সোমবার, ২৫ জুন, ২০১৮ ০০:০০ টা

সবার চোখ মেসি-মুসার দিকে

সবার চোখ মেসি-মুসার দিকে

এই শহরে ব্রাজিলীয়দের উৎসবে মাতিয়েছিলেন নেইমাররা। সারা রাত ওরা আনন্দ মিছিল করেছিল। ‘ব্রাজিল, ওলে ওলে ওলে’ কোরাস গাইছিল। মাঝে মধ্যে আর্জেন্টিনাকে কটাক্ষ করছিল। সেই শহরে আজ আসছেন লিওনেল মেসিরা। ম্যাচ আগামীকাল। প্রতিপক্ষ নাইজেরিয়া। যারা এরই মধ্যে আইসল্যান্ডকে হারিয়ে নিজেদের যোগ্যতার প্রমাণ দিয়েছে বিশ্বকাপে। মেসিরা আসবেন বলে আগে থেকেই সাজতে শুরু করল সেন্ট পিটার্সবার্গ। লোকে লোকারণ্য হতে লাগল। ক্রোয়েশিয়ার কাছে ৩-০ গোলে পরাজয়ের পর আর্জেন্টাইন সমর্থকরা এখন আর খুব একটা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে না। তবে তারাও ঠাঁই নিয়েছে সেন্ট পিটার্সবার্গে। চলতে-ফিরতে আর্জেন্টাইন জার্সি পরা অনেকের সঙ্গেই ধাক্কাধাক্কি হয়। অনেকে ঘুরে বেড়ায় ছদ্মবেশে! ওরা আর ‘ভামোস আর্জেন্টিনা’ কোরাস গায় না। লুকিয়ে লুকিয়ে চলে। যেন নিজেকে আড়াল করতে পারলেই বাঁচে! আর্জেন্টাইন সমর্থকদের এই লুকিয়ে চলার অভ্যাসটা পুরোপুরিই নতুন। ক্রোয়েশিয়ার মতো দলের কাছে পরাজয়ের পর অস্বাভাবিক রকমের বদলে গেছে আর্জেন্টাইন সমর্থকরা। নেভা নদীর তীরে আলভারেসো উৎসব দেখতে আসা এক আর্জেন্টাইন সমর্থকের সঙ্গে দেখা। নাম তার মারিয়া। বুয়েন্স আয়ার্সেই বাড়ি। ইংলিশটা ভালোই জানেন। তার হাতে একটা পলিথিন। উঁকি দিলে দেখা যায়, ভিতরে আর্জেন্টিনার জার্সি। ‘ওতে কী?’ জিজ্ঞেস করতেই লজ্জা পেয়ে জানাল, আর্জেন্টিনার জার্সি। গায়ে জড়াওনি কেন? এবার কোনো কথা নেই। কেবল হতাশ একটা ভঙ্গি করল। আর্জেন্টিনার এমন সমর্থক প্রচুর পাওয়া যাবে সেন্ট পিটার্সবার্গের অলি-গলিতে। একে-ওকে জিজ্ঞেস করলেই স্বীকার করে, আর্জেন্টাইন। তাদের মধ্যে এখনো জ্বলছে আশার আলো। লিওনেল মেসির দিকে তাকিয়ে আছে ওরা। মারিয়া কথায় কথায় জানালেন, জানি না কী হবে। তবে লিওনেল মেসি যে দলে আছে সেই দলটা বিশ্বকাপ থেকে বাদ পড়তে পারে না। কেবল মারিয়া কেন, ফুটবল সমর্থকদের অনেকেই এই বিশ্বাসটা মনে মনে ধারণ করছেন। আর্জেন্টিনা মুখোমুখি হবে নাইজেরিয়ার। গ্রুপ পর্বে দুদলের সাক্ষাৎ অনেকটা রীতিতেই পরিণত হয়েছে বিশ্বকাপে। পঞ্চমবারের মতো বিশ্বকাপে মুখোমুখি হচ্ছে দুদল। আগের চারবারে জিতেছিল আর্জেন্টিনাই। লিওনেল মেসিরা সেই ধারাটা ধরে রাখবে বলেই বিশ্বাস করে সমর্থকরা।

নাইজেরিয়াই আর্জেন্টিনার স্বপ্ন বাঁচিয়ে রেখেছে বিশ্বকাপে। আইসল্যান্ড গত ম্যাচে নাইজেরিয়ার বিপক্ষে জিতলে আলবেসিলেস্তদের বিদায় অনেকটা নিশ্চিত হয়ে যেত। আশা বেঁচে আছে বলেই সেন্ট পিটার্সবার্গমুখী আর্জেন্টাইনদের সে াতটা এখন প্রবল। নাহলে হয়ত বাড়ির পথ ধরত অনেকেই? এমন প্রশ্ন শুনে মারিয়া বলল, ‘আমাদের দল বিদায় নিবে কি না জানি না। কিন্তু আমরা তো সমর্থনটা ছাড়তে পারি না।’ আর্জেন্টাইনরা পরাজয়ের দুঃখ পেয়েছে। কেউ কেউ হয়ত প্রবল আবেগে মেসিদের গালিও দিয়েছে। কিন্তু ওরা আলবেসিলেস্তদের পিছু ছাড়েনি। তাদেরকে রাশিয়ার প্রচণ্ড শীতে একাকি ছেড়ে চলে যায়নি। সেন্ট পিটার্সবার্গে আর্জেন্টাইনদের ভিড় তারই প্রমাণ দিচ্ছিল। নাইজেরিয়ার বিপক্ষে ম্যাচেও তারা ‘ভামোস আর্জেন্টিনা’ আর ‘লিও, লিও, লিও’ কোরাস গাইবে। ম্যারাডোনা মাঠে এলে তাকে দেখে উত্ফুল্ল হবে। আগের মতোই উল্লাস করে উৎসাহ  জোগাবে মেসিদের।

আর্জেন্টিনার জয়ের জন্য এক বুক আশা নিয়ে নিশ্চয়ই সেন্ট পিটার্সবার্গের দিকে তাকিয়ে আছে বাংলাদেশের অসংখ্য ফুটবল সমর্থক। বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্ব থেকে আর্জেন্টিনা বিদায় নিলে যে আনন্দটাই মাটি হয়ে যাবে। এমনকি ব্রাজিল সমর্থকরাও তো চায়, আর্জেন্টিনা থাকুক। নাহলে মধুর লড়াইটা যে জমবে না! কিন্তু নাইজেরিয়াও তো ওত পেতে বসে আছে। ওদের ডুয়েলটা হবে ড্রয়ের জন্য। জয়ের জন্য নয়। তাছাড়া আহমেদ মুসা যে দুরন্ত ফুটবল খেলেছেন আইসল্যান্ডের বিপক্ষে, সমর্থকরা তাকিয়ে আছে অনেক উঁচুতে। তাকে ঘিরেই স্বপ্ন দেখছে নাইজেরিয়ানরা। সেন্ট পিটার্সবার্গে আর্জেন্টাইন সমর্থকদের পাশাপাশি তাই সুপার ঈগলদেরও ভিড় চোখে পড়ে। ওরা নৌ ভ্রমণে বের হয় দল বেঁধে। প্রবল চিৎকারে ঘোষণা করে, নিজেদের উপস্থিতি। নাইজেরিয়ান সাংবাদিক পিটারের সঙ্গে দেখা হতেই আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে জানাল, নাইজেরিয়ার একটা ড্র হলেই হয়। আইসল্যান্ড এমনকি ক্রোয়েশিয়াকে হারালেও নাইজেরিয়ার সুযোগ থাকবে দ্বিতীয় রাউন্ডে যাওয়ার। আইসল্যান্ডকে যে অন্তত ৩-০ গোলে জিততে হবে ক্রোয়েশিয়ার সঙ্গে! অবশ্য পিটারের মতে, এটাও অসম্ভব নয়। আইসল্যান্ডের বিপক্ষে ক্রোটরা সম্ভবত তাদের সেরা কয়েকজন ফুটবলারকে মাঠে নামাবে না। আর্জেন্টিনার বিপক্ষে হলুদ কার্ড দেখেছেন মারিও মানজুকিচ, রেবিচ এবং ভ্রসালিয়েকো। আইসল্যান্ড জিতে গেলে কিন্তু বিপদ আছে আর্জেন্টিনারও!

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর