রবিবার, ২৪ জুন, ২০১৮ ০০:০০ টা
তৃণমূলের সাফকথা

অনুপ্রবেশকারীদের প্রশ্রয় দিলে ভরাডুবি হবে নৌকার

আওয়ামী লীগের বিশেষ বর্ধিত সভা

নিজস্ব প্রতিবেদক

আওয়ামী লীগের ৬৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে বিশেষ বর্ধিত সভায় তৃণমূল নেতারা বলেছেন, দল (আওয়ামী লীগ) ক্ষমতায় থাকায় এখন অনেকেই অন্য দল থেকে যোগদান করছে। এরা অনুপ্রবেশকারী। এদের ঠেকাতে না পারলে আগামীতে নৌকার সলিল সমাধি হবে। নৌকা খুঁজে পাওয়া যাবে না। তারা দলের উচ্চপর্যায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, কোনোভাবেই অনুপ্রবেশকারীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেওয়া যাবে না। আর জনগণ নিয়ে আমাদের কোনো সমস্যা  নেই। সমস্যা নিজেদের ভিতরে। জনগণ ভোট দেবে। কিন্তু আওয়ামী লীগকে হারানোর জন্য আওয়ামী লীগই যথেষ্ট। গতকাল সকালে গণভবনে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে দলের বিশেষ বর্ধিত সভা হয়। এতে স্বাগত বক্তব্য দেন দলের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। দলীয় সভানেত্রীর ভাষণের পর আট সাংগঠনিক বিভাগের আটজন প্রতিনিধি বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ পান। বর্ধিত সভায় জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বাকী বিল্লাহ বলেন, জাতির জনকের হত্যার পর আমাদের জন্য কঠিন সময় গেছে। তখন দলে কাউকে পাইনি। এখন আওয়ামী লীগের ভালো সময় যাচ্ছে। আজ বাইরে থেকে বহু মানুষ নৌকায় উঠেছে। এভাবে যদি নৌকায় ওঠা অব্যাহত থাকে, আর আমরা যদি তা ঠেকাতে না পারি, তাহলে এই নৌকার সলিল সমাধি হবে। এই নৌকা আর তীর খুঁজে পাবে না। তিনি বলেন, এখনো সময় আছে। জিয়াউর রহমান একদিন বাকশালের ফরম পূরণ করে বঙ্গবন্ধুর হাতে দিয়েছিলেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর তিনি বলেন, সো হোয়াট, ভাইস প্রেসিডেন্ট ইজ দেয়ার। আজও কিন্তু ওই জিয়ার প্রেতাত্মারা, ওই খন্দকার মোশতাকের প্রেতাত্মারা হাজারে হাজারে আওয়ামী লীগের ওপর ভর করেছে। সতর্ক হওয়ার সময় এসেছে। সতর্ক না হলে নৌকার সলিল সমাধি হবে। অনুপ্রবেশকারীদের যে কোনো মূল্যে ঠেকাতে হবে। ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বেনজির আহমেদ দলীয় সভানেত্রীর উদ্দেশে বলেন, ‘আপনি যে আসনগুলোয় সমস্যা আছে, সেখানে যদি দ্রুত একটি টিম পাঠিয়ে সেগুলো সমাধান করতে পারেন, তবে আওয়ামী লীগের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে নির্বাচনে জয়ী হওয়ার মতো কোনো দল এখন আর নেই। বিএনপি-জামায়াতকে খুঁজে পাওয়া যায় না। কিন্তু নির্বাচনের দিন কী হবে বলতে পারি না। সেজন্য যেখানে সমস্যা আছে, সেখানে আপনি নিজে হস্তক্ষেপ করে যা ভালো মনে করেন, সেই সিদ্ধান্ত দেবেন। আপনার সিদ্ধান্ত মেনে আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করব। কিন্তু সেই পরিবেশ ঠিক করে দিতে হবে। তিনি বলেন, অনেক সংসদ সদস্য আছেন যারা দলীয় কর্মসূচিতে যান না, অনুষ্ঠানে যান না, এক মঞ্চে যান না, এমনকি কথাও বলেন না। পাল্টাপাল্টি মারামারি হচ্ছে। নির্বাচনে আওয়ামী লীগই আওয়ামী লীগকে হারানোর জন্য যথেষ্ট। রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, প্রধানমন্ত্রী অনেক উন্নয়ন করেছেন। কিন্তু আমরা যদি বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটারদের এগুলো না বোঝাই, তবে জয়ের কাজটি কঠিন হয়ে যাবে। নেত্রী দিনরাত পরিশ্রম করছেন। আমাদেরও রাজশাহী বিভাগের প্রতিটি জেলা নৌকাকে বিজয়ী করার জন্য কাজ করতে হবে। বরগুনা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু বলেন, রাজনৈতিক দল কোনো সামরিক বাহিনী নয়। কিন্তু আমরা রাজনৈতিক দলের আদর্শ যদি সামরিক বাহিনীর মতো কমান্ড মেনে চলি, তবে আওয়ামী লীগ জয়লাভ করতে পারবে। আমরা যদি আত্মবিশ্বাস নিয়ে, নেত্রীর প্রতি পরিপূর্ণ শ্রদ্ধা রেখে এগিয়ে যেতে পারি, তবে এ  দেশে এমন কোনো শক্তি নেই যা আওয়ামী লীগকে পরাজিত করতে পারে। খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হারুনুর রশীদ বলেন, প্রধানমন্ত্রী যে বক্তব্য দিয়েছেন তা অনুসরণ করলেই আর অন্য কিছু করার দরকার পড়বে না। কিন্তু আমাদের মধ্যে অনেকেই আছেন এখানে বলবেন, সব ঠিক আছে। পরে যদি ভাগে কম পড়ে তখন বলবেন না কিছুই ঠিক হলো না। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা ঐক্যবদ্ধ হলে আমরা জয় পাব। খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী আমাদের ডেকেছিলেন। আমরা খুলনা মহানগর, জেলা, থানা ও ওয়ার্ডের নেতা-কর্মীরা ওয়াদা করেছিলাম, আমরা একসঙ্গে কাজ করব। সেখানে আমাদের একতার ফলে তালুকদার আবদুল খালেক জয় পেয়েছেন। আমরা সেমিফাইনালে জয়লাভ করেছি। আগামী জাতীয় নির্বাচনে খুলনা বিভাগের ৩৭টি আসনে নৌকাকে বিজয়ী করার মধ্য দিয়ে আমরা ফাইনালে জয়লাভ করব। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার নির্দেশনা মেনে চলার পরামর্শ দিয়ে হারুনুর রশীদ বলেন, ‘আমরা যারা উনার কথা মেনে চলেছি তারা কিন্তু ভালো আছি। অনেকেই হয়ত এমপি মন্ত্রী হইনি। কিন্তু উনি যা দিয়েছেন তাতে কিন্তু আমরা ভালো আছি। গাইবান্ধা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু বকর সিদ্দিক বলেন, ‘আজকে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা আমাদের দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। এই বক্তব্যে আমরা অনুপ্রাণিত হব, সংগঠনকে শক্তিশালী করব, উন্নয়নের কথাগুলো মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেব, মানুষের কাছে যাব, মানুষকে সুসংগঠিত করে আগামী নির্বাচনে দলকে বিজয়ী করব। আজকে সারা দেশের নেতা-কর্মীরা এখানে এসেছেন। আমরা শেখ হাসিনার ডাকে সারা দিয়ে নিজেদের সংগঠিত করব এবং উন্নয়নশীল দেশ গঠনে ভূমিকা রাখব। চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সিটি মেয়র আ জ ম নাছির বলেন, ‘নেত্রী আপনি যাকেই নৌকা তুলে দেবেন, আমরা তাকেই নির্বাচিত করব। চট্টগ্রামে যতগুলো আসন সবগুলোতে নৌকা এবং জোটের প্রার্থীকে বিজয়ী করব।’ মৌলভীবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নেসার আহমদ বলেন, ‘যে নির্দেশনা প্রধানমন্ত্রী আমাদের দিয়েছেন তা আমরা সিলেট বিভাগের নেতা-কর্মীরা অক্ষরে অক্ষরে পালন করব। আগামী জাতীয় নির্বাচনে আমরা অতীতের চেয়ে আরও ভালো করব। আপনি যে নির্দেশনা দিয়েছেন তা আমাদের আগামী দিনের পাথেয় হবে। তিনি বলেন, আমাদের অনেক উন্নয়ন প্রকল্প চলছে, সেগুলো দ্রুত সম্পন্ন করতে হবে। তা না হলে আগামী নির্বাচনে আমাদের জন্য পরীক্ষা।

সর্বশেষ খবর