সোমবার, ২৫ জুন, ২০১৮ ০০:০০ টা
ভোট কৌশলে দুই দল

উন্নয়নে জয়ের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে চায় আওয়ামী লীগ

রফিকুল ইসলাম রনি

উন্নয়নে জয়ের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে চায় আওয়ামী লীগ

উন্নয়ন করলে যে ভোট পাওয়া যায় তা গাজীপুর সিটি নির্বাচনে প্রমাণ করতে চায় আওয়ামী লীগ। ‘উন্নয়ন ও ঐক্য’ মডেল কাজে লাগিয়ে জয় পাওয়া খুলনা সিটির জয়ের অভিজ্ঞতা কাজে লাগানো হচ্ছে এখানে। ভোটারদের মন জয় করেই গাজীপুরে জয় চায় ক্ষমতাসীন দল। সে জন্য নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায় সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড তুলে ধরছেন নেতারা। গাজীপুরে নির্বাচন পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত নেতারা বলেছেন, নির্বাচন পেছানোর কারণে সরকারি দলের জন্য অনেকটা ভালো হয়েছে। জনসমর্থনের দিক থেকে এগিয়ে গেছেন তারা। দলীয় সূত্রমতে, গাজীপুর সিটি নির্বাচনে নানা কারণে নিরঙ্কুশ জয়ের সম্ভাবনা দেখছেন ক্ষমতাসীন দলের নীতি নির্ধারকরা। তারা বলছেন, গাজীপুর দীর্ঘদিন ধরেই আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। গত সিটি নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী বিজয়ী হলেও উন্নয়নে তেমন ভূমিকা রাখতে পারেনি দলটি। স্থানীয় মানুষ অনুধাবন করতে পেরেছে, উন্নয়নের জন্য সরকারদলীয় প্রার্থীকেই বিজয়ী করা উচিত। সে কারণে আওয়ামী লীগ প্রার্থীকে ভোট দিয়ে বিজয়ী করবে। এ ছাড়া দলের নেতারা মনে করছেন, গাজীপুর সিটিতে জয়-পরাজয়ের অন্যতম ফ্যাক্টর হবে টঙ্গী। এখানকার ভোটেই নির্ধারণ হবে কে হবেন গাজীপুরের নতুন নগর পিতা। টঙ্গীতে দুটি পরিবারের আধিপত্য দীর্ঘদিন ধরে। এরা হলেন কাজী পরিবার এবং সরকার পরিবার। কাজী মোজাম্মেল হক মুজিব বাহিনীর অন্যতম নেতা ছিলেন। ’৭৩ সালে আওয়ামী লীগের এমপি ছিলেন তিনি। এই পরিবার আওয়ামী লীগ প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলমের সঙ্গে। এ ছাড়া গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আজমতউল্লাহ খানের বাড়িও টঙ্গিতে। তিনি দীর্ঘদিন টঙ্গী পৌরসভার মেয়র ছিলেন। আজমতউল্লাহ খান মেয়র প্রার্থী জাহাঙ্গীরের প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট। এ ছাড়া জাহাঙ্গীরের বাড়ি গাজীপুর সদর এলাকায় হলেও তিনি দীর্ঘদিন টঙ্গীতে বসবাস করেন। সরকার পরিবারের এক সদস্যের বিরুদ্ধে গাজীপুরের জনপ্রিয় এমপি, শ্রমিক নেতা শহীদ আহসানউল্লাহ মাস্টার হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। আওয়ামী লীগ প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলমসহ কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতারা বিষয়টি নতুন করে জনগণের সামনে তুলে ধরছেন। বিএনপি প্রার্থী হাসান সরকারের বাড়ি টঙ্গীতে হলেও নানা কারণে আওয়ামী লীগ বাড়তি সুবিধায় রয়েছে বলে মনে করেন দলের নীতি-নির্ধারকরা। বিএনপি প্রার্থীর চেয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বয়সে তরুণ হওয়ায় নবীন-যুবক ভোটারদের মধ্যে আলাদা ইমেজ আছে বলেও দাবি করছেন তারা।

গাজীপুর সিটি নির্বাচনে সর্বস্তরের প্রচারণায় কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতারা সক্রিয় ছিলেন শুরু থেকেই। আগামীতে কী কী করতে চান সেগুলো জানানো হচ্ছে ভোটারদের। এ ছাড়া প্রথম দিকে দলের ভিতরে যে সমস্যা ছিল তা মেটানো হয়েছে। দলের হাইকমান্ড থেকে পরিষ্কারভাবে জেলা-মহানগরের শীর্ষ নেতাদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, অভ্যন্তরীণ কোন্দলে দলীয় প্রার্থীর পরাজয় হলে শাস্তি পেতে হবে। এ প্রসঙ্গে দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবীর নানক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘নির্বাচনী প্রচারণা শুরুতেই আমরা উন্নয়ন প্রচারে গুরুত্ব দিয়েছি। প্রথম দিকে দলের ভিতরে ছোটখাটো যেসব সমস্যা ছিল, সেগুলো নিরসন করেছি। গাজীপুরের আওয়ামী লীগ আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে ঐক্যবদ্ধ ও সুসংগঠিত।’ তিনি বলেন, ‘দলীয় প্রতীকে ভোট হওয়ার সুবিধা হচ্ছে, ব্যক্তির চেয়ে প্রতীককে গুরুত্ব দেয় আওয়ামী লীগ। আর গাজীপুর আওয়ামী লীগের ঘাঁটি। সে কারণে জয়ের বিকল্প ভাবছি না।’ 

খুলনা সিটির নবনির্বাচিত মেয়র তালুকদার আবদুল খালেক গাজীপুরে গিয়ে নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়েছেন জাহাঙ্গীরের পক্ষে। গাজীপুর নির্বাচন নিয়ে তাঁর পর্যবেক্ষণ ও পরামর্শ দিয়েছেন। ভোটের দিন ও তার আগে নির্বাচনী করণীয় নিয়ে কথা বলেছেন। কয়েক দিন আগে গাজীপুর সিটি নির্বাচনের ৪২৫টি কেন্দ্রে দায়িত্ব পালনের জন্য ৪২৫টি কমিটি করেছে যুবলীগ। ভোটের দিনও এ কমিটি এসব কেন্দ্রে দায়িত্ব পালন করবে। এ কমিটির তত্ত্বাবধান করছেন যুবলীগ চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী। এর বাইরে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগসহ দলের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের নিয়ে আলাদা কমিটি হচ্ছে ভোটের দিন দায়িত্ব পালনের জন্য।

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এনামুল হক শামীম বলেন, ‘গাজীপুরের মানুষ শহীদ আহসানউল্লাহ মাস্টারের রক্তের সঙ্গে বেইমানি করবে না। কোনো খুনির ভাইকে ভোট দিয়ে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত করবে না। গাজীপুরের মানুষ গতবার যে ভুল করেছিল, এবার তা করবে না। তারা উন্নয়নের সঙ্গে, নৌকার সঙ্গে থাকতে চায়। সাড়ে নয় বছরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে উন্নয়ন করেছে, সে উন্নয়নই আমাদের জয়ের হাতিয়ার হবে।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর