েছে ডিজিটাল লাইব্রেরি, সেমিনার রুম এবং সাংবাদিক লাউঞ্জ। দলীয় সূত্র জানায়, আজ এ ভবন নির্মাণের দায়িত্বে থাকা  আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে নতুন কার্যালয়ের চাবি তুলে দেবেন। প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন শেষে প্রেসিডিয়াম সদস্য, যুগ্ম সম্পাদকসহ অন্য নেতা ও সহযোগী সংগঠনগুলোর জায়গা নির্ধারণ করে দেবেন। নতুন কার্যালয় যেখানে নির্মিত সেই জমিটি সরকারের কাছ থেকে ৯৯ বছরের জন্য ইজারা নেওয়া হয়েছে।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, এজন্য বিদ্যুৎসহ নানা বকেয়া বিল মিলিয়ে সরকারকে দিতে হয়েছে ১ কোটি টাকা। ৮ কাঠা জায়গায় নির্মিত ভবনটি মাটির নিচে (গ্রাউন্ড ফ্লোর) এক তলাসহ দশ তলা ভবনের কাজ শেষ হয়েছে ইতিমধ্যে। আধুনিক প্রযুক্তিতে নির্মিত ভবনটি পুরোটাই থাকবে ওয়াইফাইয়ের আওতায়।

সর্বশেষ খবর