শনিবার, ২৩ জুন, ২০১৮ ০০:০০ টা
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ

৬৯ বছরের আওয়ামী লীগের লক্ষ্য সমৃদ্ধ বাংলাদেশ

রফিকুল ইসলাম রনি

জাতীয় সংসদ নির্বাচনে টানা তৃতীয়বারের মতো বিজয় অর্জনের প্রত্যয়ে আজ ৬৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন করছে মহান মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী উপমহাদেশের অন্যতম প্রাচীন রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে ১৯৪৯ সালের এই দিনে পুরান ঢাকার রোজ গার্ডেনে জন্ম নেয় দলটি। এরপর বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধসহ প্রতিটি গণতান্ত্রিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়ে গণমানুষের সংগঠনে পরিণত হয়। দীর্ঘ ৬৯ বছরের পথপরিক্রমায় অনেক চড়াই-উতরাই পেরুনো দল আওয়ামী লীগের লক্ষ্য সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণ। মাদকমুক্ত, বিজ্ঞানমনস্ক আধুনিক প্রজন্ম গড়ে তোলা। আগামী ডিসেম্বরে অনুষ্ঠেয় একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সেভাবেই তৈরি হবে নির্বাচনী ইশতেহার। সাত দশকে পা রাখার দিনে আজ প্রথম নিজস্ব ভবনে কার্যালয় পাচ্ছে আওয়ামী লীগ। সারাদেশ থেকে সাড়ে চার হাজার নেতৃবৃন্দ গণভবন থেকে দলীয় কার্যালয়ের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ শাসনের অবসান ও পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, তদানীনন্তন তরুণ রাজনীতিক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও শামসুল হকের নেতৃত্বে ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠিত হয়। জন্মলগ্নে নাম ছিল ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ’। জন্মলগ্ন থেকেই ধর্মনিরপেক্ষ-অসাম্প্রদায়িক রাজনীতি, বাঙালি জাতীয়তাবাদ, গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি, শোষণমুক্ত সাম্যের সমাজ নির্মাণের আদর্শ এবং একটি উন্নত সমৃদ্ধ আধুনিক, প্রগতিশীল সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থা নির্মাণের রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক-সামাজিক ও সাংস্কৃতিক দর্শনের ভিত্তি রচনা করে আওয়ামী লীগ। যার পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৫৫ সালের কাউন্সিলে ধর্মনিরপেক্ষ নীতি গ্রহণের মাধ্যমে অসাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক দল হিসেবে ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ’ নামকরণ করা হয়। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ’৫২-এর ভাষা আন্দোলন থেকে ’৬৬-এর ছয় দফা এবং ’৬৯-এর গণআন্দোলনসহ দীর্ঘ সংগ্রামের পর ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাঙালি লাভ করে স্বাধীনতা। পৃথিবীর মানচিত্রে অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে সদ্য স্বাধীন দেশ পুনর্গঠন ও বিশ্বসভায় স্থান করে নেওয়ার অগ্রযাত্রার মুহূর্তে পরাজিত শত্রুদের চক্রান্তে ১৯৭৫-এ ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু নিহত হন এবং দেশ পাকিস্তান পন্থার প্রতিক্রিয়াশীলতার আবর্তে ডুবে যেতে থাকে। সেই দুর্দিনে ১৯৮১ সালে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বিদেশ থেকে ফিরে এসে দলের হাল ধরেন। তার নেতৃত্বেই দেশ ঘুরে দাঁড়ায় মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পুনরুদ্ধার করে আবার উন্নতির অভিযাত্রায়। জাতির জনকের স্বপ্ন পূরণ করতে গিয়ে তিনি শহর থেকে গ্রামে ঘুরে বেড়িয়েছেন। লড়াই করেছেন গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার। স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনেও নেতৃত্ব দিতে হয়েছে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাকে। দীর্ঘ ২১ বছর পর শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ প্রথম ক্ষমতায় আসে। এরপর ২০০৮ এবং ২০১৪ সালে আবার সরকার গঠন করে টানা সাড়ে নয় বছর ক্ষমতায়। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বেই দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছে। বাংলাদেশ এখন স্বপ্লোন্নত দেশ। পদ্মা সেতু নির্মিত হচ্ছে। এখন সারা দেশে সড়ক, মহাসড়ক, সেতু, ফ্লাইওভার, পাতাল সড়ক, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, মেট্রোরেল, রেল, নৌ ও যোগাযোগ অবকাঠামোগত উন্নয়নে ব্যাপক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। আওয়ামী লীগের দাবি, উন্নয়নের মহাসড়কে যুক্ত হয়েছে দেশ। শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই বাংলাদেশের প্রায় সম-আয়তনের সমুদ্রসীমা অর্জন করা হয়েছে। দীর্ঘদিনের ছিটমহল সমস্যার সমাধান হয়েছে। আওয়ামী লীগের প্রথম মেয়াদে পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় শান্তিচুক্তি হয়েছে। বাংলাদেশ এখন মহাকাশের অংশীদার। চলতি বছরেই আকাশে উেক্ষপণ করা হয়েছে স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১। দ্বিতীয় স্যাটেলাইট তৈরির কাজও শুরু হয়েছে। আওয়ামী লীগের লক্ষ্য একটি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ নির্মাণ করা। ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, দলটির জন্ম মোটেই সুখকর ছিল না। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই দলটির নেতা-কর্মীদের নানা জেল-জুলুম-অত্যাচার সইতে হয়েছে। বহু ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্যে কখনো বিরোধী দলে, কখনো সরকারে থেকে দেশ গঠনে অনন্য অবদান রেখে চলেছে মাটি ও মানুষের রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। দলটির সূচনালগ্ন থেকে এ পর্যন্ত সাতজন সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। এর মধ্যে বর্তমান সভানেত্রী শেখ হাসিনা সর্বোচ্চ সাতবার, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী তিনবার করে সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন। এ ছাড়া মওলানা আবদুর রশীদ তর্কবাগীশ দুবার এবং এ এইচ এম কামারুজ্জামান ও আবদুল মালেক উকিল একবার করে সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন। আর সৈয়দা জোহরা তাজউদ্দীন একবার দলের আহ্বায়ক নির্বাচিত হয়েছেন। ১৯৮১ সালের ১৩-১৫ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিলে সভানেত্রী নির্বাচিত করা হয় শেখ হাসিনাকে। নির্বাসনে থাকা অবস্থায় মাত্র ৩৪ বছর বয়সে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী হয়েছিলেন শেখ হাসিনা। পাহাড়সম শোক বুকে নিয়ে দেশে ফিরে আওয়ামী লীগের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে ঘরে-বাইরের নানামুখী ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করতে হয় তাকে। আওয়ামী লীগে বড় ধরনের ভাঙন, তৎকালীন ক্ষমতাসীনদের নানামুখী ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করেছেন শেখ হাসিনা শক্ত হাতে। ৬৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিনে আওয়ামী লীগের সামনে চ্যালেঞ্জ রয়েছে অনেক। এর মধ্যে দলকে টানা তৃতীয় মেয়াদে আবার ক্ষমতায় আনতে হবে। এজন্য প্রথম ধাপ হচ্ছে, দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল নিরসন করে সংসদ নির্বাচনে একক প্রার্থী নিশ্চিত করা। দিবসটি যথাযথ মর্যাদায় পালন উপলক্ষে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এইদিন বিশেষ কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে সকাল ৯টায় ধানমন্ডির বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে পুষ্পার্ঘ্য নিবেদন, সকাল ১০টায় ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন এবং সংগঠনের নবনির্মিত কার্যালয় ভবন উদ্বোধন। নবনির্মিত কার্যালয় ভবন উদ্বোধন করবেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই দিন বেলা ১১টায় গণভবনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের এক বিশেষ বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হবে। সভায় সভাপতিত্ব করবেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। দিবসটি পালন উপলক্ষে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

সর্বশেষ খবর