সোমবার, ২৫ জুন, ২০১৮ ০০:০০ টা
ভোট কৌশলে দুই দল

ভোটার-এজেন্ট উপস্থিতি রাখতে সর্বাত্মক চেষ্টা চালাবে বিএনপি

মাহমুদ আজহার

ভোটার-এজেন্ট উপস্থিতি রাখতে সর্বাত্মক চেষ্টা চালাবে বিএনপি

খুলনা থেকে শিক্ষা নিয়ে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে ভোটার-এজেন্টদের কেন্দ্রে উপস্থিতি রাখার চ্যালেঞ্জ নিয়েছে বিএনপি। দলটির আশঙ্কা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তায় আগের রাতেই সরকারি দলের প্রার্থীর পক্ষে ব্যালট বাক্স ভর্তি করা হতে পারে। তাই আজ রাত থেকেই ভোটকেন্দ্র পাহারা দেওয়ার দলীয় নির্দেশনা আছে। প্রতিকূল পরিবেশেও ভোটের দিন ৫৭ ওয়ার্ডে প্রায় ২ হাজার ৭৬৩ ভোট কেন্দ্রে দলীয় এজেন্ট রাখার কঠোর বার্তা দিয়েছেন বিএনপির নীতিনির্ধারকরা। ভোট কেন্দ্রের বাইরে বিপুল সংখ্যক নেতা-কর্মীর সবর উপস্থিতি রাখা হবে। কেন্দ্রে কোনো অনিয়ম হলেই প্রতিবাদ-প্রতিরোধের চেষ্টাও চালানো হবে। দলীয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। গাজীপুরে বিএনপির মেয়র প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকার অভিযোগ করেন, আমাদের এজেন্টদের আটকে রাখার চক্রান্ত করা হয়েছে। নির্বাচনের সময় আটকে রেখে তাঁদের কোনো কিছু করতে দেওয়া হবে না। তাঁদের নির্বাচন থেকে বাইরে রাখার চেষ্টা হচ্ছে। তিনি বলেন, নির্বাচনকে ঘিরে বিএনপির ৫০ জন নেতা-কর্মীকে মামলা দিয়ে ব্যস্ত রাখা হয়েছে। প্রচারের শেষ দিনে ওইসব মামলায় নেতা-কর্মীদের অনেকের হাজিরার দিন ধার্য করা হয়। তিনি বলেন, গাজীপুরে সুষ্ঠু ভোটের কোনো সম্ভাবনা নেই। তারপরও আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে বলছি, শেষ পর্যন্ত লড়ে যাব। জানা যায়, প্রতিকূল পরিবেশে গাজীপুরে সর্বাত্মক শক্তি নিয়ে মাঠে নামছে বিএনপি। এ নির্বাচনে জয়-পরাজয়ে পরবর্তী তিন সিটি ভোটে বিএনপি যাওয়া না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেবে। বিশেষ করে গাজীপুর সিটি ভোটে সরকার, স্থানীয় প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা পর্যবেক্ষণ করবে দলটি। তাদের ভূমিকা নেতিবাচক হলে আসন্ন তিন সিটি ভোট বর্জনও বিএনপি করতে পারে। তবে গাজীপুরবাসীকে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে বিএনপি। এ নিয়ে গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সুষ্ঠু ভোট হলে বিএনপি জোট প্রার্থী বিপুল ভোটে বিজয়ী হবে। আমি ভোটারদের কেন্দ্রে গিয়ে ধানের শীষে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।

জানা যায়, লন্ডন থেকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান নিজেই গাজীপুর সিটি ভোট মনিটর করছেন। ঢাকা থেকে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, কেন্দ্রীয়ভাবে গাজীপুর সিটি ভোট পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, সদস্য সচিব সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলনসহ ৫৭ ওয়ার্ডে দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় নেতারা ঢাকা থেকে ভোট পর্যবেক্ষণ করবেন। এ ছাড়া বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে দফায় দফায় সংবাদ সম্মেলন করে গাজীপুর পরিস্থিতি তুলে ধরবেন। বিএনপির অভিযোগ, বাড়ি বাড়ি গিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা বিএনপির মেয়র প্রার্থীর এজেন্ট ও নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্যদের পরিবারকে ভয়ভীতি ও হুমকি দিয়ে আসছে। বিএনপি নেতা-কর্মীরা ভোট কেন্দ্রে গেলে পরিবারের সদস্যদের জীবননাশের হুমকিও দেওয়া হচ্ছে। বিএনপির আটক হওয়া নেতাদের টাঙ্গাইল ও ঢাকায় দায়ের হওয়া মামলায় গ্রেফতার দেখানো হচ্ছে। এ অবস্থায় সুষ্ঠু ভোট হওয়ার কোনো সম্ভাবনাই নেই। গাজীপুর সিটি ভোট নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করে বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব ফজলুল হক মিলন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, যখন পুলিশের গাড়িতে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী প্রচারণা চালায় তখনই বোঝা হয়ে গেছে সরকার কী ধরনের ভোট করতে চায়। নির্বাচনী প্রচারণাবিধি লঙ্ঘন করে বহিরাগত হিসেবে যখন খুলনা সিটি মেয়র তালুকদার আবদুল খালেক, সাংগঠনিক সম্পাদক মহিবুল হাসান নওফেল, বিজিএমইএ সভাপতি আতিকুল ইসলাম, রায় রমেশ, ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদকসহ আওয়ামী লীগের একঝাঁক কেন্দ্রীয় নেতা গাজীপুরে অবস্থান করছেন, তাতেই বোঝা যায় ভোট কী হবে। তারপরও আমরা আন্দোলনের অংশ হিসেবে গাজীপুর সিটি ভোটের শেষ পর্যন্ত থাকব।’ গতকাল বেলা ১১টায় টঙ্গী বিএনপির প্রধান কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন শেষে গাজীপুরের জয়দেবপুরে বিএনপির প্রধান কার্যালয়ে যান হাসান উদ্দিন সরকার। সেখানে তিনি দলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন ও মতবিনিময় করেন। এ সময় নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে হয়রানির অভিযোগ তুললেও তিনি তাঁদের সাহস জোগান ও নির্বাচন শক্তভাবে মোকাবিলার কথা বলেন। ওই কার্যালয় থেকে বেলা দেড়টার দিকে পাশেই তাঁর দলের নেতা ও জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মাহাবুবুর রহমান গোলাপের বাসায় যান। সেখানেও নেতা-কর্মীদের সাহস জোগাতে নানা আশ্বাস দেন হাসান উদ্দিন সরকার। সেখানে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘মূলত প্রচারের শেষ দিনে আমি দলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে তাদের মনে সাহস দেওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছি। নির্বাচনী এজেন্ট নিয়োগ করা একটি বড় দায়িত্ব। অনেক এজেন্টকে ভয় দেখানো হচ্ছে। তাঁদের মনে সাহস জোগাতে হচ্ছে। তিনি অভিযোগ করেন, কিছুদিন আগে খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে যে ম্যাকানিজম ব্যবহার করে জিতেছে আওয়ামী লীগ, এখানেও তা করার চেষ্টা করা হচ্ছে।’

সর্বশেষ খবর