রবিবার, ২৪ জুন, ২০১৮ ০০:০০ টা

আগামী নির্বাচন হবে চ্যালেঞ্জিং

--------- প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

সারা দেশে দলের নেতা-কর্মীদের কোন্দলে না জড়িয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকা মার্কার পক্ষে কাজ করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, পুরনো কেউ মনোনয়ন পাবেন কিনা তা নির্ভর করবে এলাকায় তার জনপ্রিয়তা আর তৃণমূলকে মূল্যায়নের ওপর। কাজেই দুঃসময়ের যারা নেতা-কর্মী, দুঃসময়ে যারা দলের হাল ধরে রাখেন, তারা যেন অবহেলিত না হন। গতকাল সকালে গণভবনে আওয়ামী লীগের বিশেষ বর্ধিত সভায় প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, সামনের নির্বাচন হবে চ্যালেঞ্জিং। এই নির্বাচনে সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে। যাকেই প্রার্থী করা হবে, তার পক্ষে কাজ করতে হবে। প্রার্থী হতে গিয়ে যারা দলের বদনাম করবে তাদের মনোনয়ন দেওয়া হবে না। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে এই বিশেষ বর্ধিত সভায় তৃণমূল নেতাদের উদ্দেশে এক ঘণ্টা ২৬ মিনিট দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রী। এর আগে সকালে আওয়ামী লীগের ৬৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে দৃষ্টিনন্দন ও আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধাসম্পন্ন গুলিস্তানের ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে দশ তলা নতুন দলীয় কার্যালয়ের উদ্বোধন করেন তিনি। সারা দেশ থেকে নেতা-কর্মীদের এনে সেই শুভকাজের অংশীদার করে রাখতেই গণভবনে বর্ধিত সভার আয়োজন করা হয়। গুলিস্তানের দলীয় কার্যালয়ের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানটি গণভবনে প্রজেক্টরের মাধ্যমে নেতা-কর্মীদের দেখানো হয়। সভায় শোক প্রস্তাব পাঠ করেন দলের দফতর সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ। বক্তব্য রাখেন দলের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পর আট বিভাগ থেকে আটজন জেলা সভাপতি/সাধারণ সম্পাদক বক্তব্য রাখেন।   বিগত ১০ বছরে আওয়ামী লীগের টানা দুই সরকারের সময়ে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য তৃণমূল নেতাদের দায়িত্ব দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এই উন্নয়ন করার ফলে মানুষ যে নৌকায় ভোট দেবে না তা কিন্তু হয় না। যদি না দেয় তার জন্য দায়ী থাকবেন আপনারা তৃণমূল। এটাই আমার কথা। কারণ, আপনারা সঠিকভাবে মানুষের কাছে যেতে পারেননি, বলতে পারেননি, বোঝাতে পারেননি, সেবা দিতে পারেননি। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন,  এত উন্নয়ন বাংলাদেশে কবে হয়েছে? কোনো সরকার করতে পেরেছে? পারেনি। তাহলে কেন অন্য দল ভোট পাবে? তিনি বলেন, নির্বাচনে জনগণ ভোট দেবে। ভোট চুরি, ভোট ডাকাতি করে কেউ ক্ষমতায় আসতে পারবে না। জনগণের ভোটের অধিকার নিয়ে কেউ ছিনিমিনি খেলতে পারবে না। আমরা ভোট চুরির বদনাম নিতে চাই না। জনগণের মন জয় করে তাদের ভোট নিয়ে ক্ষমতায় আসতে হবে।

জনগণ খুবই হিসাবি : দলীয় মনোনয়ন প্রসঙ্গে দলের সংসদ সদস্যদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের জনগণ খুবই হিসাবি। কেউ দুর্নীতি করলে তারা তা ভুলে যায় না। মানুষের চোখ খুলে গেছে। সময় খুব বেশি নেই। কাজ করতে গিয়ে টাকা দেবে আর ভোট চাইতে গেলে বলবে টাকা দিয়ে কাজ নিছি, ভোট দেব কেন? তিনি বলেন, একটি বিষয় লক্ষ্য করছি, অনেকেই স্বতঃপ্রণোদিত প্রার্থী হতে গিয়ে দলের বিরুদ্ধে কাজ করছেন। প্রার্থী হওয়ার অধিকার সবারই আছে। কিন্তু প্রার্থী হতে গিয়ে দলকে বদনামে ফেলবেন, এটা কোনোমতেই মেনে নেওয়া হবে না। এটা সবাইকে মাথায় রাখতে হবে। সরকারের উন্নয়নের কাজগুলোর কথা না বলে কোথায় কার বিরুদ্ধে কী দোষ আছে, সেটা খুঁজে জনগণকে যারা বলবেন, তারা কখনো আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাবেন না। তিনি বলেন, একটি বিষয় লক্ষ্য করছি, কেউ কেউ স্বতঃপ্রণোদিত প্রার্থী হয়ে তারা বিএনপির লুটপাট-সন্ত্রাসের কথা বলেন না। তাদের বক্তব্যে এসে যায় আমার আওয়ামী লীগের এমপির বিরুদ্ধে, সংগঠনের বিরুদ্ধে। জাতীয় নির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়ার বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, প্রার্থী হওয়ার অধিকার সবারই আছে। কিন্তু প্রার্থী হতে গিয়ে দলকে বদনামে ফেলবে, এটা কোনোমতেই মেনে নেওয়া হবে না। সরকারের উন্নয়নের কাজগুলোর কথা না বলে কোথায় কার বিরুদ্ধে কী দোষ আছে, সেটা খুঁজে জনগণকে যারা বলবেন তারা কখনো আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাবেন না। তিনি বলেন, ‘আমি এগুলো কিন্তু রেকর্ড করছি। আমার কাছে প্রতিদিন চারশর মতো এসএমএস আসে, আমি প্রতিটি এসএমএস পড়ি। যারা দলের বিরুদ্ধে বদনাম করবে সে কি বোঝে না যে, এতে তার ভোটও নষ্ট হবে। ১০ বছর সরকারে থাকার পর যদি কেউ দলের বিরুদ্ধে বদনাম করে, তাহলে জনগণ তো তাকেও ভোট দেবে না। এটা হলো বাস্তবতা। তৃণমূল নেতাদের উদ্দেশে দলের সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, কে প্রার্থী সেটা বড় কথা নয়, নৌকা মার্কায় ভোট চাইতে জনগণের কাছে যেতে হবে। নির্বাচনে যাকে মনোনয়ন দেওয়া হবে, তার পক্ষে সবাইকে কাজ করতে হবে। দলের মধ্যে ঐক্য রাখতে হবে। ত্যাগের মনোভাব নিয়ে কাজ করতে হবে।

অনুপ্রবেশকারীদের এখনই বিদায় করেন : তিন কারণে দলে অনুপ্রবেশকারীরা আসে বলে জানিয়েছেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আমরা ক্ষমতায় থাকার কারণে বিভিন্ন দল থেকে আমাদের দলে ছুটে আসছে। আর গ্রুপ করার জন্য বাছ-বিছার না করে যাকে পাচ্ছেন তাকে নিয়ে নিজের শক্তি দেখাতে চান। এরা আসে মধু খেতে। এরা আপনার সঙ্গে থাকতে আসে না। কাজ করতে আসে না। এ ছাড়া যারা আগুন দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে, সন্ত্রাস করে মামলার আসামি হয়েছে, সেই মামলা থেকে বাঁচতে আসছে। আর একটি অংশ আসছে ক্ষমতার কাছে থেকে পয়সা কামাতে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি সারা দেশে সার্ভে করে বের করেছি, কাদের বিরুদ্ধে মামলা করেছি। তাদের মধ্যে কারা আমার দলের, সেই তালিকা আমার কাছে রয়েছে। কাজেই বলব, কেউ যদি তাদের প্রশ্রয় দিয়ে থাকেন, এখনই বিদায় করেন। কারণ তারা দুঃসময়ে থাকবে না। অনেকে এসে দলে কোন্দল করে, খুনখারাবি করে। এসব বিষয়ে দলের নেতা-কর্মীদের সতর্ক থাকতে হবে। দলের লোক আপন নয়, বাইরের লোক আপন হয়ে গেছে, এটা মনে করার কোনো ?সুযোগ নেই। নিজের লোকদের চিনতে হবে।

বন্ধু হারাতে চাই না : দলীয় জোটের বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, জোট করেছি, মহাজোট করেছি। দলের স্বার্থে এটা করতে হয়েছে। ভবিষ্যতেও আমরা এটা করব। আমরা বন্ধু হারাব না। সবাইকে নিয়েই থাকতে চাই। এ জন্য যতটুকু আত্মত্যাগ করার তা করব। বড় দল হিসেবে আওয়ামী লীগের দায়িত্ব এক্ষেত্রে বেশি। বিএনপির রাজনীতির সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দুর্নীতিবাজদের দলে রাখার জন্য দলের গঠনতন্ত্র পরিবর্তন করে বিএনপি নিজেদের দুর্নীতিবাজ দল হিসেবে প্রমাণ করেছে। তারেক রহমানকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন হিসেবে মনোনয়ন দেওয়ার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘বিএনপির গঠনতন্ত্রে ছিল— কেউ যদি দুর্নীতিতে সাজাপ্রাপ্ত হয়, তাহলে চেয়ারপারসন হতে পারবে না। তারা এই গঠনতন্ত্র পরিবর্তন করে দুর্নীতিবাজকে রাখতে সেই ব্যবস্থা করছে। এর মাধ্যমে তারা নিজেরাই স্বীকার করেছে, তাদের দলটি দুর্নীতির দল।’ তিনি আরও বলেন, ‘অবৈধভাবে ক্ষমতায় গিয়ে গঠিত দল জনগণকে কিছু দিতে পারে না। তারা চুরি করতে পারে। এতিমের অর্থ আত্মসাৎ করে আজ তাদের নেত্রী জেলে। তার অবর্তমানে এমন একজনকে চেয়ারপারসন হিসেবে নিয়োগ করা হলো, যিনি দু-দুটি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত। একটিতে সাত বছর, আরেকটিতে ১০ বছরের সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি হয়ে গেল বিএনপির চেয়ারপারসন।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যারা জুয়া খেলে অর্থ উপার্জন করে, সেই জুয়াড়ি, মাদকসেবী, এতিমের অর্থ আত্মসাৎকারী, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ আর দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত তারা কেন ভোট পাবে? সেই দল কেন ভোট পাবে? এই প্রশ্নের উত্তর তো আমি পাই না। যদি বিএনপি-জামায়াত, যুদ্ধাপরাধী ক্ষমতায় আসে তাহলে এই দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’ পদ্মা সেতু থেকে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন বন্ধ হয়ে যাওয়ার প্রসঙ্গ টেনে সরকারপ্রধান বলেন, পদ্মা সেতু নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছিল, দোষারোপ করা হয়েছিল। একজন সুদখোরের পক্ষে দাঁড়াতে গিয়ে মার্কিন তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর নির্দেশে এই পদ্মা সেতু থেকে বিশ্বব্যাংক অর্থায়ন বন্ধ করে দিল। তারা আমাদের দুর্নীতির বিষয়ে দোষারোপ করতে চেয়েছিল। আমি চ্যালেঞ্জ করেছিলাম, বলেছিলাম, আমরা দুর্নীতি করে নিজের ভাগ্য গড়তে ক্ষমতায় আসিনি। জনগণের ভাগ্য গড়তে এসেছি। বললাম, কী দুর্নীতি তার প্রমাণ দিন। অবশেষে কানাডার কোর্ট রায় দিয়েছে, পদ্মা সেতুর দুর্নীতির সব অভিযোগ ভুয়া ও মিথ্যা। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠা হয়েছিল বাংলাদেশকে স্বাধীন করার জন্য। আওয়ামী লীগ সবসময় জনগণের জন্য কাজ করেছে। রাজনীতি সঠিক হলে এবং দেশের কল্যাণে নিঃস্বার্থভাবে কাজ করলে দেশের উন্নয়ন হয়, এটি প্রমাণ করেছে আওয়ামী লীগ। ১৯৮১ সালে দেশে ফিরে আওয়ামী লীগের দায়িত্ব নেওয়ার প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৭৫ সালে পরিবার হারিয়ে আমি আওয়ামী লীগের কাছেই বাবা-মা, ভাইয়ের ভালোবাসা পেয়েছি। আওয়ামী লীগের মধ্যেই আমি আমার পরিবারকে পেয়েছি।

সর্বশেষ খবর