সোমবার, ২৫ জুন, ২০১৮ ০০:০০ টা

রাত পোহালেই গাজীপুরে ভোট

৬ কেন্দ্রে ইভিএম । মাঠে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী । ৬১ জন ইসি পর্যবেক্ষক

গোলাম রাব্বানী ও খায়রুল ইসলাম, গাজীপুর থেকে

রাত পোহালেই গাজীপুরে ভোট

গাজীপুর সিটি নির্বাচনে নেওয়া হয়েছে কঠোর নিরাপত্তা। গতকাল নেমেছে বিজিবি —বাংলাদেশ প্রতিদিন

আজ রাত পোহালেই গাজীপুর সিটি নির্বাচনের ভোট গ্রহণ। সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত টানা ভোট চলবে। ভোট গ্রহণে সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। আজ কেন্দ্রে কেন্দ্রে পাঠানো হবে ব্যালট পেপারসহ নির্বাচনী মালামাল। আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে মাঠে নেমেছেন বিজিবি-র‌্যাব-পুলিশের সদস্যরা। অপেক্ষা এখন শুধু ভোট গ্রহণের।

সিটিতে ভোট ঘিরে বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ। সংসদ নির্বাচনের আগে গাজীপুরের ভোটকে মর্যাদার লড়াই হিসেবে দেখছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। তাই গতকাল শেষ প্রচার-প্রচারণার দিনেও ঘাম ঝরিয়েছেন  মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা। দিনভর নগরীর অলিগলি চষে বেড়িয়েছেন তারা। সংসদ ও রাজশাহী-বরিশাল-সিলেট সিটি নির্বাচনের আগে জনপ্রিয়তার যাচাই হবে গাজীপুরে। লড়াই হবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নৌকা ও বিএনপির ধানের শীষ প্রতীকের মধ্যে। দুই দলই নির্বাচনী লড়াইয়ের সর্বশক্তি নিয়ে মাঠে রয়েছে। যদিও দুই দলের মেয়র প্রার্থী ছাড়াও আরও পাঁচজন মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তবে কে হচ্ছেন গাজীপুরের নগরপিতা তা নির্ধারণ হবে কাল। নির্বাচন নির্বিঘ্ন করতে গাজীপুরজুড়ে নিরাপত্তাবলয় গড়ে তুলেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ভোটের দিন নির্বাচন কমিশনের ৬১ জন নিজস্ব পর্যবেক্ষক মাঠে কাজ করবেন। তারা ভোট গ্রহণে কোনো অনিয়ম হলে তাত্ক্ষণিক নির্বাচন কমিশনকে অবহিত করবেন। সে অনুযায়ী অ্যাকশনে যাবে কমিশন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে মাঠে রয়েছেন বিজিবি-র?্যাব-পুলিশের সদস্যরা। ভোট উপলক্ষে সিটি এলাকায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। বন্ধ থাকবে সব কলকারখানা। গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার রকিবউদ্দিন মণ্ডল গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। আজ সকাল ১০টা থেকে নির্বাচনী মালামাল বিতরণ করা হবে। ইতিমধ্যে ৯ হাজার ভোট গ্রহণ কর্মকর্তাকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। নির্বাচনী এলাকায় যাতে কেউ গোলযোগ, অনিয়ম করতে না পারে তার জন্য বিপুল পরিমাণ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন থাকবে।

একনজরে গাজীপুর ভোটের তথ্য : নির্বাচনে মাঠে রয়েছেন  মেয়র পদে সাতজন, সাধারণ কাউন্সিলর পদে ২৫৪ জন ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে ৮৪ জন প্রার্থী। মেয়র প্রার্থীরা হলেন— আওয়ামী লীগের মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম (নৌকা), বিএনপির মো. হাসান উদ্দিন সরকার (ধানের শীষ), ইসলামী ঐক্যজোটের ফজলুর রহমান (মিনার), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মো. নাসির উদ্দিন (হাতপাখা), বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের মো. জালাল উদ্দিন (মোমবাতি), বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির কাজী মো. রুহুল আমিন (কাস্তে) ও স্বতন্ত্র প্রার্থী ফরিদ আহমদ (টেবিল ঘড়ি)।

নির্বাচনে ১১ লাখ ৩৭ হাজার ৭৩৭ জন ভোটার ভোট দিয়ে একজন মেয়র, ৫৭টি সাধারণ এবং ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডের জন্য কাউন্সিলর নির্বাচিত করবেন। এ সিটিতে ৪২৫টি  কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ হবে; এর মধ্যে ৩৩৭টিকে গুরুত্বপূর্ণ এবং ৮৮টিকে সাধারণ কেন্দ্র হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

মাঠে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী : নির্বাচন ঘিরে ২৯ প্লাটুন বিজিবি  মোতায়েন করা হয়েছে। গতকাল সকাল থেকে বিজিবি টহলে রয়েছে। তারা ভোটের পরের দিন বুধবার পর্যন্ত নির্বাচনী এলাকায় দায়িত্ব পালন করবেন। এর বাইরে আরও বিজিবি সদস্য স্ট্যান্ডবাই রাখা হয়েছে। প্রয়োজনে সেখান থেকে  মোতায়েন করা হতে পারে।

জানা গেছে, সিটির ৫৭টি ওয়ার্ডের প্রতি দুটিতে এক প্লাটুন করে মোট ২৯ প্লাটুন বিজিবি সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন এই নির্বাচনে। ২০ থেকে ৩০ জন বিজিবি সদস্য নিয়ে এ বাহিনীর এক একটি প্লাটুন গঠিত হয়েছে। আর ২৯ প্লাটুন বিজিবির মধ্যে কোনাবাড়ী ও কাশিমপুর এলাকায় ৭ প্লাটুন, টঙ্গী এলাকায় ১০ প্লাটুন এবং জয়দেবপুর, বাসন চান্দনা  চৌরাস্তা ও কাউলতিয়া এলাকায় ১২ প্লাটুন দায়িত্ব পালন করবে। নির্বাচনে সার্বিক নিরাপত্তার জন্য বিজিবি, র‌্যাব, পুলিশ, এপিবিএন, আনসারসহ প্রায় ১৫ হাজার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন থাকবেন। নগরীর ৫৭টি ওয়ার্ডে পুলিশ ও আনসারের সমন্বয়ে ৫৭টি স্ট্রাইকিং ফোর্স এবং সংরক্ষিত ওয়ার্ডে ২০টি স্ট্রাইকিং ফোর্স কাজ করবে। এ ছাড়া ৫৭টি ওয়ার্ডে র‌্যাবের মোট ৫৭টি টিম  মোতায়েন থাকবে। নির্বাচনের আগে ও পরে চার দিন ৫৭টি ওয়ার্ডে একজন করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োজিত থাকবেন। আরও ১০ জন অতিরিক্ত ধরে সর্বমোট ৬৭ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করবেন। এ ছাড়া সিটির প্রতি তিনটি ওয়ার্ডের জন্য একজন করে মোট ১৯ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োজিত থাকবেন। তারা ভোটের পরের দিন ২৭ জুন পর্যন্ত নগরীতে দায়িত্ব পালন করবেন।

থাকবেন ৭০০ র‌্যাব সদস্য : র‌্যাব-১ এর গাজীপুরের পোড়াবাড়ী ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার মোহাম্মদ মহিউল ইসলাম জানান, গাজীপুর সিটি নির্বাচনে ৫৭টি ওয়ার্ডে একটি করে টহল দল নিয়োজিত থাকবে। প্রায় ৭০০ র‌্যাব সদস্য নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করবেন। গাজীপুরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ জানান, সিটি নির্বাচন উপলক্ষে ইতিমধ্যে পুরো গাজীপুর সিটি এলাকা নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পোশাক ছাড়াও বিপুল পরিমাণ পুলিশ সাদা পোশাকে নগরীর বিভিন্ন স্থানে দায়িত্ব পালন করছে।

ইসির নিজস্ব পর্যবেক্ষক থাকবে ৬১ জন : এই সিটি ভোটে নতুন উদ্যোগ নিয়েছে ইসি। এবার এসএমএসভিত্তিক  ভোটকেন্দ্র মনিটরিং ব্যবস্থা চালু হচ্ছে। এক্ষেত্রে নির্বাচন চলাকালীন সময়ে ভোটকেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের কাছ থেকে (শর্টকোডে-১০৫) এসএমএসের মাধ্যমে ১৯ বিষয়ে গোপনে তথ্য নেবে নির্বাচন কমিশন। সেইসঙ্গে বিশেষ মুহূর্তে চালু থাকবে বিশেষ এসএমএসের ব্যবস্থাও। এক্ষেত্রে কোনো কেন্দ্রে জাল ভোট বা সিল মারার ঘটনা ঘটলে বা তথ্য পেলে তাত্ক্ষণিক ব্যবস্থা নেবে কমিশন। এজন্য সংশ্লিষ্ট প্রিসাইডিং অফিসারদের জন্য একটি নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। সেইসঙ্গে ইসির নিজস্ব ৬১ কর্মকর্তাকে ভোট পর্যবেক্ষণে নিয়োজিত করা হয়েছে। ভোটের দিন তারা কেন্দ্রে কেন্দ্রে অবস্থান করবেন।   

৬ কেন্দ্রে ইভিএম : জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার সম্ভব না হলেও স্থানীয় নির্বাচনে এ প্রযুক্তির ব্যবহার ধীরে ধীরে বাড়ছে। রংপুর ও খুলনার পর গাজীপুরে ৬টি কেন্দ্রে ইভিএম ব্যবহার করা হচ্ছে। ইসি জানিয়েছে, ৬টি কেন্দ্রে ইভিএম ও ৩টি কেন্দ্রে সিসিটিভি স্থাপন করা হচ্ছে। যেসব কেন্দ্রে ইভিএম ব্যবহার করা হবে সেগুলো হলো ১৫৪, ১৫৫, ১৭৪, ১৭৫, ১৯১ ও ১৯২ নম্বর কেন্দ্র। ইসি জানিয়েছে, আজ ভোটের আগের দিন ২৫ জুন ৬ ভোটকেন্দ্রে সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত মক ভোটিং অনুষ্ঠিত হবে। আজ রাত ১২টা থেকে ২৬ জুন মধ্যরাত পর্যন্ত জরুরি সার্ভিস ব্যতীত অন্য সব যানবাহন বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সেইসঙ্গে এই সময়ে সিটি করপোরেশন এলাকায় মালামাল পরিবহনও বন্ধ রাখার নির্দেশনা দিয়েছে কমিশন। এ ছাড়া গত ২৩ জুন মধ্যরাত থেকে মোটরসাইকেল চলাচলেও নিষেধজ্ঞা জারি করা হয়েছে।

গাজীপুরে নির্বাচন অবাধ শান্তিপূর্ণ করতে ভূমিকা রাখবে ইসি : গাজীপুর সিটি নির্বাচন অবাধ ও শান্তিপূর্ণ করতে নির্বাচন কমিশন যথাযথ ভূমিকা রাখবে সরকার এটাই আশা ও বিশ্বাস করে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। তিনি গতকাল সকালে গাজীপুরের সফিপুরের আনসার ভিডিপি একাডেমীতে আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর সার্কেল অ্যাডজুটেন্ট/সহকারী সার্কেল অ্যাডজুটেন্ট/উপজেলা আনসার ও ভিডিপি কর্মকর্তা পদে নব নিযুক্ত ১৯১ জনের ৬ মাস মেয়াদি মৌলিক প্রশিক্ষণ সমাপণী কুচকাওয়াজে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দিয়ে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন। এসময় তিনি আরও বলেন, গাজীপুর সিটিতে ভোটাররা যাকে খুশি তাকে ভোট দেবে এতে সরকারের কোনো পরামর্শ নেই। এসময় তিনি আগামী জাতীয় নির্বাচনে আনসার বাহিনীর সদস্যরা তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করবেন বলেও জানান। মৌলিক প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজে আরও উপস্থিত ছিলেন বাহিনীর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শেখ পাশা হাবিব উদ্দিন, অতিরিক্ত মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নুরুল আলম, একাডেমীর ভারপ্রাপ্ত কমান্ড্যান্ট সাইফুদ্দিন মোহাম্মদ খালেদসহ বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। অনুষ্ঠানে স্ব স্ব ক্ষেত্রে আশাব্যঞ্জক ফলাফলের জন্য তিনজন চৌকষ প্রশিক্ষণার্থীকে পুরস্কৃত করা হয়।

শেষ দিনের প্রচারে দুই প্রার্থী যা বললেন : আগামীকালের ভোটকে সামনে রেখে গতকাল গাজীপুর সিটি নির্বাচনের প্রার্থী-সমর্থকরা শেষ দিনের প্রচারণা চালিয়েছেন। এ সময় তারা ভোট প্রার্থনা করে উন্নয়নের নানা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, কেউ কেউ ভোট নিয়ে শঙ্কাও প্রকাশ করেছেন।

আওয়ামী লীগ প্রার্থী : গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম গাজীপুরের শালনায় দিনের প্রথম কর্মসূূচি পালন করেন। এ পথসভায় বলেন, নির্বাচনে নৌকার পক্ষে একটি জোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। গাজীপুরের মানুষ উন্নয়নের পক্ষে ভোট দেবেন। গাজীপুরের মানুষ আর অনুন্নয়নের পথে থাকতে চান না। তিনি বলেন, প্রচারে গিয়ে দেখেছি নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবার স্বতঃস্ফূর্ত মনোভাব। আগে গাজীপুর উন্নয়ন বঞ্চিত হয়েছে। এ বঞ্চনা অবসানের সময় হয়েছে। এ সময় খুলনা সিটির নবনির্বাচিত মেয়র তালুকদার আবদুল খালেক উপস্থিত ছিলেন। শালনার পর জাহাঙ্গীর আলম মহানগরের কোনাবাড়ি এলাকায় যান। সেখান থেকে বাসন এলাকার চৌরাস্তায় পথসভা করেন। এই পথসভায় জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘এ অঞ্চলেই আমি বেড়ে উঠেছি। নেতা হওয়ার স্বপ্ন দেখেছি। এখানকার মানুষের ভোট পাওয়া আমার অধিকার। তাদের ভালোবাসাতেই আজ আমি জাহাঙ্গীর আলম হয়েছি। আপনাদের জন্যই সত্তর বছরের দলটির মেয়র প্রার্থী আমি হতে পেরেছি। আপনারা নিশ্চয়ই আমার সম্মান রাখবেন।’ তিনি আরও বলেন, গাজীপুরে এখন হাঁটা চলার মতো রাস্তাঘাট নেই। বর্তমান মেয়র কিছুই করেননি।’ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, এই অনুন্নয়নে কোনো মানে হয় না। আমি এর অবসান চাই। তিনি বলেন, এখন কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ সরকার। নির্বাচিত হলে আমার পরিকল্পনা প্রধানমন্ত্রীর কাছে তুলে ধরে তা বাস্তবায়নের কথা বলব। বাসনের সভার পর জাহাঙ্গীর আলম জয়দেবপুরে ২৪ নং ওয়ার্ডে যান। সেখানে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন তিনি। তারপর কোনাবাড়িতে গিয়ে সভা করেন। দুপুরে ছয়দানা হারিকেন এলাকার নিজ বাসভবনে সংবাদ সম্মেলন করেন জাহাঙ্গীর আলম। তিনি আবারও উন্নয়নের স্বার্থে তাকে নির্বাচিত করার জন্য সাংবাদিকদের মাধ্যমে জনগণের কাছে আবেদন করেন। জাহাঙ্গীর আলম বলেন, বিএনপির প্রার্থী হাসান সরকার এখন ভোট না চেয়ে অভিযোগ করে বেড়াচ্ছেন। তিনি গাজীপুরে একাধিক ভোট ডাকাতির নির্বাচন করেছেন। ভোটের জন্য রক্তাক্ত করেছেন মানুষকে। আমি চাই না এখানে কোনো রক্ত ঝরুক। এ সময় নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান সমন্বয়ক ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট মো. আজমত উল্লাহ খান উপস্থিত ছিলেন। সংবাদ সম্মেলনের পর জাহাঙ্গীর আলম গাজীপুর শহরের শিববাড়ি এবং আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের সামনে, টঙ্গী মিলগেট, গাছা বাজার ও বোর্ডবাজার এলাকায় পথসভায় বক্তব্য দেন। বিকালে মহানগরীর ৫৭টি ওয়ার্ডে ৪২৫ কেন্দ্র কমিটির নেতা-কর্মীরা এবং সর্বস্তরের জনতা এলাকায় মিছিল করেন। এদিন আওয়ামী লীগের প্রার্থী মো. জাহাঙ্গীর আলমকে বিজয়ী করতে দিনভর গণসংযোগ ও প্রচারণায় অংশ নেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এ কে এম এনামুল হক শামীম, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী, সদস্য এস এম কামালসহ স্থানীয় নেতারা। এদিকে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের সংবাদ সম্মেলন এবং খুলনার মেয়র তালুকদার আবদুল খালেকসহ অন্যান্য নেতাদের নিয়ে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর প্রচারণার বিষয়ে অভিযোগ তুলেছেন বিএনপির প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকার। তিনি বলেন, আচরণবিধি লংঘন করে সরকার দলের প্রার্থীরা প্রচারণা চালাচ্ছে। নির্বাচন কমিশন সেটা দেখছে না।

বিএনপি প্রার্থী : গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী মো. হাসান উদ্দিন সরকার গতকাল টঙ্গী থানা বিএনপি কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলন করেছেন। এ সময় তিনি অভিযোগ করে বলেছেন, গত ২০ জুন নির্বাচন কমিশন ও তাদের নিয়ন্ত্রিত প্রশাসন প্রার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন- নির্বাচনী মাঠে তার বাস্তবায়ন হচ্ছে না। বরং খুলনা স্টাইলে নির্বাচন করার প্রস্তুতি চলছে। পুলিশ ২০ দলীয় জোট নেতা-কর্মীদের গণগ্রেফতার ও হুমকি-ধমকি দিয়ে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড বানচাল করে দিয়েছে। আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থীকেও পুলিশের গাড়িতে দেখা গেছে। খুলনার কারচুপির অভিজ্ঞতা সম্পন্ন পুলিশ সদস্যদের এরই মধ্যে গাজীপুরের নির্বাচনী দায়িত্ব পালনের জন্য আনা হয়েছে। কিন্তু শত বাধা সত্ত্বেও আমরা নির্বাচনে আছি এবং শেষ পর্যন্ত থাকব। সরকার ও নির্বাচন কমিশনের চরিত্র জাতির সামনে তুলে ধরব। তিনি আওয়ামী লীগের ‘গোপন পরিকল্পনা’র কথা তুলে ধরে দাবি করেন, ‘বাইরে থেকে সিল মেরে ব্যালট ভিতরে  ঢোকানো হবে। কেন্দ্রে কেন্দ্রে পোলিং এজেন্টদের পুলিশ দিয়ে আটকে রেখে জোরপূর্বক তাদের বানানো রেজান্ট শীটে স্বাক্ষর নেওয়া হবে। যতক্ষণ পর্যন্ত স্বাক্ষর না দেবে ততক্ষণ পর্যন্ত এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের হতে দেবে না। খুলনার মতো কারচুপি যাতে ধরা না পড়ে সেজন্য তারা একটি সুবিন্যস্ত রেজাল্ট শিট তৈরি করে রেখেছে। তাদের দলীয় ৫০ জন কাউন্সিলরকেও চূড়ান্ত করে রেখেছে।’ হাসান সরকার ঝড়-বৃষ্টি ও সব বাধা উপেক্ষা করে ভোটারদের কেন্দ্রে আসার আহ্বান জানিয়ে বলেন, আমরা আওয়ামী লীগের সব অপকৌশল জেনে গেছি। আমরা তাদের এসব অপকৌশল প্রতিহত করার চেষ্টা করব। তিনি সকাল ৭টার মধ্যে ধানের শীষ প্রতীকের সব এজেন্টকে ভোট কেন্দ্রে নির্বিঘ্নে আসার আহ্বান জানান এবং কেন্দ্র পাহারা দেওয়ার জন্য ২০ দলীয় জোটের সব নেতা-কর্মীকে কেন্দ্রের পাশে অবস্থান নেওয়ার অনুরোধ জানান। হাসান সরকার আরও বলেন, আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলে। কিন্তু বাস্তবে তারা মুক্তিযোদ্ধাদের কতটুকু সম্মান করে? এই নির্বাচনে আমি হয়তো শেষ মুক্তিযোদ্ধা হব। আগামীতে হয়তো আর কোনো মুক্তিযোদ্ধাকে আপনারা নির্বাচনে পাবেন না। তাই সব মুক্তিযোদ্ধাকে আমার পক্ষে ভূমিকা রাখার আহ্বান জানাই। তিনি বলেন, সুনামের সঙ্গে বেঁচে থাকতে চাই। মানুষের ঘৃণা নিয়ে বেঁচে থাকতে চাই না। জীবনের এই শেষ নির্বাচনে জীবন দিয়ে হলেও গাজীপুরবাসীর ইজ্জত রক্ষা করব। তিনি সাংবাদিকদের সঠিক চিত্র তুলে ধরার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, মহান আল্লাহ্র পরে আপনারা আমাদের ভরসা। আপনারা সঠিক চিত্র তুলে ধরতে পারলে এবং ন্যূনতম সুষ্ঠু ভোট হলে সম্মানজনক ভোটে বিজয়ী হবো। সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন, গাজীপুর জেলা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি সালাহ উদ্দিন সরকার, টঙ্গী থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম শুক্কুর, জেলা যুবদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি প্রভাষক বসির উদ্দিন, জেলা হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম সম্পাদক মুফতি নাসির উদ্দিন প্রমুখ। সংবাদ সম্মেলন শেষে হাসান উদ্দিন সরকার গাজীপুর জেলা বিএনপি কার্যালয়ে গিয়ে দলীয় নেতা-কর্মীদের খোঁজ খবর নেন এবং গ্রেফতারকৃতদের নিয়মিত খোঁজ খবর রাখার জন্য দলের দায়িত্বশীল নেতাদের নির্দেশনা দেন। বিকালে হাসান উদ্দিন সরকার টঙ্গীর ৫৭ নম্বর ওয়ার্ডে সর্বশেষ প্রচারণায় অংশ নেন।

ইসলামী আন্দোলন প্রার্থী : গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রচার-প্রচারণার সর্বশেষ দিনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মেয়র প্রার্থী মো. নাসির উদ্দিন নগরীর বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ করে ব্যস্ত দিন কাটিয়েছেন। এ সময় তিনি দুর্নীতি মুক্ত নগর গড়ার অঙ্গীকার ব্যক্ত করে ভোটারদের কাছে ভোট প্রার্থনা করেন।

গাজীপুরের এসপিকে প্রত্যাহারের দাবি বিএনপির : গাজীপুরের পুলিশ সুপার (এসপি) হারুন অর রশীদকে প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে বিএনপি। গতকাল একটি প্রতিনিধি দল প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদার সঙ্গে দেখা করে এ দাবি জানায়। এর আগেও দলটি একাধিকবার একই দাবি জানিয়েছিল। কমিশনের সঙ্গে বৈঠক শেষে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান সাংবাদিকদের বলেন, একজন মানুষের কারণে পুরো নির্বাচন প্রশ্নের মুখে পড়বে। ওই কর্মকর্তাকে প্রত্যাহার করার ক্ষমতা নির্বাচন কমিশনের আছে। বিএনপি ইসিকে সেই ক্ষমতা ব্যবহার করতে বলেছে। আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলমের পুলিশের গাড়ি ব্যবহার করার বিষয়ে মঈন খান বলেন, এটা সবাই দেখেছে। আলোচনা হচ্ছে।

বিএনপি গাজীপুর নির্বাচনে কারচুপির আশঙ্কা করছে কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে মঈন খান বলেন, আশঙ্কা আছে বলেই বিএনপি ইসিতে এসেছে। এখন নির্বাচনে ভোট কারচুপির ধরনে পরিবর্তন হয়েছে। এখন পর্দার অন্তরালে ভোট কারচুপি হচ্ছে। খুলনা সিটি নির্বাচনে এই প্রক্রিয়া দেখা গেছে। একই প্রক্রিয়া গাজীপুরেও লক্ষ্য করছে বিএনপি। এমন ভোট কারচুপি হলে জাতীয় নির্বাচনেও এর প্রভাব পড়বে। মঈন খান বলেন, ইসি যদি তার ক্ষমতা প্রয়োগ করে তাহলে গাজীপুর সিটি নির্বাচন সুষ্ঠু হবে। কিন্তু সেটি তারা করছে না। প্রশাসনের হস্তক্ষেপে তারা ক্ষমতার অপব্যবহার করছে। মঈন খান বলেন, ইসি ভালো নির্দেশনা দিলেও তা প্রতিপালিত হচ্ছে না। প্রশাসন নির্বাচনের কাজে হস্তক্ষেপ করছে। পুলিশ গিয়ে ভোটকেন্দ্র দখল করলে ইসির নির্দেশ মানা হলো না। পুলিশের কাজ নির্বাচন নিয়ন্ত্রণ করা না। কিন্তু খুলনায় অনেক জায়গায় দেখা গেছে পুলিশ নির্বাচন নিয়ন্ত্রণ করেছে। বিএনপির প্রতিনিধি দলে আরও ছিলেন দলটির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান ও  চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা বরকত উল্লাহ বুলু।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর